নবীগঞ্জে ১৩ বছরের এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু! ময়না তদন্ত শেষে জানাযা দাপন সম্পন্ন। এখনও কোন রহস্য উদঘাটন হয়নি!

gbn

বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:-  হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এক মাদ্রাসার ছাত্র গলায় ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু হয়েছে। জানাযায়, আল  হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসার ১৩ বছরের ছাত্র ফজরের আজান দিয়ে শিক্ষক ও তার সহপাঠীদের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে সকালের নাস্তা খেয়ে তার রোমে চলে যায়। এর পর মৃত্যু! এখন পর্যন্ত এ মৃত্যুর কোন রহস্য উদঘাটন হয়নি! এতে, সর্ব সাধারণের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নানান সমালোচনার ঝড় বইছে। 

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গোপলা বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের পাশে আল- আমিন হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসার হেফজখানায় রাব্বি মিয়া (১৩) নামে এক আবাসিক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৮ জুন) সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসার হেফজখানার একটি কক্ষে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মাদ্রাসার নামাজের কক্ষে সুইয়ে রাখেন। পরে তার পুরো শরীলটা টান্ডা হয়ে যায়।বুধবার বিকালে সরেজমিনে ঐ মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসার পরিচালক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানাযায়, গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ তারা রাব্বির কক্ষ থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা খুলতেই তার দেখেন সে ঝুলন্ত। এমন অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই তাকে উদ্ধার করে দ্রুত নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার খবরে নিহত ছাত্রের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও নবীগঞ্জ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে নিহত রাব্বি বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ভুগলি গ্রামের কাউসার মিয়ার পুত্র। সে আল- আমিন হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসার হেফজখানায় আবাসিক থেকে কোরআন শরীফ হিফজ করছিল।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও রাব্বি'র পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিহত পরিবারের দাবি করে বলেন, এই হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড।

নিহত রাব্বি'র মা কান্না জড়িত কন্ঠে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার পুয়া আত্মহত্যা করতে পারে না। হে খুব নিরাই ও ভদ্র ছিল। গতকাল রাতে আমি আমার পুয়ার লগে কথা কইতে চাইলেও কথা বলতে দেয়নি তারা।সকাল বেলা হঠাৎ ফোন করে বলে, তুমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তাদের এ কথা আমি কখনো  মানতে পারিনা পারবওনা। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

এ ব্যাপারে নিহতের বাবা কাউসার মিয়া বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই দায়ী। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চাই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাছে।

নিহত রাব্বির পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার পরিচালক মো: আশিকুর রহমান, সভাপতি মো: সিকান্দার আলী, প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা শামিম আহমেদ, সহকারী শিক্ষক হাফেজ মো: বাকির উল্লার ভূমিকা সন্দেহজনক। তাই এ ঘটনার সাথে অভিযুক্ত করেন। কারণ কোন ধরনের তথ্য না দিয়ে ঝুলন্ত  মরাদেহ গোপনে হাসপাতালে কিভাবে নিয়ে যাওয়া হয়?

এ বিষয়ে মিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, আসলে এটা একটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। যা মেনে নেয়ার মতো নয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কাউকে কিছু না জানিয়ে শিশুটির পাগড়ি খোলা ঝুলন্ত দেহ নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়। পরে আমরা সেখানে গেলে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে চলে যায়। এটাও একটা সন্দেহজনক বিষয়।

এ দিকে, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: কামরুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে যায় এবং মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত আমরা কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ মর্মান্তিক ঘটনাটি নিয়ে দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

পরিকল্পিত হত্যা না কি আত্মহত্যা এ নিয়ে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত রাব্বির সহপাঠীরা শোকাহত হয়ে আতংকে মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গেছে। 

এ ঘটনায় সর্ব সাধারণ সচেতন মহলের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি ন্যায় বিচার দাবী করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে হবিগঞ্জ হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে আসলে দুপুর ১টার দিকে। এ সময় লাশ দেখার জন্য শোকার্ত লোকজন ভীড় জমান। দুপুর টা ২ ৩০ মিনিটের সময় গুগলিপুর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদ মাঠে নামাজের জানাযা অনুষ্ঠাত হয়েছে। উক্ত নামাজের জানাযায় ঈমামতি করেন, পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা শাহদাত হোসেন। নামাজ ও মোনাজাত শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাপন করা হয়েছে। 

বিশ্বস্ত আরেকটি সূতে জানাযায়, এ ঘটনায় নিহতের আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন