লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক নির্বাহী সদস্য, একাত্তরের কলমযোদ্ধা, বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় পালের মৃত্যুতে ক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রেস ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ এক শোকবার্তায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন । নেতৃবৃন্দ তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্বজনদের ধৈর্য্য ধারণের শক্তি দানের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারী শনিবার রাত ৮টা ৩০মিনিটে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন অজয় পাল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। এর আগে গত বুধবার ব্রেন স্ট্রোক করলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্রসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সদ্য কৈশোর পেরোনো অজয় পাল উত্তাল উপকূল থেকে প্রথম রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন সিলেটের প্রাচীনতম সংবাদপত্র যুগভেরীতে। পাঁচ দশকের অধিক সাংবাদিকতা জীবন তাঁর । মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের আগরতলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জাগরণ-এ কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অজয় পাল আক্ষরিক অর্থেই একাত্তরের কলম সৈনিক।
বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে কাজ করেছেন জাতীয় দৈনিকের মধ্যে বাংলার বাণী, দৈনিক সংবাদ, দেশবাংলা ও দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা ছাড়াও সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সিলেট বাণীতে। আর সাপ্তাহিকের মধ্যে যুগভেরী, সিলেট সমাচার, দেশবার্তা ও সিলেটধ্বনি পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন বহুদিন । সত্তর ও আশির দশকে যে সকল মেধাবী সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনে সনাতনী গুরুগম্ভীর অবয়ব ভেঙে নতুন একটি ধারার সূচনা করেন তাঁদেরই একজন অজয় পাল। যাদের সংবাদের ভাষা ছিলো প্রাঞ্জল, বিষয় বৈচিত্র্যপূর্ণ। যাদের হাত ধরে বদলে যায় রিপোর্টিংয়ের গৎবাঁধা উপস্থাপন এবং ছকবাঁধা বর্ণনা তাদের মধ্যে অজয় পাল একজন। সাংবাদিক অজয় পাল মানেই ঘটনার গভীরে প্রবেশ, সংবাদের ভেতরে জীবনের অনুসন্ধান। আর এ কারণে একাধিকবার বাংলাবাজার পত্রিকা তাঁকে দেশসেরা সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচিত করে। সাংবাদিকতার সুবাদে ২০০১ সালে অজয় পাল কিউবার হাভানায় অনুষ্ঠিত ইন্টার–পার্লামেন্টারি কনভেনশনে বাংলাদেশ সংসদীয় দলের সঙ্গে সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।
শুরুর দিকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সূর্যের দেশ পত্রিকায় কিছুদিন সিলেট প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। যুক্ত ছিলেন লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা, জাগরণ, পত্রিকা, দেশবার্তা, পূর্বদেশ ও কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা নিউজ পত্রিকার সঙ্গে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের নিবন্ধিত গীতিকার । বাংলাদেশের বাড়ি সিলেট নগরীর দাড়িয়া পাড়া এলাকায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন