ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তানের অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এই সময়ে যেসব দেশ প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছে, তার মধ্যে তুরস্কের অবস্থান সবচেয়ে স্পষ্ট এবং তা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।
সংঘাতের সময় এবং পরবর্তী দিনগুলোতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান একাধিকবার পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ৭ মে, যেদিন ভারত পাকিস্তানে তথাকথিত সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায়, সেদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে ফোনে এরদোয়ান বলেন, ‘পাকিস্তান যে সংযম দেখিয়েছে, তুরস্ক তার প্রশংসা করে।’ তিনি আরও বলেন, তুরস্ক এই উত্তেজনা প্রশমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে।
এরদোয়ান গত ১৪ মে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে লেখেন, বিতর্ক নিরসনে সংলাপ ও সমঝোতার পথ বেছে নেওয়ার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবেদনশীল ও ধৈর্যশীল নীতির প্রশংসা করি। ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে থাকবো।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এরদোয়ানকে ‘আমার প্রিয় ভাই’ বলে অভিহিত করে তুরস্কের এই সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এই দ্বিপাক্ষিক সমর্থন কেবল রাজনৈতিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সামরিক সহযোগিতায়ও তুরস্ক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ভারতবিরোধী অভিযানে তুরস্কে তৈরি সামরিক ড্রোন ব্যবহৃত হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, গত ৯ ও ১০ মে পাকিস্তান ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন হামলা চালায়, যার বড় অংশ ছিল তুরস্কের আসিসগার্ড কোম্পানির তৈরি ‘সোঙ্গার’ ড্রোন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও তুরস্কের যৌথভাবে তৈরি 'ওয়াইআইএইচএ-৩' আত্মঘাতী ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে। সংঘাত আরও দীর্ঘ হলে তুরস্কের উন্নত ‘টিবি-২’ এবং ‘আকিনসি’ ড্রোন ব্যবহারের আশঙ্কাও ছিল বলে জানিয়েছেন বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উমের করিম।
তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্ক
পাকিস্তান বর্তমানে তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। মিলজেম করভেট চুক্তির আওতায় চারটি নৌযান তৈরি হচ্ছে — যার মধ্যে দুটি নির্মিত হচ্ছে পাকিস্তানে। এছাড়া পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও আগোস্তা ৯০বি সাবমেরিনের আধুনিকায়নেও তুরস্ক সহযোগিতা করছে।
আঙ্কারাভিত্তিক থিংক ট্যাংক এসইটিএ ফাউন্ডেশনের গবেষক গ্লোরিয়া ওজদেমির জানান, পাকিস্তানে তুরস্কের অস্ত্রের ব্যবহার কেবল সামরিক দিক দিয়েই নয়, বরং কূটনৈতিকভাবে তুরস্কের আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভারতে তুরস্কবিরোধী ক্ষোভ
এদিকে ভারতের মধ্যে তুরস্কের অবস্থানে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তুলেছে। তুরস্ক ও আজারবাইজান পাকিস্তানকে সমর্থন জানানোয় অনেক ভারতীয় পর্যটক দেশ দুটিতে তাদের ভ্রমণ বাতিল করেছেন বলেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত, পর্যটক সংখ্যা কম এবং প্রতিরক্ষা বাজারে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় তুরস্ক কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিতে প্রস্তুত। পাকিস্তানও তুরস্কের রাজনৈতিক স্বার্থে পাশে রয়েছে — যেমন সাইপ্রাস ও আর্মেনিয়া ইস্যুতে।
উমের করিম বলেন, তুরস্কের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে পাকিস্তান একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
গ্লোরিয়া ওজদেমির যোগ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতি জোরদার এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বড় পরিসরে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন