জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের নাটকীয়তার যেন শেষই হচ্ছে না। ৩৪ ঘণ্টা পরও শেষ হয়নি ভোট গণনা। জনবল বাড়ালেও এখনো ফলাফল দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
দুদিনেও শেষ হয়নি ভোটগণনা, ফল জানা যাবে কখন?
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ১০ম জাকসু নির্বাচন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের সংসদ নির্বাচনও হয়।
সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলে ৫টা পর্যন্ত। অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল। একই সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানায়। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরাও কারচুপি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক দোষারোপ হিসেবে দেখছেন এবং শেষ সময় পর্যন্ত ভোটগ্রহণে অংশ নিয়েছেন।
ওইদিন রাত ১০টা ১০ মিনিটে ভোট গণনা শুরু হয়। শুক্রবারও দিনভর ভোট গণনায় দুই দফা বিরতি দেয়া হয়। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার সকালে দায়িত্বপালনের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পোলিং অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এরপরই ভোট গণনায় আরও ধীরগতি বাড়ে।
এদিকে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে নির্বাচন কমিশনের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।
মুহূর্তেই এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষার্থীরা। সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট অভিযোগ করেন, জাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র সফল না হওয়ায় বিএনপিপন্থি শিক্ষক মাফরুহী সত্তার পদত্যাগ করেছেন। এই ঘটনাকে দায়িত্বহীনতা আখ্যা দিয়ে নিন্দাও জানায় সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।
একইদিন ধীর গতির পরিপ্রেক্ষিতে ভোট গণনা বন্ধ রেখে জরুরি বৈঠক করেন জাবির ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান। পরে টেবিল বাড়ানোর পাশাপাশি অধিক জনবল কাজে লাগিয়ে গণনায় গতি বাড়ানোর কথা বলেন তিনি। রাতের মধ্যে ভোট গণনা সম্পন্ন হবে এবং যথারীতি ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি। কিন্তু শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ১২টা হলের কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। আরও বাকি রয়েছে ৯টি হলের ভোট গণণা। এই কাজ কখন শেষ হবে বলতে পারছেন না কেউই।
ভোট গণনায় অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণে ক্ষোভ ঝাড়েন রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার। এভাবে চলতে থাকলে তিন দিনেও ভোট গণনা শেষ হবে না দাবি করে, তিনি বলেন, শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর দায় নিতে হবে প্রশাসনকে।
সিনেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিলম্বের জন্য নির্বাচন কমিশনের অপেশাদারিত্বকে দায়ী করেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনায় ওএমআর ব্যবহারের দাবি জানান গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী।
এদিকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিনেট ভবনসহ ক্যাম্পাসজুড়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৭ জন। বিভিন্ন পদে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন