কমলগঞ্জ প্রতিনিধি //
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে স্কুল শিক্ষিকাসহ ৩ নারী খুন হয়েছেন। খুনের এসব ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঠালকান্দি গ্রামে চাচার হাতে ২ ভাতিজি খুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে ২৬ মে মাধবপুর ইউনিয়নের ভাসানীগাঁও গ্রামের স্কুল শিক্ষিকাকে কূপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর এই দুই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও আসামীদের এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। স্বজন হারানোর বেদনায় পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে দক্ষিণ কাঠালকান্দি গ্রামের মাসুক আলী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাছুমা বেগম (২৫) ও শারমিন আক্তার (২৮) নামে দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা এবং বড় ভাই আবু মিয়ার স্ত্রী হাজিরা বেগম (৫৫) কে গুরুতর জখম করেন। নিহত দুই নারীও আবু মিয়ার কন্যা। ২ কন্যা সন্তানকে হারিয়ে ও গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন স্ত্রীকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন আবু মিয়া। এলাকায়ও চলছে শোকের মাতম। খুনের এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও ঘাতক মাসুক আলীকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
একইভাবে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ভাসানীগাঁও গ্রামে স্কুল শিক্ষিকা ও নারী উদ্যোক্তা রোজিনা বেগম (৩৪)কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঘটনার দিন সকালে ভেকু মেশিন দিয়ে কৃষিজমির মাটি কাটাচ্ছিলেন স্থানীয় আব্দুর রহিম ও তার ছেলে রেজাউল করিম সাগর। খবর পেয়ে নিহত রোজিনার বোনজামাই জালাল মিয়া প্রতিপক্ষকে আপত্তিকৃত জমিতে মাটি কাটায় বাঁধা দিলে দা দিয়ে কুপিয়ে জালাল আহমেদকে গুরুতর জখম করে। জালাল আহমদকে রক্ষায় হারুন মিয়া, তার স্ত্রী নুরুন নাহার লুবনা ও ছোট বোন শিক্ষিকা রোজিনা বেগম দৌঁড়ে সেখানে গেলে দা ও বল্লম দিয়ে সবাইকে এলোপাতাড়ি কূপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। পরে স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোজিনাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রোজিনার ১০ বছর বয়সী একমাত্র শিশু সন্তানটিও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামেও চলছে শোকের মাতম।
এ ঘটনায় রোজিনা বেগমের বড় ভাই শাহজাহান আহমদ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষনিক আব্দুর রহিমসহ ৩ জনকে আটক করে। তবে প্রধান আসামী রেজাউল করিম সাগরকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির কারনে খুন খারাপি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে।
নিহত রোজিনা বেগমের বড় ভাই শাহজাহান আহমদ জানান, ‘সাগর পূর্ব থেকেই অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হুমকি ধামকি দিলে থানায় জিডি দায়ের করি। তবে পুলিশি কার্যক্রম জোরদার না হওয়ায় সাগর দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্বিঘ্নে কূপিয়ে আমার বোনকে হত্যা করেছে।’
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির বলেন, ‘দুটি ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোজিনা বেগমের মামলায় ৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন এবং প্রধান আসামীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে ২ ভাতিজি খুনের ঘটনায় মাসুক আলীকেও গ্রেফতারের করছে পুলিশ।’

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন