নানা জ্বল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ইতালিয়ান কার্লো আনচেলত্তিকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে এই মৌসুম শেষেই সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলবেন আনচেলত্তি। রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে সর্বশেষ রিয়ালের ডাগআউটে দাঁড়াবেন তিনি। এরপর ২৬ মে দায়িত্ব নেবেন ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
ব্রাজিল ফুটবল দলে কোচ হিসেবে আনচেলত্তির প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ৬ জুন, ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বের ম্যাচ। তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, ভেঙে পড়া ব্রাজিল ফুটবলকে জাগিয়ে তোলা, বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি দলটির হাারনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা।
ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) দেয়া তথ্য অনুযায়ী কালো আনচেলত্তি হলেন, ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম বিদেশি কোচ। এর আগে দলটির যত কোচ ছিলেন, তারা সবাই ছিলেন নিজেরে দেশের ফুটবল কোচ। শুধু তাই নয়, আনচেলত্তিও ক্যারিয়ারে এই প্রথম কোনো জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এরআগে তিনি শুধু ক্লাব পর্যায়েই কোচের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
বিখ্যাত ফুটবল সাংবাদিক, ফ্যাব্রিজিও রোমানো সবার আগে ফেসবুক, এক্স হ্যান্ডলে আনচেলত্তির ব্রাজিল কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আনচেলত্তিই হলেন ব্রাজিল ফুটবলে প্রথম বিদেশি কোচ।
এরপর ইএসপিএন, গার্ডিয়ান, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস থেকে শুরু করে প্রতিটি মূল ধারার সংবাদ মাধ্যম লিখছে আনচেলত্তি হচ্ছেন ব্রাজিলের প্রথম বিদেশি কোচ।
কিন্তু ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের কোচের তালিকায় চোক রাখলে দেখা যাবে, আনচেলত্তিসহ মোট ৮৫জন কোচের মধ্যে বিদেশি নাম পাওয়া যাবে তিনটি। আনচেলত্তিছাড়াও ব্রাজিল ফুটবলে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও দুইজন বিদেশি।
উইকিপিডিয়ায় ব্রাজিল ফুটবল দলের কোচের যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সেখানে হিসাব ধরা হয়েছে ১৯১৪ সাল থেকে। সে থেকে অদ্যাবধি ৮৪জন কোচ দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন। ৮৫তম হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আনচেলত্তি।
আগের ৮৪জনের মধ্যে ১৯৪৪ সালে জোরেকা নামে পর্তুগিজ এক কোচকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে। ২ ম্যাচে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ১৯৬৫ সালে আর্জেন্টাইন কোচ ফিলপো নুনেজ ১টি ম্যাচে ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন।
এই দুই বিদেশি যখন দায়িত্ব পালন করেছেন, তাহলে কিভাবে আনচেলত্তিকে প্রথম বিদেশি কোচ বলা হচ্ছে? এর জবাব হলো, মূলতঃ জোরেকা এবং ফিলপো নুনেজ ব্রাজিল দলের স্থায়ী কোন কোচ ছিলেন না। তারা ‘ঠেকা’ কাজ চালাতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
১৯৪৪ সালে ব্রাজিলের মূল কোচ ছিলেন ফ্লাভিও কস্তা। জোরেকা ছিলেন সাও পাওলোর কোচ। প্রথম বছরেই তিনি ক্লাবকে ক্যাম্পেওনাতো পওলিস্তা জেতান। যে কারণে তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক এ কারণেই মূল কোচ ফ্লাবিও কস্তার সঙ্গে ব্রাজিলের ডাগআউটে দাঁড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় জোরেকাকে। দুই ম্যাচে একই সঙ্গে ব্রাজিল ডাগআউটে দাঁড়ান দুই কোচ- ফ্লাভিও কস্তা ও জোরেকা। দুটি ম্যাচেই জয় পায় ব্রাজিল। এরপর জোরেকা ফিরে যান তার ক্লাব সাও পাওলোয়।
১৯৬৫ সালে আর্জেন্টাইন ফিলপো নুনেজ ছিলেন পালমেইরাসের কোচ। ব্রাজিলের তখন নিয়মিত কোচ ছিলেন ভিসেন্তে ফিওলা। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬- এই দুই বছরে তিনি ৩২টি ম্যাচে ব্রাজিলের ডাগআউটে দাঁড়ান। তার আগেও দায়িত্ব পালন করেন ১৯৫৮ সালে। তার অধীনেই সর্বপ্রথম পেলে ব্রাজিল দলে সুযোগ পায় এবং তার অধীনেই ১৯৫৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রাজিল দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বিতীয় মেয়াদের মাঝে কোনো কারণে তিনি দুটি প্রীতি ম্যাচ কোচের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ওই সময় এক ম্যাচে পালমেইরাসের কোচ ফিলপো নুনেজ এবং অন্য মাচে করিন্থিয়ান্সের কোচ ওসভালদো ব্রান্দাও ব্রাজিলের ডাগআউট সামলান। মূলত, তারা ব্রাজিল ফুটবল দলের জন্য নিয়োগকৃত কেনো কোচ ছিলেন না।
পর্তুগিজ জোরেকা কিংবা আর্জেন্টাইন ফিলপো নুনেজ- নিয়োগকৃত কোনো কোচ না হওয়ার কারণেই ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন থেকে শুরু করে সবাই কার্লো আনচেলত্তিকেই বলছে ব্রাজিলের প্রথম বিদেশি কোচ।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন