যুক্তরাজ্যে পালিত হলো দশম ‘ভিজিট মাই মস্ক’ : নানা ধর্মের  মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো ইস্ট লন্ডন মসজিদ

gbn

 

লন্ডন, ৪ অক্টোবর ২০২৫ ||

নানা ধর্ম ও বর্ণের হাজার হাজার মুসলিম-অমুসলিমের অংশগ্রহণে যুক্তরাজ্যে দশম বারের মতো উদযাপিত হলো ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসূচি । ৪ অক্টোবর শনিবার যুক্তরাজ্যের দুই শতাধিক মসজিদ অমুসলিম নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ।
ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ‘ভিজিট মাই মস্ক’ দিবস উদযাপন করে। সারাদিনই দলে-দলে আসতে থাকেন বিপুলসংখ্যক খৃস্টান, ইহুদী, মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ । তাঁরা মসজিদের ভেতর ঘুরে দেখেন । মসজিদ ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে ফিরে যান তারা।



অন্যান্য মসজিদের মতোই ইস্ট লন্ডন মসজিদ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা ছিলো । দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মারিয়াম সেন্টারের দ্বিতীয়তলায় নন-মুসলিম ভিজিটিং সেন্টারে বিপুল সংখ্যক নন-মুসলিম ও মুসলিমের উপস্থিতিতে দিবসের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয় ।

মারিয়াম সেন্টারের ম্যানেজার সুফিয়া আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার, মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. ওয়াজেদ আখতার ও ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিইও জুনায়েদ আহমদ।
জুনায়েদ আহমদ বলেন, ভিজিট মাই মস্ক বৃটেনের মসজিদগুলোর জন্য একটি অপুর্ব সুযোগ। প্রতি বছর এই দিবসটিতে আমরা আমাদের গল্প তুলে ধরতে পারি। সেই গল্প হচ্ছে, আমরা কারা, আমরা কী করছি।  ইস্ট লন্ডন মসজিদ ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত লন্ডনের সবচেয়ে প্রাচীণ মসজিদ । এখানে শুধু দৈনন্দিন উপাসনাই হয়না, এটি শিক্ষার একটি কেন্দ্রবিন্দু। কমিউনিটি সেবা থেকে শুরু করে তরুণনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবেশ সুরক্ষাসহ নানাবিধ কর্মসূচি এই মসজিদে পরিচালিত হয়ে থাকে। ভিজিট মাই মস্ক আমাদেরকে একে অপর সম্পর্কে জানা ও বুঝার সুযোগ করে দেয় । পারস্পারিক ভুল বুঝাবুঝি দুর করে । আজকের  বিশেষ দিবসে মসজিদ ঘুরে দেখে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ ইসলাম ও মুসলমাদের জীবনের গভীরতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।  

এমসিবির সেক্রেটারি জেনারেল ড. ওয়াজেদ অখতার বলেন, বিশ্বজুড়ে আমরা  ইমলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভক্তি ও ঘৃণা ছড়ানো বৃদ্ধি পেতে দেখছি । তা দুর করতে আমরা আমাদের গল্প তুলে ধরবো । ভিজিট মাই মস্ক এই জন্য নয় যে, এখানে এসে আমরা ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি সম্পর্কে শিক্ষা নেবো । আমরা এসেছি আমাদের গল্প শেয়ার করতে, আমরা কারা, আমরা কী করছি। এটাই ভিজিট মস্ক কর্মসূচির মুল লক্ষ্য । তিনি আরো বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদসহ বৃটেনের মসজিগুলো সারাবছর গুরুত্বপুর্ণ কাজ করছে । সেটা হতে পারে শরনার্থীদের সাহায্য করা, ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করা, আমাদের  রাস্তাগুলোকে নিরাপদ রাখা কিংবা স্থানীয় হসপিসের জন্য ফান্ডরেইজ করা। কিন্তু এরপরও মসজিদ ও ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝাবুঝি ও ঘৃণা ছড়ানোর প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। আজকের 'ভিজিট মাই মস্ক' থেকে আমরা যে বার্তাটি ছড়িয়ে দিতে চাই তা হলো, আমরা বিভক্ত নই, আমরা ঐক্যবদ্ধ । একতাই আমাদের শক্তি।

 

দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিলো নন-মুসলিমদেরকে মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখানো, জামাতে নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখানো, মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রদর্শনী, চিলড্রেন এক্টিভিটি ইত্যাদি।

 

ইস্ট লন্ডন মসজিদের নিউ-মুসলিম প্রজেক্ট-এর অফিসার শালিমা উদ্দিন মালিক দর্শনার্থীদের মসজিদের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখান । তিনি বলেন, আগতদের অনেকেই তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, তাঁরা মসজিদের আশেপাশেই বসবাস করেন । প্রতিদিনই মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়েই হাঁটাচলা করেন। কিন্তু কখনো মসজিদে প্রবেশ করেননি। আজকে ভিজিট মাই মস্ক দিবসে মসজিদ সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে তারা মসজিদ ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। ইসলাম ও মসজিদ সম্পর্কে মিডিয়ায় তারা এতোদিন যে নেতিবাচক প্রচারণা দেখে আসছিলেন তা তাদের কাছে অমুলক মনে হয়ে হয়েছে  এবং তাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক ধারণা জন্ম নিয়েছে।

 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন (এমসিবি) ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচি চালু করে । প্রথম বছরই নন-মুসলিমদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায় । ওই বছর যুক্তরাজ্যের ২০টি মসজিদ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে । পরের বছর ২০১৬ সালে দ্বিতীয় অপেন ডে’তে অংশগ্রহণ করে ৮০টি মসজিদ। ২০১৭ সালে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেড়-শতাধিক মসজিদ । এরপর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সারাদেশের প্রায় ১৮০টি মসজিদে ব্যাপকভাবে এই কর্মসূচি পালিত হয় । এরপর থেকে প্রতি বছর দেশব্যাপী অংশগ্রহণকারি মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে ।
এবার দুই শতাধিক মসজিদ ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে । সারাদিনই নন মুলিমদের জন্য মসজিদগুলো উন্মুক্ত ছিলো। বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ মসজিদগুলো ঘুরে দেখে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে একটি ভালো ধারনা নিয়ে ফিরে যান।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন