রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত সাত মাসে যে কাজ হয়েছে ৭ বছরেও তা হয়নি

gbn

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে গত সাত মাসে যে কাজ হয়েছে তা গত সাত বছরে হয়নি। এ সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়। বুধবার (২১ মে) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং কালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থান, তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নানা প্রক্রিয়া ও অগ্রগতি এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত তথ্যপত্র তুলে ধরেন।

 

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে মিয়ানমার থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা হিসেবে অবস্থান করছে।

এ সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে তারপর থেকে তারা ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় পুনরায় তুলে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছেন। এর আগে সাত বছর এই ইস্যুটি প্রায় অপসৃত হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে বিশেষ করে গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ইস্যুটি আরও পেছনে পড়ে গিয়েছিল।

 

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই ইস্যুটি উত্থাপন করেছিলেন এবং জাতিসংঘকে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান করেছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এতে সাড়া দিয়েছে।

জাতিসংঘের গত অধিবেশনে এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মোট ১০৬টি দেশ এ সিদ্ধান্ত কো-স্পন্সর করে এবং সিদ্ধান্তটি সর্ব সম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

খলিলুর রহমান বলেন, একটি জাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি পরিপূর্ণ জাতিসংঘের সম্মেলন আয়োজন করাটা একটি বিরল উদাহরণ। সে কাজটি আমরা সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সচিবালয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

 

দ্বিতীয় যে বিষয়টি তারা যা বিবেচনা করেছেন সেটি হল এ সমস্যার সমাধান কি? এ সমস্যার সমাধান রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবর্তন করা। প্রত্যাবাসনই এ সমস্যার সমাধান।

এ সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন এবং তিনি এ কারণে আনন্দিত যে এ ব্যাপারে একটি আন্তর্জাতিক কনসেন্সসাস (ঐক্যমতে) পৌঁছেছে।

তিনি জানান, গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলে গেছেন, এ সমস্যার সমাধান কেবলমাত্র মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন।

 

তৃতীয় যে কাজটি তাদের সামনে ছিল সেটা হচ্ছে প্রত্যাবাসনের প্রথম যে পদক্ষেপ, কারা ফেরত যাবে, সে সম্পর্কে মায়ানমারের সরকারের থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি চুক্তি সই হয়। তারপর পরই আমরা ৮ লাখ রোহিঙ্গাদের নাম কয়েক দফায় মিয়ানমার সরকারের কাছে ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠান। গত ৮ বছরে এ ভেরিফিকেশনের ব্যাপারে কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে জান্তা প্রধানের স্পেশাল দূতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় এবং তারা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত করেন যে ৮ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আড়াই লাখের ভেরিফিকেশন এর কাজ শেষ করেছে। তন্মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন যোগ্য হিসেবে নির্ণয় করেছে। বাকি ৭০ হাজারের ছবি ও কিছু তথ্য নিয়ে সমস্যা ছিল। সেগুলো আমাদের সঙ্গে বসে সমাধান করবেন।

 

খলিলুর রহমান আরও জানান, এই সিদ্ধান্তটি এপ্রিল মাসে বিমসটেক মায়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যৌথভাবে ঘোষণা করেন। এর ফলে প্রত্যাবাসন যোগ্য রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকা পাওয়া যায়।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে গত সাত মাসে যে কাজ হয়েছে সে কাজ গত সাত বছরে হয়নি। এ সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমেই ভাবনা আসে রোহিঙ্গাদের কীভাবে পাঠানো হবে। কারণ সেখানে যে বাস্তবতাটা আমরা মুখোমুখি হয়েছি সেটা বিচার করতে হবে। মায়ানমার সরকার আর সরকারের দখলে প্রায় ৯০ ভাগ রাখাইন আর নেই। এটার অধিকার নিয়ে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মি এবং সেই সাথে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। সেই আলোচনা আমরা একই সমান্তরালে চালু করেছি। আলোচনা চলছে, আমাদের আরাকান আর্মি সুস্পষ্টভাবে বলেছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়াটা তাদের একটা প্রিন্সিপাল পজিশন।

 

আরাকান আর্মি বলেছে পরিস্থিতি অনুকূল হলে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেবে। আরাকানের যুদ্ধাবস্থা এখনো নিরসন হয়নি। এ বিষয়ে আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

একই সঙ্গে দেখা গেছে মায়ানমারের বিশেষ করে রাখাইন অঞ্চলে ব্যাপক খাদ্য ও ওষুধের অভাব। ইউএনডিপি রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে এক ধরনের ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই অবস্থাতে খাবার ও ওষুধ না পেয়ে লোকজন চলে আসতে পারে, বিশেষ করে রোহিঙ্গারা যারা সবচাইতে ভালনারেবল অবস্থায় আছে। তাদেরই আবার চলে আসার প্রবণতা বিষয় হতে পারে।

 

আমরা গত ৮ বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছি। আমরা এর ভার বহনের সীমার বাইরে চলে এসেছি। অতিরিক্ত শরণার্থী গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা সেটা করতে চাই না।

খাদ্য সংকটে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনও আমাদের সীমান্তে এসে খাদ্য এবং ওষুধের সহায়তা চেয়েছে। তারা যদি আশা শুরু করে তাহলে বিরাট এক শঙ্কা, নতুন ধরনের শরণার্থীর মুখে আমাদের পড়তে হবে। আমরা সেটা এভোয়েড করছি।

জাতিসংঘের যে কার্যক্রম মায়ানমারে চলছে সেটা রাখাইনে চলা আর সম্ভব নয়। যুদ্ধ ব্যবস্থার কারণে মানবিক যেকোনো প্রকার ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চ মাসে বাংলাদেশে এসে আমাদের বললেন আমরা রাখাইনে ত্রাণ সাহায্য দিতে পারি কি না, আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যকতা আছে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে যে এর সাহায্যে বা সহযোগিতা এটা প্রাপ্তি বা বিতরণের ব্যাপারে কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এটা কোন যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

আমাদের তরফ থেকে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে যে আরাকানে নতুন যে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যান্ড সিকিউরিটি

অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরি হচ্ছে আমরা তাতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরাকান আর্মিকে সরাসরি বলে দিয়েছি যে আরাকান প্রশাসনে আমরা এখন যে চিত্র দেখছি সেটা হচ্ছে এথনিক ক্লিনজিং হলে যা হতো তা। আমরা কোনো ধরনের এথনিক ক্লিনজিং সহ্য করব না।

তারা যদি এক্সক্লুসিভলি রাখাইনদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে চায় তাহলে সেটা হবে একটা বর্ণবাদ রাষ্ট্র সেটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা তাদেরকে সে কথাগুলো বলেছি আশা করছি তারা সদুত্তর দেবে। আমরা এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।

 

 

 

বাংলাদেশ মনে করে এ সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করা। এ কাজটি করার সকল অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। সব কূটনৈতিক ও অন্যান্য সমর্থ দিয়ে এ সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবো।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন