শরণার্থী ও অভিবাসনের প্রশ্নে ইউরোপের রাজনীতি বর্তমানে উত্তাল। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া নিয়ে রাজনীতি জগতে চরম বিভাজন সৃষ্টি করছে। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর ব্রিটেনের সংসদ সবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সরকারি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্সে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে গিয়ে সরকারবিরোধী পক্ষের সম্মিলিত বাধা তৈরি হয়েছে।
সংসদে এমন ধাক্কার ফলে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার ফ্রান্সের সংসদের নিম্নকক্ষে সরকারের আনা ইমিগ্রেশন বিল অভূতপূর্ব বাধার মুখে পড়ে। বাম থেকে দক্ষিণপন্থী—সব বিরোধী দল নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। সরকারি প্রস্তাব পেশ করা এবং সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের আগেই তারা এক প্রস্তাব পাস করে ম্যাখোঁর বিরুদ্ধে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার পক্ষ নিজস্ব শক্তিতে কোনো আইন অনুমোদন করাতে পারছে না।
মঙ্গলবার ম্যাখোঁ প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্ন ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। বিরোধী পক্ষের কড়া বার্তা সত্ত্বেও তিনি নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন। আইনের খসড়াটিকে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনে কিছু রদবদল করে আবার সংসদে পেশ করতে চান তিনি।
দেশের কাজে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলে ম্যাখোঁ বিরোধীদের সমালোচনা করেন। সমাজে বহিরাগতদের সম্পৃক্ত করা ও অভিবাসন সংক্রান্ত আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বর্নও সংসদে বিরোধীদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সমালোচনা করেন। বিশেষ করে চরম দক্ষিণপন্থীরা যেভাবে বামপন্থী জোটের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তা ফরাসি জনগণের জন্য কল্যাণকর নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দ্বিতীয় ও শেষ কার্যকালে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ নিজস্ব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে বারবার বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন।
অভিবাসনের প্রশ্নেও সরকারের উদ্যোগ তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করছে। তবে বাম ও দক্ষিণপন্থীদের কাছে বিরোধিতার কারণ সম্পূর্ণ বিপরীত। চরম দক্ষিণপন্থীরা আরো কড়া পদক্ষেপ দাবি করলেও বামপন্থীরা সরকারের প্রস্তাবকেই অত্যন্ত কড়া হিসেবে সমালোচনা করছে।
সংসদীয় কমিটিতে দুই পক্ষ যদি আপস করতে প্রস্তুত হয়, সে ক্ষেত্রে সরকারের খসড়ায় কিছু রদবদল করে শেষ রক্ষা হতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে সরকার সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ কাজে লাগিয়ে সংসদে ভোটাভুটি ছাড়াই আইন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গত বছর পেনশন সংস্কার সংক্রান্ত আইনও সেভাবে কার্যকর করা হয়েছিল।
ফ্রান্সে জনসংখ্যার মধ্যে অভিবাসীদের অনুপাত প্রায় ৭.৫ শতাংশের মতো। কর্তৃপক্ষের ধারণা, বর্তমানে ছয় থেকে সাত লাখ অনুপ্রবেশকারী সে দেশে রয়েছে। ব্রিটেনের মতো ফ্রান্সেও আবাসন সংকট, মূল্যস্ফীতির মতো সমস্যার পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়ে চলায় সমাজে অসন্তোষ বাড়ছে।
জিবিডেস্ক //
 
                            
                            
 
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                    
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন