মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন করছাড় বিল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অর্থনৈতিক উদ্বেগ বাড়ছে। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের বাজেট কমিটি সম্প্রতি এই বিলটি অনুমোদন করেছে, যা রিপাবলিকান পার্টি আগামী সপ্তাহে পূর্ণসভায় পাস করাতে চায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
বর্তমানে কোনো বড় অর্থনৈতিক সংকট না থাকা সত্ত্বেও গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ঋণ করেছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার, যা দেশটির জিডিপির ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এ অবস্থায় গত ১৬ মে মার্কিন অর্থনীতির সর্বশেষ ‘ট্রিপল-এ’ ক্রেডিট রেটিং প্রত্যাহার করে নেয় সংস্থা মুডিস। ১৯ মে, ৩০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়—২০০৭ সালের পর দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটলো।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা ঋণের সীমা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় মেতেছেন। গত দুই দশকে দেশটির নিট সরকারি ঋণ জিডিপির ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে করছাড় বিল আরও অন্তত তিন থেকে চার ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তি ঘাটতির দিকে ঠেলে দেবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
বিলে মূলত ট্রাম্পের ২০১৭ সালের অস্থায়ী করছাড়কে স্থায়ী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করছাড়ও যোগ করা হয়েছে, যেগুলো ২০২৮ সালে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ হবে এমন দেখানো হলেও বাস্তবে সেগুলো স্থায়ী রূপ পাবে বলে ধারণা। করছাড়ের পাশাপাশি মেডিকেইড ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির জন্য দেওয়া ভর্তুকি কাটছাঁট করার কথাও আছে বিলে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ মূলত কাগজে কলমে খরচ কমানোর ভান হলেও বাস্তবে বাজেট ঘাটতি বাড়াবে। বর্তমানে সরকারি ঋণের সুদ পরিশোধে বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হচ্ছে, যা প্রবীণদের স্বাস্থ্য খরচের সমান। এই বিল পাস হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
রিপাবলিকানরা আশা করছে, এই ঘাটতি পূরণ হবে শুল্ক আদায় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি ইতোমধ্যে ডলার-ভিত্তিক সম্পদে আস্থা কমিয়েছে এবং নির্ধারিত রাজস্ব আয় অনিশ্চিত। আর নতুন করছাড়ে অর্থনীতির গতি বাড়বে এমন সম্ভাবনাও নেই। বরং তা সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২০১৭ সালে ট্রাম্পের কর সংস্কার অন্তত করপোরেট খাতে স্থায়ী ছাড় দিয়েছিল যা কিছুটা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করেছিল। কিন্তু এবারের করছাড়ের বেশিরভাগ অংশই চটকদার প্রতিশ্রুতি মাত্র, যেমন বকশিশ বা ওভারটাইমের আয়ের ওপর করমুক্তির প্রস্তাব, যা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ নয়।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এই বিল পাস না করাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘যখন রাজনীতিকরা বাস্তবতা স্বীকার করতে ব্যর্থ হন, তখন ঋণবাজার তা স্বীকার করিয়ে দেয়—এবং সেই স্বীকারোক্তি হয়ে ওঠে হঠাৎ ও যন্ত্রণাদায়ক।’ তাদের মতে, বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় দেশটিকে খরচ কমানো ও কর বাড়ানোর দিকেই যেতে হবে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন