সেই কুখ্যাত মুরগি মিলনের অবৈধ সম্পদ বেদখল

gbn

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

সোনা চোরাচালান আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বিপুল সম্পদ অর্জন। রাজধানীর পল্টন, হাতিরপুল ও এলিফ্যান্ট রোডে অর্ধশত কোটি টাকার ওপরে সম্পদ। তবে কিছুই ভোগ করে যেতে পারেননি ৯০ দশকের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মুরগি মিলন। রেখে যেতে পারেননি উত্তরাধিকার। এখন সেই সম্পদ চলে গেছে অন্যের হাতে। এই নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি।

৯০ দশকের শুরুতে যেসব সন্ত্রাসীরা ঢাকা শহর কাঁপাতেন তাদের অনেকেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজেদের যুবলীগ-ছাত্রলীগের পরিচয় দিতে শুরু করেন। আর যাদের রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না, বাহিনী তৈরি করে তারাও রীতিমতো এলাকা দখলে মেতে ওঠেন। বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত সন্ত্রাসীরাও তখন দলবদল করে রাতারাতি যুবলীগ হয়ে যায়। তাদেরই একজন হলেন মুরগি মিলন।

 

হুমায়ূন কবিরের জন্ম মুন্সিগঞ্জে হলেও তারা থাকতেন ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে। দুই ভাই, বাবা তাজুল ইসলাম হাতিরপুলে মুরগির ব্যবসা করতেন। ১৮ বছর পর্যন্ত মিলন সেই ব্যবসা দেখাশোনা করেন। সে কারণে বড় হয়েও তার নামের সঙ্গে ‘মুরগি’ শব্দটি লেপ্টে থাকে ।

মুরগি মিলনের স্ত্রী নাসরিন কবির ডলির বাবা ছিলেন সাবেক জেলা জজ। তিনি মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার আয়োজন করেন। ১৯৮৪ সালের ২৪ আগস্ট খবর পেয়ে মুরগি মিলন ডলিকে বাড়ি থেকে তুলে এনে বিয়ে করেন।

বিভিন্ন মামলার নথি থেকে জানা যায়, সোনা চোরাচালান আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন মুরগি মিলন। এলিফ্যান্ট রোডে দোকান, গার্মেন্টস কারখানা, পল্টনে ফ্ল্যাট, হাতিরপুলে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, আরো কত কী।

চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০০০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে তাকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। নিহত হওয়ার সময় তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি বিপুল সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য রেখে গেলেও কোন উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারেননি আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর সন্ত্রাসী মুরগি মিলন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে মিলন যে বিপুল সম্পত্তি করেছিলেন, তা এখন ভোগদখল করছেন অন্য লোক। যাদের সঙ্গে তার দূরতম সম্পর্কও ছিল না।

মুরগি মিলন নিহত হওয়ার পর তার সব সম্পত্তি চলে যায় স্ত্রী নাসরিনের নিয়ন্ত্রণে। মিলনের তিন ভাই ও এক বোন সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।

পরবর্তীতে ২০০৫ সালের ১৫ এপ্রিল মাহবুবুর রহমান সর্দার নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন নাসরিন। ২০০৬ সালে তাদের পুত্রসন্তান রাইয়ান মাহবুবের জন্ম হয়। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান নাসরিন। পরে মুরগি মিলনের রেখে যাওয়া সম্পদ চলে যায় নাসরিনের দ্বিতীয় স্বামীর হাতে।

নাসরিনের মৃত্যুর পর ২০১৪ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন তার মা ছালেহা খানম। এতে বলা হয়, মুরগি মিলন নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী নাসরিন বিয়ে করেন মাহবুবুর রহমান সর্দারকে। তাদের একটি ছেলেসন্তানও রয়েছে। কিন্তু সম্পত্তির লোভে মাহবুবুর রহমান শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে হত্যা করেন স্ত্রী নাসরিনকে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, শরীরে বিষ প্রয়োগের পর ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকার একটি ক্লিনিকে মারা যান নাসরিন। এর ৩৪ দিনের মাথায় কাউকে কিছু না জানিয়ে আদালতের মাধ্যমে সব সম্পত্তি নাবালক সন্তানের নামে হস্তান্তর করিয়ে নেন মাহবুব। এরপর তিনি সেই নাবালকের অভিভাবক হয়ে সব সম্পত্তি ভোগ করতে থাকেন। ভোগ করা সম্পদের মধ্যে পুরানা পল্টনে ফ্ল্যাট ও হাতিরপুলে ইস্টার্ন প্লাজার পাশে বেলভিউ নামে নয়তলা একটি বাণিজ্যিক ভবন আছে, যে ভবন থেকে মাসে আট লাখ টাকা ভাড়া পাওয়া যায়।

আদালতে করা মামলায় ছালেহা খানম মাহবুবের ভাই খোকন সর্দার ও নাসরিন যে হাসপাতালে মারা যান, সেই হাসপাতালের চিকিৎসক সালেহ আহমদকেও আসামি করেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। ছালেহা খানম সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান। মামলাটি এখনো হাইকোর্টে চলমান আছে।

এদিকে নাসরিনের মৃত্যুর পর তার নানির বাড়ি মাদারীপুরের একটি স্কুলে তার ছেলেকে ভর্তি করে দেন মাহবুব। এরপর আদালতে মামলা করে নাবালক সন্তানের পক্ষে সম্পত্তির ডিক্রি নেন। ডিক্রি পাওয়ার পর নাবালকের অভিভাবক হিসেবে তিনি সম্পত্তি ভোগদখলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। সেই থেকে তিনি মুরগি মিলনের সম্পদের দখলদার হয়ে যান।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন