জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের প্রচারণায় যেন ভিন্ন মাত্রা দেখা গেছে। ভোটারদের মনজয় করতে প্রার্থীরা প্রতিদিনই সকাল থেকে পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে ভোট চাচ্ছেন। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি এবং প্রার্থীদের গানম্যান ও দেহরক্ষী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় একজন করে বেসরকারি সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়োগ দিতে পারবেন। এছাড়া সীমিত সময়ের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও নিতে পারবেন বলে জানা যায়।
এদিকে, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো স্থগিত করে। একই সঙ্গে তাদেরকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। এরপর অস্ত্র জমা নেয়া হয়। কারও কারও নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় জমা নেওয়া সেই অস্ত্র ফেরত দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কেউ অস্ত্র ফেরত পাবেন না।
পুলিশ সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরবাসীর জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনে বদ্ধ পরিকর পুলিশ। কেউ কোন অরাজকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা করলেই নুন্যতম ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তাকে আইনে আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই সাথে অপরাধীরা যাতে তৎপর না হয়ে সেজন্য মহানগরীল ছয়টি থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়া ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজে করে যাচ্ছে পুলিশ। ইতোমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। একই সাথে কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মনে করলেও পুলিশকে অবগত করতে পারবেন বলেও জানায় পুলিশ।
সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘সিলেটে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা এবার মুখিয়ে আছে ভোট দেয়ার জন্য। প্রচারণা করতে কোন ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকিয়ে আছে বলে মনে করছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, সিলেটের সর্বস্তরের জনগণ আমার সাথে আছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ সবসময় বদ্ধ পরিকর। একই সাথে চলছে পুলিশের অভিযান। ইতোমধ্যে পুলিশ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে তালিকা অনুসারে কাজ শুরু করেছে। সেই সাথে কেউ যদি মনে করে তিনি ঝুঁকিতে রয়েছেন তাহলে পুলিশের সহযোগীতা নিতে পারেন। পুলিশ প্রত্যেক নাগরিককে সেবা দিতে সবসময় প্রস্তুত। মহানগরী এলাকায় কতজন ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পুলিশের একান্ত বিষয়।
মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়োগ এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে নিরাপত্তাঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি ও প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তাঝুঁকির মাত্রা এবং ব্যক্তি সম্পর্কে তদন্তের পর আবেদন অনুমোদন করা হবে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এসএমপির বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হলেও বাকি ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। অন্যদিকে লুন্ঠিত ৫ হাজার ৭৪০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ৫৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে- এসএমজি, চায়না রাইফেল, পিস্তল, শর্টগান এবং গ্যাস গান রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন