মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ||
মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে বিএনপি,জামায়াতের নেতাকর্মীরা এখন ঘরবাড়ি ছাড়া। চলমান একাধিক মামলা ও গায়েবি মামলা হওয়ার ভয়ে এখন গ্রেফতার আতংকে তারা অনেকটাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া পরিচিত নেতাকর্মীরা হাট বাজারও বের হচ্ছেন না। জনসমাগম স্থলেও তাদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। গ্রেফতার এড়াতে তারা সবকিছুই এড়িয়ে চলছেন। নতুন এই মামলায় ও গায়েবি মামলা হওয়া নিয়ে যেমন গ্রেফতার আতংক ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নেতাকর্মীরা। তেমনি তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও এনিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। এমনটি জানাচ্ছেন জেলার বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীরা। জানা যায় দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন,সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে এ পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ৩টি থানায় (কুলাউড়া, বড়লেখা ও মৌলভীবাজার সদর) বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের নামে ৫টি মামলা হয়েছে। ওই ৫টি মামলায় এজহার নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২০৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। এপর্যন্ত ওই ৫টি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক মতিন বকশ ও জামাতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলীসহ বিএনপি,জামাতের পৌর ও ইউনিয়ন কমিটির নেতাকর্মীরা রয়েছেন। ৫টি মামলার মধ্যে মৌলভীবাজার সদর মঢেল থানায় হয়েছে ৩টি মামলা। ওই ৩টি মামলায় এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতসহ আসামী করা হয়েছে ৯২ জনকে। আর এপর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ জনকে। ৩টি মামলার মধ্যে ১টি মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে শিক্ষার্থী মো: আব্দুস ছালামকে। এই মামলায় ৩জন এজাহার নামীয়। আর অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ৪০/৫০ জনকে। এই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রধান আসামীসহ ৩জন। অপর দুটি মামলায় ১টিতে প্রধান আসামী করা হয়েছে জেলা জামাতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো: সাহেদ আলীকে। এই মামলায় এজহার নামীয় আসামী ৫জন ও অজ্ঞাত আরও ৮-৯ জন। এই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১জন। অন্য আরও একটি মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে বিএনপি কর্মী লোকমান আহমদকে। এই মামলায় এজহার নামীয় আসামী ৫জন ও অজ্ঞাত ১৫/২০জন। এই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ৫ জন। অপর দু’টি মামলা হয়েছে জেলার কুলাউড়া ও বড়লেখা থানায়। বড়লেখায় প্রধান আসামী করা হয়েছে আব্দুল কাদের পলাশকে। এই মামলায় এজহার নামীয় আসামী ২জন ও অজ্ঞাত ১০/১৫ জন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে। কুলাউয় প্রধান আসামী করা হয়েছে শামীম আহমদকে। এই মামলায় এজহার নামীয় ৫ জন। অজ্ঞাত ৮০/৯০ জনকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতার ৩ জন। এদিকে সোবার রাতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন বকশকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করা হয়। এই ৩ উপজেলার মামলা ছাড়াও নতুন গায়েবি মামলা হওয়ার ভয়ে জেলা বিএনপি,জামাত ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতংক নিয়ে পুলিশি ধরপাকড় এড়াতে দিনে থাকছেন সর্তক। আর রাতে বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন তারা। অভিযান অব্যাহত থাকায় আবার অনেকেই পুলিশের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র কয়েক দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন বললেন দেশে চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি মামলা হয়েছে শোনেছি। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কে বা কারা মামলা করেছে কাদের আসামী করা হয়েছে এসব বিষয়ে এখনো কিছু জানা হয়নি। তবে মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। জেলা জুড়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এমনটিই জানাচ্ছেন। তিনি দেশে চলমান ঘটনায় হত্যাকান্ডের বিচার ও নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা জানান। জেলা জামাতের সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মো: ইয়ামীর আলী বলেন মিথ্যা অজুহাতে একেবারে অন্যায় ভাবে পুলিশ জেলা জামাতের আমীরকে গ্রেফতার ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছে। বিনা ভোটের সরকার জনতাকে,গণতন্ত্রকে ভয় পায় বলেই বিরোধী মত দমনে মরিয়া। তারা একটি বাহীনকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। দেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সাথে জামাত-শিবির জড়িত না থাকলেও ওদের ন্যায্য দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। জামাত দেশ ও জনগণের স্বার্থে সকল গণতান্ত্রিক,ন্যায্য দাবি আদায়ের ও শৃঙ্খলিত আন্দোলনের সাথে সব সময়ই একমত পোষন করে। দেশে এতোগুলো মেধাবী শিক্ষার্থী ও সাধারণ নিরিহ জনগণকে হত্যা করে সরকার এখন বিরোধী দলের উপর দায় চাপিয়ে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে চাইছে। জেলা পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান বিপিএম,পিপিএম (বার) জানান মামলাতো আর এমনি এমনি হয়না। জেলার যে যে উপজেলায় ঘটনা ঘটেছে ওই থানায়ই মামলা হয়েছে। যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের ধরার চেষ্ঠা অব্যাহত আছে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছে আমরা তাদেরকে পেলেই গ্রেফতার করব।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন