‘থ্রি ইডিয়টস’ যার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত, কে এই লাদাখ বিক্ষোভের নেতা?

gbn

২০০৯ সালে বলিউডের জনপ্রিয় ছবি থ্রি ইডিয়টস মুক্তির পরপরই ভারতের লাদাখের এক উদ্ভাবকের নাম আলোচনায় আসে। অনেকেই মনে করেন, ফুনশুখ ওয়াংড়ু চরিত্রটির অনুপ্রেরণা ছিলেন সোনম ওয়াংচুক নামের এই উদ্ভাবক। ওই চরিত্রে আমির খান এক সৃজনশীল প্রতিভার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। 

‘দূরবর্তী অঞ্চলে শিক্ষাব্যবস্থার সুসংগঠিত, সহযোগিতামূলক ও সমাজভিত্তিক সংস্কারের’ স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান ওয়াংচুক।

 


 

সম্প্রতি আবারও আলোচনায় এসেছেন তিনি। লাদাখে প্রতিবাদ সহিংস রূপ নেওয়ার পর চারজন নিহত ও প্রায় একশত মানুষ আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করেছে লাদাখ পুলিশ। কেন্দ্রীয় সরকার তাকে অশান্তি উসকে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।

তার প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিদেশি অর্থায়ন অনিয়মের অভিযোগে সিবিআই তদন্তও শুরু করেছে। তবে ওয়াংচুক সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট এর অধীনে গ্রেপ্তার হতেও তিনি প্রস্তুত।

 

প্রারম্ভিক জীবন ও সংগ্রাম

লাদাখের লেহর কাছাকাছি উলেটোকপো গ্রামে জন্ম সোনম ওয়াংচুকের। গ্রামের স্কুল সংকটের কারণে নয় বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বাড়িতেই পড়াশোনা করেন।

১৯৭৫ সালে তার বাবা শ্রীনগরে বদলি হলে তিনি নতুন শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হন। ভাষাগত দুর্বলতার কারণে সেখানে প্রথমদিকে সমস্যায় পড়েন। পরে মাত্র ১২ বছর বয়সে একাই দিল্লি চলে গিয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে শ্রীনগরের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান এনআইটি শ্রীনগর) প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করেন।

 

সেকমোল ও উদ্ভাবনী প্রকল্প

১৯৮৮ সালে ভাই ও সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে ওয়াংচুক প্রতিষ্ঠা করেন স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ (সেকমোল)।

এ সংগঠন শ্রেণিকক্ষকে লাদাখি সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেয়। ‘অপারেশন নিউ হোপের’ অংশ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রম সংস্কার করেন।

 

পরে ২০১৬ সালে কাদামাটির নির্মাণে সেকমোলের টেকসই ক্যাম্পাস ইন্টারন্যাশনাল টেরা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এ ছাড়া ওয়াংচুক উদ্ভাবন করেন আইস স্তূপা প্রকল্প—একটি কৃত্রিম হিমবাহ, যা লাদাখের পানির সংকট সমাধানে সহায়তা করে। তার এই সমাজভিত্তিক শিক্ষা ও উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডই ২০১৮ সালে তাকে ম্যাগসেসে পুরস্কার এনে দেয়।

লাদাখ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক

২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ার পর লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। শুরুতে এই সিদ্ধান্ত স্বাগত জানানো হলেও, পরে রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের সুরক্ষা দাবি জোরদার হয়। তখন থেকে ওয়াংচুক আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি বেকারত্ব, পরিবেশগত ঝুঁকি এবং সংস্কৃতি রক্ষার বিষয়গুলো সামনে আনেন।

গত দুই বছরে তিনি একাধিক অনশন ও পদযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে শুরু করা তার ৩৫ দিনের অনশন শেষ পর্যন্ত সহিংসতার কারণে ভেঙে দিতে হয়। ওয়াংচুক তখন বলেন, তার ‘শান্তিপূর্ণ পথের বার্তা ব্যর্থ হয়েছে’ এবং তিনি যুবকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

কেন জনপ্রিয় সোনম ওয়াংচুক?

সোনম ওয়াংচুক লাদাখের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সেকমোল সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি পানির সংকট সমাধানে আইস স্তূপা প্রকল্প উদ্ভাবন করেন এবং টেকসই স্থাপত্যের প্রচার করেন, যার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন, যার মধ্যে অন্যতম র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার। তার জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে থ্রি ইডিয়টস ছবির ফুনশুখ ওয়াংডু চরিত্রটি নির্মিত হয়েছিল, যা তাকে গোটা ভারতে পরিচিত নাম করে তোলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা দাবির আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা তাকে আরো প্রভাবশালী করেছে, ফলে তিনি আজ একাধারে একজন সম্মানিত উদ্ভাবক এবং জনপ্রিয় জননেতৃত্বের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন।

সব মিলিয়ে, উদ্ভাবক, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী হিসেবে তার কাজ এবং সিনেমার মাধ্যমে পাওয়া জনপ্রিয়তা সোনম ওয়াংচুককে শুধু লাদাখ নয়, সারা ভারতে পরিচিত একটি নাম করে তুলেছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন