ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। গত ২৪ জুলাই তার এই ঘোষণা অনেকের জন্য সময় অনুযায়ী অপ্রত্যাশিত হলেও সিদ্ধান্তটি ছিল বহুদিন ধরে বিবেচনায় থাকা একটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ।
ম্যাক্রোঁ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির প্রতি ফ্রান্সের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আমি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শান্তি সম্ভব।’
ফ্রান্স এই স্বীকৃতি দিলে তা হবে প্রথম জি৭ দেশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ এবং এটি হবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী কূটনৈতিক কণ্ঠস্বর। এরই মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং স্পেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স এই তালিকায় ১৪৮তম দেশ হবে।
ম্যাক্রোঁ গত কয়েক মাস ধরে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আসছিলেন এবং যুক্তরাজ্যসহ জি৭-এর অন্য দেশগুলোকে এই উদ্যোগে একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন, যদিও তাতে সফল হননি।
আসল পরিকল্পনা ছিল জুনে নিউইয়র্কে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত একটি জাতিসংঘ সম্মেলনে এই স্বীকৃতি ঘোষণা করা। ওই সময় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানিয়ে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন।
এই প্রতিশ্রুতিগুলোই ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্তে মূল প্রভাব ফেলেছে। যদিও নিউইয়র্কের ওই সম্মেলন ইরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায়।
তবে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও ইসরায়েলের বিমান হামলা ম্যাক্রোঁকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেছে। এপ্রিলে মিশরের এল-আরিশ এলাকায় গাজা সীমান্তে চিকিৎসক ও সাহায্যকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এই সংকটের তীব্রতা উপলব্ধি করেন।
ফরাসি কূটনীতিকরা বলছেন, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক সমাধানের নতুন পথ খোলার সুযোগ এসেছে এবং এটি তাদের পক্ষ থেকে ‘সংলাপ ও শান্তি বেছে নেওয়া ফিলিস্তিনিদের’ প্রতি সমর্থনের বার্তা।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কড়া। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করে এবং আরও একটি ইরানি প্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে, যেমনটি গাজা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ একে ‘সন্ত্রাসের কাছে আত্মসমর্পণ’ বলে মন্তব্য করেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে ‘দায়িত্বহীন’ আখ্যায়িত করে বলেন, এটি ‘হামাসের প্রচারণাকে সাহায্য করে এবং শান্তির প্রচেষ্টাকে পিছিয়ে দেয়।’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ম্যাক্রোঁ যা বলেন তার গুরুত্ব নেই… তিনি ভালো মানুষ, তবে ওর কথা তেমন গুরুত্ব পায় না।’
বাস্তবে এই স্বীকৃতি হয়তো তৎক্ষণাৎ বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে না। কারণ এটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে ইসরায়েলি কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন যে, এটি ভবিষ্যতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে আরও কঠোর পদক্ষেপে প্ররোচিত করতে পারে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন