আলোচনায় বসা নিয়ে দরকষাকষি!

gbn

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি তো দূরের কথা, এখন চলছে বৈঠকে বসা নিয়ে দরকষাকষি। যদিও ২৯ জুলাই অনলাইনে বাংলাদেশকে একটি বৈঠকের শিডিউল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরাসরি বৈঠকে বসার জন্য তদবির করা হচ্ছে। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরাসরি বৈঠকের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কনীতি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। সে হিসাবে ওইদিন থেকে বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্য যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে ঢুকতে হলে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ঢুকতে হবে। অথচ আলোচনার সময় দেওয়া হয়েছে তার মাত্র দুই দিন আগে ২৯ জুলাই, সেটাও আবার অনলাইনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে পৃথিবীর ১৪০টির বেশি দেশের সঙ্গে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ নিয়ে আলোচনা করেছে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ নেগোসিয়েশনও করে ফেলেছে। অথচ তাদের অনেক ব্যস্ততার কারণে বাংলাদেশকে সময় দিতে পারছে না কিংবা বাংলাদেশকে প্রায়োরিটি লিস্টে রাখেনি ইউএসটিআর। কেননা আজ থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় আগে যখন এই ট্যারিফ ঘোষণা করা হয় তারপর থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খুব জোরালোভাবে আলোচনা কিংবা যোগাযোগ করা হয়নি ইউএসটিআরের সঙ্গে। এর ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য খাত প্রধানত রপ্তানি বাণিজ্য কঠিন এক ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথমে আমরা এ ইস্যুটিকে গুরুত্ব দিইনি। মনে করেছিলাম হালকা আলোচনাতেই সমাধান হয়ে যাবে। আর এখন ইউএসটিআর আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে ক্ষতিটা কিন্তু বাংলাদেশেরই বেশি হবে।

 

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে এই ট্যারিফ ইস্যুতে ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের যে জটিলতা এবং নেগোসিয়েশনের বিষয় সেটা বাণিজ্যিকের চেয়ে অবাণিজ্যিক বেশি।

অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র অবাণিজ্যিক বা নন ডিসক্লোজার কিছু চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশের সঙ্গে। যেগুলো মূলত আন্তআঞ্চলিক নিরাপত্তা বৈশ্বিক বাণিজ্য ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য নিরাপত্তায় ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এসব চুক্তির মধ্যে যেগুলো অবাণিজ্যিক সেগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলছে অবাণিজ্যিক এবং স্বার্থ পরিপন্থি কোনো চুক্তি বা ইস্যুকে বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিচ্ছে না। এ কারণে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউএসটিআর আমাদের ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল দুই ধরনের আলোচনার কথা জানিয়েছে। আমরা বলেছি এটা সরাসরি আলোচনা হওয়া দরকার। কেননা এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী রবিবার বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি একটি অর্থপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এসবের গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে এবং বাণিজ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় দেশটি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনবে।

 

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইউএসটিআর খসড়া চুক্তিতে যেসব অবাণিজ্যিক শর্ত দিয়েছে, সেগুলোতে সম্মতি দেবে না বাংলাদেশ। তবে সরাসরি শর্তগুলো নাকচ করে না দিয়ে এসব শর্ত পূরণের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঁচ বছর এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত সময় চাওয়া হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া সরকার লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে পারস্পরিক শুল্কের হার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনার পরও বাংলাদেশের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ‘ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চুক্তিতে যে ধরনের শর্ত দিয়েছে এবং তা প্রকাশ না করার জন্য নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে, ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তাই ইন্দোনেশিয়া লবিস্ট নিয়োগ দিতে পারলেও বাংলাদেশ তা পারছে না।

এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, তেলবীজ, তুলা, বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ, বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে দেশটির সঙ্গে শুধু এই রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্কের বিষয়ই নয়, এর সঙ্গে টিকফা চুক্তি, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। আর যুক্তরাষ্ট্র চায় বাণিজ্য ও আন্তআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আপাতত নন-ডিসক্লোজার চুক্তি। এসব বিষয়ে একমত হতে না পারলে শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নেই।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন