জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নপত্রের ২৭% বাতিল

gbn

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। ৩০০টি আসনে মোট দুই হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা ও ৭৩১টি বিভিন্ন কারণে বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের শতকরা হার ২৬.৯১।

 

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সারা দেশে ভোট গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচনঅনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিন হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা হয়। এর মধ্যে বৈধ ঘোষণা করা হয় দুই হাজার ২৭৯টি, বাতিল হয় ৭৮৬টি।

এদিকে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া প্রার্থীরা চাইলে আজ মঙ্গলবার থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করতে পারবেন।

 

এ লক্ষ্যে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি আলাদা আলাদা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বুথগুলো খোলা থাকবে। গতকাল সোমবার রাতে নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমশিনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ প্রসঙ্গে ইসির যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান বলেন, অনেক কারণ আছে।

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগেরই ১ শতাংশ স্বাক্ষরসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়া ঋণ-বিল খেলাপি, আদালতে মামলা ও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। 

 

দেশের ১০টি অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে কুমিল্লা অঞ্চলে ১২০টি। আর সবচেয়ে কম মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ফরিদপুর অঞ্চলে ২৩টি। শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে কুমিল্লা অঞ্চলে ৩৩.৮৮ শতাংশ।

 

গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহ করা তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, রংপুর অঞ্চলের আট জেলার ৩৩টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ২৭৮টি। এর মধ্যে বৈধ ঘোষণা করা হয় ২০৯টি। বাতিল হয় ৬৯টি, যার শতকরা হার ২৪.৮২।

রাজশাহী অঞ্চলের আট জেলার ৩৯টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ৩৬৯টি। এর মধ্যে বৈধ ঘোষণা করা হয় ২৫৯টি। আর বাতিল হয় ১১০টি, যার শতকরা হার ২৯.৮১।

এই অঞ্চলে বগুড়া-৪ আসনে আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ।

পাবনা-২ আসনে দুজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত কারণে বিএনএম প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আজিজ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে তালিকায় স্বাক্ষর গরমিলের কারণে।

খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ৩২২টি। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন বৈধ ঘোষণা করে ২২৮টি। বাতিল হয় ৯৪টি, যার শতকরা হার ২৯.১৯।

বরিশাল অঞ্চলের ছয় জেলার ২১টি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ১৭৩টি। এর মধ্যে বৈধ ১৩৫টি। আর বাতিল হয় ৩৮টি, যার শতকরা হার ২১.৯৬।

এই অঞ্চলের বরিশাল-৪ আসনে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ আসনে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের মনোনয়নপত্র।

এ অঞ্চলের আরেকটি আসন ঝালকাঠি-১-এর বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া শাহজাহান ওমর।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছয় জেলার ৩৮টি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ৩২৭টি। এর মধ্যে বৈধ হয় ২৪৩টি। আর বাতিল করা হয় ৮৪টি, যার শতকরা হার ২৫.৬৮।

ঢাকা অঞ্চলের ছয় জেলার ৪১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ৪৩১টি। এর মধ্যে বৈধ হয় ৩১৭টি। আর বাতিল ঘোষণা করা হয় ১১৪টি, যার শতকরা হার ২৬.৪৫।

ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার ১৫ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ১০৩টি। এর মধ্যে বৈধ ৮০টি। আর বাতিল করা হয় ২৩টি, শতকরা হার ২২.৩৩।

সিলেট অঞ্চলের চার জেলার ১৯টি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ১৬০টি। এর মধ্যে বৈধ ১২৫টি। আর বাতিল ঘোষণা করা হয় ৩৫টি, শতকরা হার ২১.৮৭।

এ অঞ্চলের সিলেট-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।

কুমিল্লা অঞ্চলের ছয় জেলার ৩৫টি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ৩৫৫টি। এর মধ্যে বৈধ ২৩৫টি। আর বাতিল ঘোষণা করা হয় ১২০টি, যার শতকরা হার ৩৩.৮০।

এ অঞ্চলের লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিকল্পধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলার আসনসংখ্যা ২৩টি। মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ১৯৮টি। এর মধ্যে বৈধ ঘোষণা করা হয় ১৫৪টি। আর বাতিল হয় ৪৪টি, শতকরা হার ২২.২২।

ঢাকার ২০টি আসনে ৭৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগরীর ১৫টি ও ঢাকা জেলার পাঁচটি আসনে প্রার্থী হতে মোট ২৩৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৭৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনে ৬৪ জন এবং ঢাকা জেলার পাঁচটি আসনে ১৪ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। নানা অনিয়মের কারণে ঢাকা ৪ থেকে ১৮ আসনের রিটার্নিং অফিসার ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম এবং ঢাকা ১, ২, ৩, ১৯ ও ২০ আসনের রিটার্নিং অফিসার ও ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান এসব মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন।

মনোনয়নপত্র বাতিলের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। ঢাকা মহানগরীতে ২৯ জন এবং ঢাকা জেলায় তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটার সমর্থনের অভাব ও সমর্থনকারীদের তথ্য গরমিলের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসাররা।

ঢাকা মহানগরীর রিটার্নিং অফিসার ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম জানান, যাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৫ জন ঋণখেলাপি। এ ছাড়া ২৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সব কাগজপত্র জমা দেননি এবং ২০ জন প্রার্থী নির্ধারিত ছক পূরণ ও যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করেননি। এ ছাড়া ঢাকা জেলায় মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ১৪ জন প্রার্থীর। তবে ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হানিফ দিহিদার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে আয়ের উত্স ও ব্যয়ের বিবরণী ফরমে স্বাক্ষর না করার কারণে।  

রিটার্নিং অফিসারদের ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-১ থেকে ঢাকা-২০ পর্যন্ত ২০টি আসনে আওয়ামী লীগের ২০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আরো ১৫৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার ১৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে।

জিবিডেস্ক //

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন