মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশাল সম্পত্তি জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুখবাতার বাটবোল্ড দুর্নীতির টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তদন্তকারীরা এখন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের মিডটাউনে অবস্থিত সেই বিশাল সম্পত্তি জব্দ করতে চাইছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ ডলার।

অভিযুক্ত সুখবাতার বাটবোল্ড ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পরিবার নিয়ন্ত্রিত ফার্ম বড় এক খনির চুক্তি পাওয়ার পর তিনি ফ্ল্যাট দুটি কিনেছিলেন।

খনি মঙ্গোলিয়ার মূল শিল্প।

 

তবে ব্যাটবোল্ড তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ৬০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এখনো মঙ্গোলিয়ার সংসদে রয়েছেন। রয়টার্সে প্রকাশিত তাঁর আইনজীবী অরিন স্নাইডারের এক বিবৃতি অনুযায়ী, ‘বাটবোল্ড আদালতে তাঁর সেই দিনের অপেক্ষায় আছেন, যখন তিনি এই ভিত্তিহীন অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।

 

মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটররা বলেছে, সেন্ট্রাল পার্ক থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন বাটবোল্ড। সেগুলোর একটি কার্লটন হাউসে, আরেকটি ৭০ তলা কাঁচঘেরা আকাশচুম্বী ভবন দ্য পার্ক ইম্পেরিয়ালে। তাঁরা এ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে জনগণের টাকা ‘তাঁর পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য অবৈধ শেল কম্পানির মাধ্যমে খনির চুক্তি থেকে লাখ লাখ ডলার পাচার’ করার অভিযোগ এনেছেন।

এফবিআইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক জেমস স্মিথ বলেছেন, ‘জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে বাটবোল্ডের বিরুদ্ধে।

 

মার্কিন প্রসিকিউটরদের বক্তব্য অনুযায়ী- বাটবোল্ড যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি কম্পানিকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডলারের খনির চুক্তি দেওয়া হয়েছিল। যদিও ক্যাট্রিসন নামে পরিচিত সেই প্রতিষ্ঠানটির কোনো খনি কার্যক্রম পরিচালনার ইতিহাস ছিল না। এর একমাত্র পরিচালক ছিলেন ভাষাতত্ত্বের একজন সাবেক শিক্ষক। সেই খনির চুক্তি থেকে লাখ লাখ ডলার তখন বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়েছিল এবং শেল কম্পানির মাধ্যমে সরানো হয়েছিল। এই অর্থের কিছু অংশ ম্যানহাটানের ফ্ল্যাট কেনার পেছনে ব্যয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রসিকিউটররা।

 

গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউ থেকে ম্যানহাটনের সেই 'দ্য কার্লটন হাউজ'।

গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউ থেকে ম্যানহাটানের সেই ‘দ্য কার্লটন হাউস’।

আদালতের দাবি, ওই অ্যাপার্টমেন্টগুলোর মধ্যে একটি বাটবোল্ডের বড় ছেলে ব্যবহার করতেন।

এদিকে বাটবোল্ড নিজে এই অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন না। তবে আদালত যদি রায় দেয় যে প্রসিকিউটরদের দাবি সত্য, তাহলে তাঁর সম্পত্তি রাষ্ট্র কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

যু‌ক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের অপরাধ বিভাগের প্রধান নিকোল এম আর্জেন্টিয়েরি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অভিযোগে যেমনটা বলা হয়েছে, মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুখবাতার বাটবোল্ড তাঁর পদের অপব্যবহার করে নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা করেছেন। তিনি ও তাঁর পরিবার দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সেই অর্থের ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমূল্যের সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এই কারণে এসব সম্পত্তি জব্দ হওয়ার যোগ্য। যারা জনগণের অর্থ চুরি করে তাদের জেনে রাখা উচিত, অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ উদ্ধার করার জন্য অপরাধ বিভাগ দ্ব্যর্থহীনভাবে কাজ করে যাবে।’

সুখবাতার বাটবোল্ডের রাজনীতি
২০০০ সালে বাটবোল্ড ব্যবসা থেকে মঙ্গোলিয়ার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে মঙ্গোলিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি এক বছর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন।

২০০৯ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সানজা বায়ার সরে দাঁড়ালে সংসদ তাঁকে মঙ্গোলিয়ার ২৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে। ২০১২ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ শেষ হলেও এর পর থেকে এখনো পর্যন্ত তিনি দেশটির সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন