বিশ্ব কিডনি দিবস : চিকিৎসার সামর্থ্য নেই ৯০ শতাংশ রোগীর

gbn

দেশে আনুমানিক তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল, যাঁরা ডায়ালিসিস নিয়ে বেঁচে আছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে পারছেন না ৯০ শতাংশ রোগী। মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করায় হচ্ছে নিদারুণ কষ্ট এবং অকালমৃত্যু।

 

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছর এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে—‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য—বৃদ্ধি পাচ্ছে ন্যায়সংগত সেবার সমান সুযোগ আর নিরাপদ ও সর্বোত্তম ওষুধের অনুশীলন’।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ভেজাল খাদ্যগ্রহণ, ধূমপান, সেই সঙ্গে ইচ্ছামতো অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা ও ওষুধের মাধ্যমে কিডনিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

এতে খরচও কম পড়ে।

 

কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ বলেন, ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়। কিডনি যদি অকেজো হয়ে যায় তাহলে কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালিসিস ছাড়া বাঁচার উপায় থাকে না। কিন্তু এই দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

 

মাসে একটি ডায়ালিসিসের খরচ জোগাতে কষ্ট হয়

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেনের (৪৫) তিন বছর আগে কিডনি রোগ ধরা পড়ে। ততক্ষণে তাঁর দুটি কিডনি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন প্রতি সপ্তাহে দুইবার তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাওয়া-আসা করতে হয়।

গত সোমবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কথা হয় মোজাম্মেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়া-আসা, টেস্ট, ওষুধ মিলায়া সপ্তাহে পাঁচ-সাত হাজার ট্যাকা খরচ।

 নিজের সব জমি বিক্রি করে দিসি। তাই এখন সপ্তাহে না, মাসে দুই দিন ডায়ালিসিস নিতাছি।’
আরেক রোগী সাভারের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৪৫) বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ দিতে গিয়ে দুই ছেলের পড়াশোনা বন্ধ। জমিজমা, ভিটেমাটি সব বিক্রি করে দিয়েছি।’

 

ডায়ালিসিস খরচও বেড়েছে

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিডিউলপ্রাপ্ত একজন রোগীর প্রতিবার ডায়ালিসিসের জন্য খরচ নেওয়া হচ্ছে ৫৬৩ টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল ৫৩৫ টাকা। তার আগের বছর ছিল ৫১০ টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে খরচ বেড়েছে ৫৩ টাকা। আর শিডিউল ছাড়া প্রতিবার ডায়ালিসিসের জন্য খরচ হচ্ছে তিন হাজার ৮০ টাকা, যা গতবার ছিল দুই হাজার ৯৩৫ টাকা। তার আগেরবার ছিল দুই হাজার ৭৮৫ টাকা।

অর্থাৎ দুই বছর আগে বিশেষায়িত এই হাসপাতালে প্রতি মাসে আটটি ডায়ালিসিসের জন্য একজন রোগীর খরচ হতো ২২ হাজার ২৮০ টাকা এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৬৪০ টাকা।

একই অবস্থা কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল এবং ল্যাবএইড হাসপাতালে। এসব হাসপাতালে প্রতিবার ডায়ালিসিসের খরচ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়েছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কিডনি প্রতিস্থাপন বাড়াতে হবে

ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. শওকত আলম জানান, বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হলেও দ্বিতীয় প্রতিস্থাপনটি হয় ১৯৮৮ সালে। এ পর্যন্ত তিন হাজার ৬৫টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ডা. শওকত বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর পাঁচ হাজার মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৬৫ জনের, যা প্রয়োজনের মাত্র ৭.৩ শতাংশ। তা ছাড়া আমাদের দেশে কিডনিদাতার যেমন প্রকট সংকট, তেমনি আইনি জটিলতাও রয়েছে।’

জিবিডেস্ক //

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন