ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধাঃ
সাবেক রাষ্টপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক,সঙ্গী মোরশেদ মঞ্জুর, মেজর আনিছ ও শাহজাদাকে অভিযুক্ত করে করে গাইবান্ধায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বাদী আতিকুর রহমান এজাহারে উল্লেখ করেন , তার আর্থিক সংকটের কারণে ইটভাটাটি ভাড়া দেন। এরপর ২০১০ সালে বিদিশা সিদ্দিকের মালিকানাধীন ঢাকাস্থ এরিক বিস্ত্রো নামীয় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নেন। পরবর্তীতে তারই অধীনে ‘বিদিশা ফাউন্ডেশন’ এ যোগদান করেন।
২০১৬ সালের শেষের দিকে বিদিশা সিদ্দিক তার ইট ভাটায় টাকা লগ্নি করেন। বিদিশা সিদ্দিকি ইটভাটা চালু করার জন্য প্রথম পর্যায়ে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ধার প্রদানে রাজি হন। কিস্তি প্রদানের স্বার্থে ৬০ মাস মেয়াদী প্রতিমাসে সুদাসলে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা কিস্তি প্রদানের শর্তে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকার চেক বিদিশা সিদ্দিককে প্রদান করেন আতিকুর রহমান।
এই টাকা গুলো আতিকুর রহমান বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে বিদিশা সিদ্দিকের নির্দেশে বিদিশা ফাউন্ডেশনের কাছে প্রদান করেন।
এদিকে বিদিশা সিদ্দিক গত ৭ মার্চ একটি প্রাইভেট জীপ গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো-ঘ- ১৭-৩০৪৬ যোগে তার কতিপয় অস্ত্রধারী লোকজনসহ অতর্কিতে আতিকুরের ইটভাটায় আসেন।
এ সময় ভাটার কর্মচারীদের সামনে পূর্বের সম্পর্কের কারণে তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে ওঠার পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাড়ির মধ্যে তাকে মারপিট করতে করতে ঢাকার পথে রওনা দেয়।
এরপর বিদিশা সিদ্দিকের ঢাকার গুলশান-১ রোড নং-৪ ও ১৭ নং বাসার দ্বিতীয় তলায় তাকে আটকে রেখে প্রচণ্ড মারধর করে ও মৃত্যুর ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০/৩৫টি ১০০ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়।
এ সময় তার কাছে থাকা নগদ এক লাখ আট হাজার টাকা, মোটর সাইকেলের চাবি, ম্যানি ব্যাগে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড, তার স্ত্রী ও তার বাবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: এর চেকের পাতা জোরপূর্বক নেয়।
বিদিশা সিদ্দিক ও তার লোকজন গত ৭ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিন তাকে আটকে রেখে প্রতিরাতে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
এরপর তাকে ছেড়ে দিতে তার ভাই মো. আসাদুজ্জামান মিথুনকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে ঢাকার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় আটকে রেখে তাকেও অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে দুই ভাইকে ছেড়ে দিবে বলে তার বৃদ্ধ বাবা মোহাম্মদ আলী সরকারকে ঢাকায় ডেকে নেন।
এরপর বিদিশা সিদ্দিকের বাসার দ্বিতীয় তলায় সকলকে একদিন আটকে রাখে। সেখানে বিদিশা সিদ্দিকের লোকজন তাদেরকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকির মুখে একটি সমঝোতা চুক্তি নামায় আতিকুর ও তার বাবার স্বাক্ষর নেয়।
এরপর বিদিশা সিদ্দিকি গত ১৭ মার্চ আতিকুর ও তার লোকজনকে গাইবান্ধার ইটভাটায় নিয়ে আসে। তারা ইটভাটার অফিস তালাবদ্ধ করে এবং শাহজাদা নামে ব্যক্তিকে ইটভাটার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।
এরপর ইটভাটার যাবতীয় কাগজপত্র, রশিদ, মেমো, অফিসে থাকা বেশকিছু চেকের পাতা ও বিদিশা সিদ্দিককে
পরিশোধ করা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার রিসিভ কপিগুলোও তারা নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আতিকুরের ব্যবহৃত মটর সাইকেলটি শাহজাদার মাধ্যমে গাইবান্ধা থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠায়।
বর্তমানে বিদিশার নির্দেশে শাহজাদা জোরপূর্বক ইটভাটা দখল করে আছে ও ইটভাটার অনেক মালামাল বিক্রি করছে। আতিকুর রহমান নিরুপায় হয়ে গাইবান্ধা সদর থানায় বিষয়টি জানালে থানা আমলে না নেয়ায় পরে গাইবান্ধার আমলি আদালতে বিদিশা সিদ্দিক, তার সঙ্গী মোরশেদ মঞ্জুর, মেজর আনিছ ও শাহজাদাকে অভিযুক্ত করে গত ২৮ মার্চ একটি মামলা (নং ২৪৮) দায়ের করেন।
৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ২ টায় এরশাদ পত্নী বিদিশাকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দেখা যায়।প্রায় অধাঘন্টা ব্যাপি তিনি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমানের সাথে বৈঠক করেন।
এ ব্যাপারে বিদিশা সিদ্দিকির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আতিকুর আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন