আইলার ১৫ বছরেও পূর্নবাসিত হয়নি সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত উপকুলীয় জনপদের হাজারও পরিবার, খাবার পানির তীব্র হাহাকার,সংস্কার হয়নি বেঁড়িবাধ

শাহীন গোলদার,সাতক্ষীরা,

আজ ভয়াল ২৫ মে। সর্ব গ্রাসী আইলার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের উপকুলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আইলা কবলিত হাজার হাজার পরিবার এখনও পূর্নবাসিত হয়নি। আশ্রয়হীন জনপদে এখনও চলছে অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান ও খাবার পানির জন্য তীব্র হা-হা-কা-র।

সর্বগ্রাসী আইলা আজও উপকুলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার, হাজার মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সংস্কার করা হয়নি উপকুলীয় এলাকা ঝকিপূর্ণ বেঁড়িবাধ। তার উপর আবারও ঘর্নিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে উপকুলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে ও ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা “আইলা” আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদে। মুহুর্তের মধ্যে সাতক্ষীরা  জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকুলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি । ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার । লক্ষ লক্ষ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকুল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সর্বনাশা “আইলা”র আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকার বাসিন্দা শরবানু, মারুফা, আকলিমাসহ অনেকই জানান, প্রলংয়করী আইলা আঘাত আনার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকুলীয় অঞ্চল শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার এতটুকু থামেনি। দু‘মুঠো ভাতের জন্য জীবনের সাথে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদের।

তারা আরও বলেন, আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকুলীয় বেড়িবাধ এখনও ঠিকমত সংস্কার হয়নি।

তারা বলেন, পানির সন্ধানে নারীদের কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে। অনেকে আবার দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।

আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব রহমান,আব্দুস সাত্তার মোড়ল ও আমিনুর ইসলামসহ একাধিকরা জানান, তাদের খাবারের পানিসহ নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষের।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসিম বরন চক্রবর্তী বলেন, ২০ মে ঘর্নিঝড় আম্পানের আঘাতে আবারও লন্ড্ ভন্ড  হয়ে গেছে উপকুলীয় জনপদ। তার উপর ঘূর্ণিঝড় “যশ” এর আগমনী বার্তায় উপকুলীয় এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভাঙন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ ১৫ বছর আগেও সবুজ বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল সাতক্ষীরা শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকুলীয় অঞ্চল।

তিনি আরও বলেন, শাক সবজি ধান পাটসহ অন্যান্য ফসলে ভরে উঠত পুরো এলাকা। তবে সেদিন আর নেই। লবনাক্ততায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে মাটি। চারিদিকে গাছপালাহীন ঘের আর ঘের। সবুজের বালাই নেই। নেই পরিবেশগত ভারসাম্য।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দীন জানান, আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে উপকূলীয় এলাকায় ইতি মধ্যে জায়কার অর্থায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের কাজসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ঘুর্নিঝড় রেমাল পরিস্থিতি মোকাবেলা জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বিভাগের অধিনে এর মধ্যে কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে অধিক ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের পরিমাণ প্রায় ৮ কিলোমিটার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, সরকারী উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এছাড়া সাতক্ষীরাকে অতিদূর্যোগপ্রবণ জেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ারও সরকারে কাছে দাবী জানিয়েছেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, এছাড়া উপকূলীয় এলাকার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ চিহ্নিত করে বালি ও জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কার করার পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে ঝুঁকিপুর্ণ এলাকার আশ্রায়কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ##

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন