সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হিফযুল উলুম সিনিয়র মাদ্রসায় জনবল নিয়োগে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য সহ স্বজনপ্রীতির নিয়োগের অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে নিয়োগ পরীক্ষর্থীরা।
অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা ও উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা সহ অনলাইন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে।
সংবাদ প্রকাশের জের ও লিখিত অভিযোগের পরপরেই দৌড়ঝাপ শুরু করেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও একাত্তরের মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক যুুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বীর বিক্রম শহীদ সিরাজ হত্যাকান্ডের ঘটনায় অন্যতম আসামি কথিত আওয়ামীলীগের ওয়ান বডির নেতা আমিনুল ইসলাম ও তার অনুগত সিন্ডকেট। তারা নিজেদের আধিপত্য ও ক্ষমতা দেখাতে নানান কৌশল অবলম্বন করে অভিযোগ তুলে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে। আর বিভিন্ন জনের কাছে নিজেদের নিয়োগে অনিয়মের বিষয় টি ধামাচাপা দিচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা সচেতন মহল জানান,মাদ্রাসার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে তা মাদ্রাসার সভাপতি আমিনুল ইসলাম স্ত্রী,চাচাত দু ভাইসহ অর্থের বিনিময়ে জামায়াত শিবিরের লোক নিয়োগ দিয়েছেন। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুদৃষ্ট কামনা সহ গুরুত্ব সহকারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এর তদন্ত করলে তার প্রমান পাবেন। না হলে ক্ষমতা ধর আমিনুল ইসলাম অভিযোগ কারীদের উল্টো ফাঁসিয়ে দিবে।
এ বিষয়ে উপজেলা মানবাধিকার কমিশন সম্পাদক ও লিখিত অভিযোগকারি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া জানান, মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্ত্রী ও ভাইকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি অবশ্যই স্বজনপ্রীতি। আমি এ বিষয়ে অভিযোগ করায় আমিনুল ও তার দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট আমার পিছু ছাড়ছে না। অভিযোগ করায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে নাম স্বর্বস্ব অনলাইনে মিথ্যে তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে।
আরেক অভিযোগকারি ও মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষার্থী সাইদুর রহমান অপু জানায়, অভিযোগের পরপরই আমিনুল ও তার সিন্ডিকেট আমাকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। অনেক অনুরোধের পর বাধ্য হয়েই অভিযোগ থেকে সড়ে দাড়াতে হয়েছে। আর তারা যা লিখেছে তাতে স্বাক্ষর করেছি বাধ্য হয়ে( এ বক্তব্যটি মুঠোফোনে রেকর্ড রয়েছে)।
জানাযায়,যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামীর বিরুদ্ধে এবার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ” তাহিরপুরে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যে জামায়াত বিএনপির লোক নিয়োগ” এমন শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের পরপরেই ৩০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য সহ নিজের স্ত্রী ও আপন চাচাতো ভাইয়ের চাকরি ঠিকিয়ে রাখতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন কথিত উপজেলা আওয়ামীলীগের ওয়ান বডির নেতা আমিনুল ইসলাম ।
আমিনুল ও তার সহযোগী লোকজন এ ঘটনায় ম্যানেজ কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন অভিযোগকারিদের হাতে পায়ে ধরা ! এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিয়োগ পরীক্ষার্থী জানায়, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী ও চাচাতো ভাইকে নিয়োগ দেয়ার পরেও আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছি না। কারন তার বিরুদ্ধে কথা বললে যে কোন বিষয়ে আমাদের বিপদে ফেলে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না যারা অভিযোগ করেছে তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছে।
উল্লেখ্য,গত ২৭ অক্টোবর ২০২০ইং তারিখে তাহিরপুর হিফযুল উলুম সিনিয়র মাদ্রসার ৬টি পদে লোকবল নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়েছে সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসায়।
নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের পর স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করে লিখিত অভিযোগ করেন একাধিক নিয়োগ প্রত্যাশী। বুধবার(০৪,১১,২০২০)নিয়োগ বাতিলের দাবীতে মহাপরিচালক
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড,ঢাকা,দ‚র্নীতি দমন কমিশন,ঢাকা,সুনামগঞ্জ জেলা
প্রশাসক,জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা,তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানাযায়, বিভিন্ন পদে অনেক প্রার্থীকে ইন্টারভিউ কার্ড না দিয়ে প্রক্সিলোক দ্বারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন দেখাইয়া মাদ্রাসার সভাপতি আমিনুল ইসলামের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার হিসাব রক্ষক পদে,সদস্য তাজিমুল ইসলাম(দুলাল) দল জামায়াত)এর আপন ভাই উপাধ্যক্ষ পদে শরিফুল ইসলাম, ভগ্নিপতি অধ্যক্ষ পদে মহিবুর রহমান(দল জামায়াত),অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে মুনতাছির বিল্লাহ(শিবির),আয়া পদে শাপলা আক্তার ( বিএনপি) ও নৈশ প্রহরী পদে আবু আলী(সানী)কে যোগসাজোস ও রক্ত সম্পর্কিয় আত্নীয়র টানে ও নিজের স্ত্রীকে নিয়োগ নির্বাচনে নির্বাচিত বলিয়া ঘোষনা করেন।
বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টানে নিয়োগ নির্বাচনী বিধান মতে পরীক্ষার্থীর আত্নীয় থাকা সত্তে¡ও নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সদস্য তালিমুল ইসলাম(দুলাল)সহ নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য মনোনীত হয়ে নিজ আত্নীয়দেরকে নির্বাচিত করার জন্যই নিয়মবর্হিভূত ভাবে নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহন করা হয় যা সম্পূর্ন অন্যায় ও সরকারী বিধি লঙ্গন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সরকারী বিধি ভঙ্গ,ঘুষ ও দুর্ণীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
তাহিরপুর হিফজু উলুম আলীয়া মাদ্রাসার সুপার(ভারপ্রাপ্ত)মাওলানা আবদুল হান্নান বলেন,নিয়োগে অনিয়ম হয় নি,নিজ প্রতিষ্ঠান কেন ইন্টারভিউ হল না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ডিজির প্রতিনিধি সিলেটের বিধায় সিলেটে নেওয়া হয়েছে। ডিজির প্রতিনিধি ত উপজেলা বা জেলা থেকে নেওয়া যায় এই প্রশ্নের জবাবে কোন সু উত্তর দিতে পারেন নি।
নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতর অভিযোগ অস্বীকার করে সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান,নিয়োগে কোন অনিয়ম করা হয় নি। নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আপনার স্ত্রী ও চাচাত ভাই থাকা সত্তেও আপনি কি ভাবে নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন এমন প্রশ্নে কোন সু উত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বাচ্ছু মিয়া সাথে কথা হলে তিনি জানান,আমি নিয়োগের বিষয়ে কোন কিছু ই জানি না। বৃহস্পতিবার(০৪,১১,২০২০)জানার পর আমি সভাপতি আমিনুল ইসলামকে জিজ্ঞেসা করলাম করোনার মধ্যে কখন কি ভাবে নিয়োগ দিলেন আপনি ত বলেছিলেন এখন নিয়োগ দিবেন না তাহলে কি ভাবে কি হল। আমি একজন সদস্য আমি জানি না এটা কেমন কথা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান নিয়োগ বোর্ড নিয়োগ দিয়েছে। সদস্য বাচ্ছু আরোও জানান,সভাপতি নিজে নিজেই সব কিছু করে আমাদের কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা বা জানান। এই নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে তা যাচাই করলে প্রমাণিত হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান,নিজ উপজেলা ও জেলা সদরে নেওয়ার কথা। কেন বিভাগের একটি মাদ্রাসায় নেওয়া হল সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মসন সিংহ(01730-331109)অনিয়ম ও দূনীতির লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি শিকার করে বলেন,এই বিষয়ে একটি তদর্ন্ত কমিটি ঘঠন করে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করব। কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
সুনামগঞ্জ ১-আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন(01715 020833)
বলেন,মাদ্রাসায় নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন