মিরপুর টেস্ট ব্যাটিংয়ের অন্ধকার ছাপিয়ে আলোর রেখা

সাধারণত টেস্ট ম্যাচের শেষ বিকেলে যা করা লাগে, সেটি এবার করতে হলো দিনের শুরুতেই। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে আকাশ মুখ গোমড়া করে থাকায় সকাল সকালই ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে খেলা শুরু করতে হলো। তবে কৃত্রিম সেই আলোর নিচেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সত্যিকারের অন্ধকার। প্রথম ঘণ্টাতেই নেই ২ উইকেট।

 

মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যাওয়ার আগেও যায় আরো দুটো। আশার আলো তবু দেখা যেতে থাকে। কারণ অভিজ্ঞতম ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে নবীন শাহাদাত হোসেনের জুটি জমে যাওয়ার ইঙ্গিতও একই সময়ে মিলেছিল। বিরতি থেকে ফেরার পর চাওয়া-পাওয়ার মেলবন্ধনও ঘটতে থাকে।

জুটি জমে যেতে থাকে। কিন্তু হায়!

১৫৪ বলে ৫৭ রানের জুটি যেভাবে ভাঙে, সেটি হায় হায় রব তুলে দেওয়ার মতোই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইদানীং যেন এক উদ্বোধনের মৌসুমই চলছে সেই বিশ্বকাপ থেকে। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ‘টাইমড আউট’ দেখে সাকিব আল হাসানের সৌজন্যে।

 

এবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম দেখল বাংলাদেশের প্রথম ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট। পার্থক্য বলতে দিল্লিতে বাংলাদেশ ছিল সুবিধাভোগী, আর এখানে ভুক্তভোগী।

নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার কাইল জেমিসনের ডেলিভারি মুশফিক ডিফেন্স করার পর বল উইকেটে ড্রপ খেয়ে চলে যাচ্ছিল আরো দূরেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ধারাভাষ্যে অভিষেকের কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে যাওয়া ঘটনার পর তামিম ইকবালও নিশ্চিত ছিলেন যে, ‘বল কিছুতেই স্টাম্পে যেত না।’ কিন্তু মুশফিক সম্ভবত ভেবেছিলেন যে যাবে।

 

তাই ডান হাত দিয়ে বল ঠেকালেন। এ রকম যে করা যায় না, তা অজানা নয় তাঁরও। তবু করলেন। সঙ্গে সঙ্গে কিউইদের জোরালো আবেদন পর্যালোচনা করে আউটের সিদ্ধান্ত দেন টিভি আম্পায়ারও। মুশফিকের (৮৩ বলে ৩৫) এতক্ষণের সংগ্রামও তাই পণ্ডশ্রমে পরিণত!

তাঁর আগে-পরে অহেতুক উইকেট বিলানোর প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশেরও বেশি দূর যাওয়ার কথা ছিল না। তারা যায়ওনি। সিলেটে ১৫০ রানে জিতে ঢাকায় সিরিজ জেতার লক্ষ্যে নামা দল এবার গুটিয়ে যায় মাত্র ১৭২ রানেই। ব্যাটিংয়ের এই অন্ধকারের মধ্যেও অবশ্য আশার আলো ফুটতে থাকে। ফোটায় আসলে মিরপুরের স্পিন-সহায়ক ধীরগতির অসমান বাউন্সের উইকেটও। এ রকম উইকেটে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দলও খাবি খেয়ে গেছে। খেতে শুরু করেছে নিউজিল্যান্ডও। আলোর স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগেই প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদে সফরকারীরাও। ১১৭ রানে পিছিয়ে থাকার ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়াও যেন আজ দ্বিতীয় দিনে তাদের জন্য অনেক দূরের পথ হবে বলেই মনে হচ্ছে।

মনে করাচ্ছেন আসলে সিলেট টেস্ট জয়ের নায়ক তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে। প্রথম ওভারটি একজন পেসারকে দিয়ে করাতে হয় বলেই হয়তো শরীফুল ইসলামকে আনলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এর পর থেকেই শুরু দুই প্রান্তে মিরাজ-তাইজুল জুটির। বল কখনো নিচু হয় তো আবার হুট করে লাফিয়েও ওঠে। সেই সঙ্গে স্পিনারদের বলে যোগ হওয়া টার্নে কিউই ব্যাটারদের মনে দ্বিধা বাড়ে আরো। তাতে মিরাজ আর তাইজুলের মধ্যে উইকেট নেওয়ার এক অলিখিত প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে যায়। ৯ রানে মিরাজের বলে স্লিপে নাজমুলের সৌজন্যে বেঁচে গিয়েও খুব বেশিদূর এগোনো হয় না কেন উইলিয়ামসনেরও (১৩)। অফস্পিনারের পরের ওভারেই অফস্টাম্পের বাইরে পড়ে হালকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি অভিজ্ঞ ব্যাটারের ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে যেতে থাকে শর্ট লেগের দিকে।

সেখানে অপেক্ষায় থাকা তরুণ শাহাদাত হাতে বল এমন জমিয়ে ফেলেন যে এই শিকারে বোলারের চেয়ে তাঁর কৃতিত্বও কোনো অংশে কম নয়। ১৭ রানে ৩ উইকেট নেওয়া মিরাজ এক বল পরই এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন টম ব্লান্ডেলকেও। সিলেট টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়া তাইজুলও ২৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে আরো কঠিন দ্বিতীয় দিনের আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন কিউই শিবিরে। অবশ্য এর আগে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপসও। নিজেদের চেনা উইকেটে তাদের তুলনায় আরো বেশি কার্যকর তাইজুল-মিরাজরা আরেকটি ‘প্রথম’ও দেখিয়েছেন গতকাল।

এর আগে ২০১৬ সালের বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচের তৃতীয় দিনে পড়া ১৭ উইকেটই এত দিন ছিল মিরপুরে কোনো টেস্টের এক দিনের সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড অক্ষতই আছে। তবে প্রথম দিনেই ১৫ উইকেট পতনের ঘটনাও এই প্রথম। একই দিনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে মুশফিক আউট না হলে হয়তো ব্যাটিংয়ের অন্ধকারও অত দেখতে হতো না স্বাগতিকদের।

কিন্তু সেই অন্ধকার ছাপিয়েই আলোর রেখা দেখাচ্ছেন স্পিনাররা!

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন