রাজনীতিতে শিশুদেরকে নীতিহীনভাবে অপব্যবহারের কারনে কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। এরা একটু ক্ষমতার ছোঁয়ায় সমাজে বিষাক্ত ছোঁবল দিচ্ছে।
রাজু আহমেদ। কলাম লেখক। জিবি নিউজ ||
সৌভাগ্যক্রমে একটা জীবন পেয়েছি এবং সেটা মানবজীবন। সেটাকে যদি ঠিকঠাক গড়ে তোলা যায় তবে মানবজীবন মহৎ জীবনের অংশ হতে পারে। শৈশব থেকে পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় দিয়ে জীবনকে সাজাতে হয়। জীবন গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কৈশোর। শৈশব-কৈশোরে জীবন যে ভিত্তির ওপর গঠিত হবে যৌবন এবং বার্ধক্যে সেটার ফলভোগ করবে। পিলার যত শক্তিশালী হবে অগ্রভাগ তত টেকসই হবে এবং নিরাপদ থাকবে। কাজেই একজন মানুষের যাত্রার প্রস্তুতি দেখেই তার সফলতা-ব্যর্থতা আন্দাজ করা যায়। প্রস্তুতি যত গোছালো হবে যুদ্ধ তত সহজ হবে। সমগ্র মানবজীবনে যুদ্ধের ভিত তার গঠনকালেই রচিত হয়।
একটা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তি তার নতুন প্রজন্ম। তারা কীভাবে জীবন গঠন করছে, কোন পরিবেশে বেড়ে ওঠছে, কী পাঠ করছে-এসব দেখে জাতীয় ভবিষ্যত আন্দাজ করা যায়। ধারণা করা যায়, জাতির মকসুদে মনজিল পৌঁছানো সহজ হবে নাকি সম্ভব নয়-সে ব্যাপারও! আমাদের সসগ্র জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ বয়সের ফ্রেমে তারুণ্য অতিক্রম করছে। নিরাশার কথা, সে তারুণ্যের সিংহভাগ ভার্চুয়াল জগতের আসক্ত। ডিভাইস-ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং অতিরিক্ত ব্যবহার এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তারা ক্ষুধা এবং খাবার ভুলে সেসবে বুঁদ হয়ে আছে। যে কোন ওয়েবসাইটে সহজ প্রবেশাধিকারের কারণে উত্তেজনা ও উম্মাদনায় শারীরিক ক্ষতি করছে। অনেকটক সাইকোপ্যাথ!
খেলার মাঠে কিশোর-তরুণদের অংশগ্রহণ নাই। দুঃখজনক হলেও সত্য, পাড়া-মহল্লায় খেলার মাঠ নাই। যাও আছে তা বখাটেদের দখলে এবং অভিভাবকরা সেখানে সন্তানদের যেতে দিতে নারাজ। কাজেই একপ্রকার গৃহবন্দী জীবনযাপনে বাবা-মা সন্তানদের হাতে মোবাইল-ইন্টারনেট তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। শিশুরাও ভার্চুয়াল গেমিং-এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ের বেশিরভাগ নষ্ট করছে। এই-যে নেশা! ভার্চুয়ালের ঘোরে একবার নিপতিত হলে সেখান থেকে উত্তরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পাল্লাদিয়ে বেড়েছে মাদকের ভয়াল থাবা! ভালো ভালো পরিবারের সন্তানেরা ইয়াবা-গাঁজাসহ বিভিন্ন আধুনিক মাদকের কবলে আটকা পড়ছে। এই দুর্গতির কথা পরিবারগুলো না পারছে সমাজে শেয়ার করতে না পারছে সন্তানদের সামলাতে। ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমাজ সময় পার করছে!
রাজনীতিতে শিশুদেরকে নীতিহীনভাবে অপব্যবহারের কারনে কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। এরা একটু ক্ষমতার ছোঁয়ায় সমাজে বিষাক্ত ছোঁবল দিচ্ছে। বিপথগামী শিশু-কিশোরদের কাছে দিন দিন সমাজ জিম্মি হচ্ছে। এরা বয়স্কদের সম্মান দেখানোর বদলে ভীতি প্রদর্শন করছে। মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করছে। বয়সের ঘোর এবং ইন্টারনেটে অবাধ বিচারণের প্রভাবে সৃষ্ট শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যতেকে অনিশ্চিত করছে। মেয়েদেরকে বিরক্তকরা এবং কটূক্তি করার প্রবণতা বাড়ছে। এই যে অবক্ষয় এর পেছনে পরিবারগুলো যেমন দায়ী, রাষ্ট্রও দায় এড়াতে পারে না। প্রজন্মকে রক্ষা করতে না পারলে আগামীর ক্ষত সমাজ ও রাষ্ট্রকে ক্ষতবিক্ষত করবে। সুতরাং আশু উত্তরণ ও জাগরণ জরুরি।
শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস জাগ্রত করতেই হবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্র উদ্যোগ গ্রহন করুক এবং এটা সামাজিক আন্দোলনে পরিনত হোক। ডিভাইস-ইন্টারনেটের থেকে শিশুদেরকে বিমুখ করে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি ফেরাতে হবে। শিশুদের বোঝাতে হবে, ক্যালেন্ডারের এই সময়টাকে নার্সারি করলে আগামীটা সুখের হবে। শিশু-তরুণদের মধ্যে নৈতিকবোধ জাগানোর জন্য সমাজস্থদের ঘুষ-দুর্নীতি, অন্যায়-অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতির পথ পরিহার করতে হবে। পারিবারিক এবং ধর্মীয় শিক্ষায় জোর দিতে হবে। তরুণদের রক্ষা করতে না পারলে দেশের সার্বভৌমত্ব-স্বাধীনতা অরক্ষিত হবে। ইন্টারনেট ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে তরুণ-যুবকরা দেশপ্রেম এবং মূল্যবোধের খেই হারাচ্ছে! নাটক-সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ যখন প্রাধান্য পায়, ভোগ যখন মাথাচাড়া দেয় তখন তরুনদের মধ্যেও তা সংক্রমিত হয়।
জীবনের অপচয় না করে জীবনটাকে গড়া উচিত। যা কিছুতে নেশা ধরে তা থেকে ধীরে ধীরে ফিরে আসার বিকল্প নাই। সৌভাগ্যক্রমে একবার মানবজীবন পেলাম। কত প্রাণ পশু-জীবের দেহে প্রবেশ করেছে! সুতরাং মানবজীবন যেনো মানবহিতৈষী কাজে ব্যয় ও বিনিয়োগ হয়। অধ্যবসায় এবং আরাধনা ব্যতীত জীবন সুশোভিত, সুখে পল্লবিত এবং চিন্তায় সুসজ্জিত হবে না। মন্দ সঙ্গ ছেড়ে আলোর দিকে ফেরার যে প্রয়াস তা সবার মাঝে জাগ্রত হোক। জীবনের যে স্তরেই থাকি-রোজ যেনো অল্প অল্প পড়ি। মনীষীদের নির্দেশিত আলোর আলোকে জীবন গড়ি-তবেই মানবজীবনের পরিপূর্ণতা হাসিল হবে। পাঁচিল থাকবে শৃঙ্খলাবোধের। পরিকল্পনা ছাড়া সফলতার স্বপ্ন অবান্তর।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন