আগেও অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। গত এক-দুই বছরে লিটন দাসকে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে কয়েকবারই নেতৃত্ব দিতে হয়েছে জাতীয় দলকে। তবে সেটা ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে। সাময়িকভাবে।
কিন্তু এবার লিটন দাস পুরোদস্তুর এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অধিনায়কত্ব পেয়েছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত ( ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়) বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক মনোনীত হয়েছেন লিটন দাস।
নাজমুল হোসেন শান্ত নিজ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে। তার পরিবর্তে বিসিবি লিটন দাসকেই পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক করা হয়েছে। খালি চোখে লিটন দাস অনেকটাই নির্লিপ্ত ও অন্তর্মুখী স্বভাবের।
কথা কম বলেন। অনুভুতি ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন কম। সহযোগিদের সাথে মেশেন কম। কথা বলেন কম। এমন এক অন্তর্মুখী স্বভাবের একজন অধিনায়ক বাংলাদেশ দলকে কতটা চাঙ্গা রাখতে পারবেন, উজ্জীবিত করতে পারবেন। তার নেতৃত্বে দল কতটা উদ্দীপ্ত হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেনও ।
জাতীয় দলের প্রধান সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন আজ রোববার সে সব কৌতুহলি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরব আমিরাতগামী জাতীয় দলের অনুশীলনের আগে প্রচার মাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে লিটন দাসের ক্যাপ্টেন্সির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন সালাউদ্দীন।
তার চোখে অধিনায়কত্বের প্রধান গুণ হলো, কৌশলগত দিক থেকে দলকে এগিয়ে নেয়া। সালাউদ্দীন মনে করেন সেই কৌশলগত দিক থেকে লিটন খুব দক্ষ, ‘কৌশলগত বলেন, সব দিকেই সে (লিটন) খুবই ভালো।’
প্রসঙ্গতঃ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ছিলেন লিটন। ২০২৪ বিপিএলে ফাইনালও খেলেছিলো লিটনের ভিক্টোরিয়ান্স। ওই সময় তার কোচ ছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। যে কারণে, অধিনায়ক লিটনকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তার চেয়ে অধিনায়ক লিটন আর কারো বেশি বোঝার কথা নয়।
সালাউদ্দীন মনে করেন লিটন দাসকে সবার সাপোর্ট দেয়া উচিৎ। তার ভাষায়, ‘সে চেষ্টা করছে দলটাকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। একজন অধিনায়কই দলটা চালাবে। আমরা যারা পাশে আছি, তাকে সমর্থন দিতে হবে, সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। তাহলে সে ভালো করবে। নেতা কিন্তু গিয়েই ভালো হতে পারে না। আবার সবাই নেতা হতেও পারে না। অধিনায়কত্ব যখন কেউ করে, সে কিন্তু পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। তার ওপর অনেক চাপ থাকে। তাকে সমর্থন দেওয়াটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’
অধিনায়ক হিসেবে কোন জায়গায় এগিয়ে লিটন? এ প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দীন বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে লিটনের শক্তির জায়গা যদি বলেন, সে খুব ভালো ট্যাকটিশিয়ান। বোলারের শক্তি সম্পর্কে তার ভালো আইডিয়া আছে। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সে খুব ভালো বিশ্লেষণ করে। টি-টোয়েন্টিতে কিভাবে ফিল্ড সেট-আপ করতে হবে, খেলাটা এগিয়ে নিতে হবে, ব্যাটিংটাও এগিয়ে নিতে হবে, সেটা সম্পর্কে তার পরিষ্কার ধারণা আছে। উইকেট বলেন, বোলার সামলানো বলেন, দল সামলানো বলেন, সবকিছুই তার ভালো আছে।’
লিটনের দুর্বলতাগুলো কী কী? এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাউদ্দীন বলে ওঠেন, ‘তার দুর্বলতার কথা যদি বলেন, এখন যেহেতু কিছুদিন সে রান করেনি। এটা হয়তো আপাতত তার দুর্বলতা আছে। তবে আমি মনে করি সে এটা থেকে বেরিয়ে আসবে।’
স্বল্পভাষী লিটন। তার এই কম কথা বলা নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারনা আছে। এমনটা জানিয়ে জাতীয় দলের প্রধান সহকারি কোচ সালাউদ্দীন বলেন, ‘লিটনকে আমরা সবসময় একটু অন্যভাবে দেখি। কথা কম বলে দেখে অন্য রকম মনে করি। যারা কাছে থেকে মেশে, তাদের সেই ভুল ধারণা থাকে না। একসময় সাকিবকে নিয়ে এ ভুল ধারণাটা ছিল। বাইরে থেকে মনে হতে পারে যে, তারা হয়তো অনেক কিছুই ঠিক মতো করে না। তবে একজন সতীর্থ ও অধিনায়ক হিসেবে যা কিছু করার, তার চেয়ে বেশিই সে করে।’
সালাউদ্দীন মনে করেন, ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন্সি করাটা সহজ কাজ নয়। বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেয়াও খুব কঠিন। তার কারণ ব্যাখ্যা করে মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে পারফর্ম করি না। এটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের যদি অনেক পারফর্মার থাকত তাহলে কিন্তু অধিনায়কত্ব করাটা সহজ হয়ে যেত। আমাদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা নেই। সেটা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। এটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে আমরা জাতি হিসেবে অনেক আবেগপ্রবণ। এটা ব্যক্তিগতভাবে অনেক কষ্ট হয় মাঝেমধ্যে। তবে এই পরিপক্বতা চলে আসবে দ্রুতই। তবে অধিনায়ক হিসেবে এই চাপটা নিতে হবে। পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরের দিকে উঠলে তার জন্য সহজ হবে।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন