গত ২ মার্চ, ২০২৪ পূর্ব-লন্ডনের গ্রন্থাগার - আইডিয়া স্টোর হোয়াটচ্যাপেল এ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে-র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো উমেন্স হিস্ট্রি মান্থ । এ আয়োজনে মূলতঃ আলোকপাত করা হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীর সহধর্মিনী ও খ্যাতিমান শিক্ষক শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী রচিত ‘একাত্তরের শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরী এর ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থ ‘ডক্টর আলিম: এ মারটার অব সেভেন্টি ওয়ান’-এর উপর। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে-র উদ্যোগে ও লাফবারাহ ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ফারাহ্ নাজ ও মানসী কায়েস।
‘ডক্টর আলিম এ মারটার অব সেভেন্টি ওয়ান’ গ্রন্থকে কেন্দ্র করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এর অংশ-বিশেষের পাঠ ও বক্তাদের আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো উঠে আসে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নারীর ইতিহাস শুধু উদযাপনের জন্য নয়, নারীর ইতিহাস হলো মর্যাদার সাথে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে চাইলে নারীদের কাজের সম্মান দেয়া আবশ্যক। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সবক্ষেত্রে নারীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকার পরেও এখনো তারা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, নির্যাতনের এবং যুদ্ধের শিকার হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে আলোর সামনে আনতে চেয়েছে এমন একজন নারীকে এবং তাঁর কাজকে, যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন নানান দিক থেকে। তাঁর লেখা ‘একাত্তরের শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরী প্রথম প্রকশিত হয় বাংলা ভাষায়, ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে। গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদের জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে উদ্যোগ গ্রহণ করার পর বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়ে এই কর্মযজ্ঞের সমাপ্তি ঘটেছে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। অনুবাদের কাজে যুক্ত হন ফারাহ্ নাজ ও মানসী কায়েস। পূনর্মূল্যায়ন, সম্পাদনা এবং প্রকাশনার কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যের লাফবারাহ ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন । পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে-র গ্রন্থটির উপর নিয়মিত পাঠচক্র ও পর্যালোচনা অনুবাদের কাজকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখে। প্রায় সব বক্তারাই উল্লেখ করেন যে এ দিনের আলোচ্য গ্রন্থ এবং এর অনুবাদ পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে বিশেষ ভূমিকাই শুধু রাখবে না, পাশাপাশি এ ইতিহাসে নারীর অবদানের কথাও জানাতে সক্ষম হবে।
আলোচনায় অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন ‘ডক্টর আলিম: এ মারটার অব সেভেন্টি ওয়ান’-এর মূল লেখক শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী (বাংলাদেশ থেকে), তাঁর এবং ডাঃ আলীম চৌধুরীর মেয়ে ফারজানা চৌধুরী (যুক্তরাষ্ট্র) ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে-র সম্পাদক খাদিজা রহমান (বাংলাদেশ)। লন্ডন থেকে সরাসরি উপস্থিত হয়ে বক্তব্য ও পাঠে অংশগ্রহণ করেন তৎকালীন লাফবারাহ ইউনিভার্সিটির পক্ষে এবং বর্তমানে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি -তে কর্মরত ড. ক্লেলিয়া ক্লিনি যিনি অনুবাদ-সম্পাদনার কাজে সহযোগিতা করেছেন। তিনি -লাফবারাহ ইউনিভার্সিটির র প্রফেসর এমিলি কেইটলির তত্ত্বাবধানে ও বিএসকে (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র), ইউকে-র সহযোগিতায় সম্পাদনা কাজে নিয়োজিত থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বক্তব্যে আরো যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা হলেন স্বাধীনতা ট্রাস্ট, ইউকে থেকে আগত অতিথি আনসার আহমেদ উল্লাহ, বিএসকে, ইউকের কাওসার জান্নাত শাম্মী ও আইডিয়া স্টোর হোয়াটচ্যাপেল এর পক্ষে মাফিজুর রব। ক্লেলিয়া ছাড়াও পাঠে অংশ নেন ফারাহ্ নাজ, শাহনীলা রহমান ও আরফুমান চৌধুরী। শান্তা চৌধুরীর কণ্ঠে পরিবেশিত হয় গান ‘‘সবকটা জানালা খুলে দাও না…। অতিথি আপ্যায়নে ছিলেন অপু ইসলাম।
অনুষ্ঠান পরিচালনা ও কারিগরী সহযোগিতার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন দীপ্তি অনুপম ও আদনীন তারান্নুম সারথী। এছাড়াও বিএসকে, ইউকে-র অন্যান্য সদস্যরা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন। মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত অতিথিবৃন্দের অংশগ্রহণ ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত। শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী ও ডাঃ আলীম চৌধুরীর জামাতা মোঃ আফতাবুল ইসলাম বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ই-বুক প্ল্যাটফর্ম, চলিষ্ণু, ‘ডক্টর আলিম: এ মারটার অব সেভেন্টি ওয়ান’-এর ই-বুক প্রকাশ করেছে এবং অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এর উপর একটি ভিডিও-ক্লিপ প্রদর্শিত হয়।
সবশেষে, আয়োজন-সহযোগী আইডিয়া স্টোর হোয়াটচ্যাপেল এর কর্তৃপক্ষসহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে; গ্রন্থটি আরো অনেক ভাষায় অনূদিত হবে, বিশ্বজুড়ে অনেক পাঠক বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, নারীর ত্যাগ ও মহিমার কথা জানবে এবং শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে─ এ আশাবাদ ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আরফুমান চৌধুরী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন