জিবি নিউজ24ডেস্ক//
আগামী ৫ আগস্টের আগেই ঐকমত্য নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রজন্ম ও জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মুখ দেখবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তব হবেই। জুলাই শহিদ ও আহতদের আত্মত্যাগের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন মাহফুজ আলম।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শিরোনামে মাহফুজ আলম লিখেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র গত ৩১ ডিসেম্বর ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের জন্য সেবার সে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিভিন্ন দলের খসড়া প্রস্তুত হলেও ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন প্রস্তাবনা নিয়ে সংলাপ মীমাংসায় পৌছায়নি। বিভিন্ন ধারা নিয়ে রাজনৈতিক আদর্শিক পজিশন নিয়ে নেগোসিয়েশন থমকে যায় পরের দুই মাস। (মাঝে রমজান ছিল)।
উপদেষ্টা লেখেন, ‘মে মাসে ক্যাবিনেটে আমি আবার আলাপ তুলি ঘোষণাপত্র নিয়ে। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এটা নিয়ে আলোচনা করতে অনাগ্রহ দেখায়। কিন্তু, জুন মাসে আবার এটা উত্থাপন করি এবং সিদ্ধান্ত হয় সরকারের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে একটা সর্বসম্মত ঘোষণাপত্র প্রণয়ণ করবেন।
জুলাইয়ের শুরু থেকে এ প্রক্রিয়ায় কয়েকবার আলাপ হলেও রাজনৈতিক আদর্শিক (ঐতিহাসিক ও বটে) কিছু বক্তব্য নিয়ে এখনো ঐকমত্য নিশ্চিত হয়নি। কিন্তু, আশা করি সবাই ছাড় দিয়ে (ছাত্রদের অনেক বক্তব্যই নেগোশিয়েটেড হয়েছে) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে যথাযথ রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির সুযোগ করে দিবেন।’
শেষে তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, দল-মতাদর্শ নির্বিশেষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সকল গুরুত্বপূর্ণ পর্বের স্বীকৃতির ব্যাপারে আমরা উদার হওয়া সত্ত্বেও জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি বাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি জুলাই ঘোষণাপত্রে যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ খসড়া প্রণয়ন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপে উঠে আসা বিষয়গুলো নিয়ে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়। সোমবার (২৮ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের খসড়া পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
খসড়াটি এসেছে মাসব্যাপী রাজনৈতিক সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে। এটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
এতে মোট সাতটি অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এসব অঙ্গীকারে একমত হলে সই হতে পারে চূড়ান্ত সনদ।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে:
১. হাজারো মানুষের জীবন ও রক্ত এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবো।
২. ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ দেশের শাসনব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ এই সনদে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
৩. ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ দেশের শাসনব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ এই সনদে লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন এই সনদ গৃহীত হওয়ার পরে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে এবং এসব সংস্কার টেকসই করতে অঙ্গীকার করছি।
৪. এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো পরবর্তী দুই (২) বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
৫. ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষার পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করবো।
৬. ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে এবং এর আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদানে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বিজ্ঞাপন
৭. ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো।
কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেয়। পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সেই সুপারিশগুলো একত্র করে দুটি ধাপে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য তৈরির কাজ চালায়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন