মোদির তথ্যচিত্র নিয়ে মুখ খুললো যুক্তরাষ্ট্র

জিবিনিউজ24ডেস্ক//  

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর বিবিসির তৈরি করা একটি তথ্যচিত্র নিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছে ভারতের রাজনীতিতে। কয়েকদিন চুপ থাকার পর অবশেষে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত ও আঞ্চলিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সরাসরি মোদির তথ্যচিত্র সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং গণতন্ত্রের একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা নেড প্রাইসকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘যে তথ্যচিত্র নিয়ে আপনারা আমাকে প্রশ্ন করছেন, সেটি এখনও আমি দেখিনি। তবে আমরা সবাই জানি যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত— উভয় দেশেই গণতন্ত্র অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। এ কারণে ভারতের কোনো কার্যক্রম যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই উদ্বেগের অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি।’

গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে বিবিসি২ টেলিভিশন চ্যানেল। মূল বিবিসিরই একটি শাখা এই বিবিসি২ চ্যানেল।

তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।

এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ভারতের বিচারব্যবস্থা তাঁকে সাহায্য করেছে, তা ও দেখানো হয়েছে ছবিতে।

প্রায় এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রটির সবচেয়ে বড় ‘এক্সক্লুসিভ’ বা অতীতে প্রকাশ্যে না আসা বিষয় হলো, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি গোপন প্রতিবেদন, যেটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত (অর্থাৎ দাঙ্গার সময়ে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকা জ্যাক স্ট্র। তথ্যচিত্রে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।

জ্যাক স্ট্র বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের গভীর সম্পর্কের কারণে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। সে কারণে তিনি প্রতিবেদনটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

বলেন, ‘আমরা একটি দল গঠন করেছিলাম, যে দলটি গুজরাটে যাবে এবং দাঙ্গার তদন্ত স্বাধীনভাবে করবে। তারা একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল,’ বিবিসিকে বলেন স্ট্র।

তথ্যচিত্র থেকে এটা অবশ্য পরিষ্কার নয় যে এই গোপন প্রতিবেদনের কতটা বিবিসির হাতে এসেছে; তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে রীতিমতো ঝড় শুরু হয়েছে ভারতের রাজনীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে নেড প্রাইস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সংবাদধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং আমরা চাই, বিশ্বজুড়ে এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হোক। একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিকদের নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং ভারতের কাছ থেকেও আমরা তা ই প্রত্যাশা করি। আমাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি এটি।’

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন