যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘ফ্রান্সিস স্কট কি’ সেতুটি একটি পণ্যবাহী জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভেঙে পড়ে। এ ঘটনার পর ডুবে যাওয়া একটি লাল রঙের পিকআপ ট্রাক থেকে দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সময় আটজন নির্মাণ শ্রমিক সেতুর ওপর মেরামতের কাজ করছিলেন। জাহাজটি যখন সেতুটিতে আঘাত করে তখন তারা পানিতে পড়ে যান।
শ্রমিকদের মধ্যে দুজনকে সেদিন উদ্ধার করা হলেও একজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। বাকি ছয়জনের জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং পানিতে পড়ে যাওয়ার পর, অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে ওই ছয় শ্রমিককে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। উদ্ধারকারী কর্মীরা এখনো কাজ করছেন এবং দুর্ঘটনা তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেতু ধসে নিহত ছয়জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নাম জানা গেছে। বুধবার এক প্রেস কনফারেন্সে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের পুলিশ আলেজান্দ্রো হার্নান্দেজ ফুয়েন্তেস (৩৫) এবং ডোরলিয়ান রনিয়াল ক্যাস্টিলো ক্যাব্রেরা (২৬) নামে দুই শ্রমিককে শনাক্ত করতে পেরেছে। ট্রাকের ভেতর থেকে ডুবুরিরা তাদের লাশ উদ্ধার করেন। নিহত ফুয়েন্তেস মূলত মেক্সিকো এবং ক্যাব্রেরা গুয়াতেমালার নাগরিক।
পুলিশ জানিয়েছে, পানির নিচে কংক্রিটের জঞ্জাল ও আবর্জনা পড়ে থাকায় ডুবুরিরা নিরাপদে সন্ধান চালাতে পারছেন না, নদীর পানিও অত্যন্ত ঠাণ্ডা। এই পরিস্থিতিতে তারা সোনার স্ক্যান ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, পানিতে পড়ে যাওয়া যানবাহনগুলোতে আরো মৃতদেহ থাকতে পারে।
অন্য দুই নিখোঁজ ব্যক্তি, যাদের মৃত বলে ধারণা করা হয়েছে, তাদের নামও জানা গেছে। তাদের একজন মিগেল লুনা এল সালভাদরের নাগরিক ও অপরজন মাইনর সুয়াসো সান্দোভাল হন্ডুরাসের নাগরিক।
কনটেইনারবাহী জাহাজটি ঘটনাস্থলেই দাঁড়িয়ে আছে। সেটিতে ১৫ লাখ গ্যালন জ্বালানি ও লুব্রিকেন্ট অয়েল আছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। জাহাজটিতে প্রায় ৪৭০০ মালবাহী কনটেইনার আছে, এগুলোর মধ্যে ৫৬টিতে বিপজ্জনক পদার্থ আছে।
বেশ কয়েকটি যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করছিল, ঠিক তখনই ২.৬ কিমি (১.৬ মাইল)-এর বেশি দীর্ঘ সেতুটিতে ধাক্কা দেয় কনটেইনারবোঝাই ওই জাহাজ। কর্মকর্তারা বলেছেন, জাহাজটিতে বৈদ্যুতিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল এবং দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই জাহাজ থেকে বিপৎকালীন ফোন করা হয়েছিল। শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সময় রাত প্রায় দেড়টায় একটি জাহাজ ৪৭ বছরের পুরনো সেতুরটির কলামে আঘাত করলে এটি ভেঙে পড়ে। তখন বেশ কয়েকটি যানবাহন পানিতে ডুবে যায়। সামুদ্রিক রাডারের তথ্য অনুসারে জাহাজটি রাত ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পোর্ট ব্রিজের টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ডালি নামের ওই কনটেইনার জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো যাচ্ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল সরকারি সংস্থা বলেছে, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার সময় ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। জাহাজের ক্রু এরপর সম্ভাব্য সংঘর্ষের বিষয়ে মেরিল্যান্ড পরিবহন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিল। মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেছেন, ‘ক্রুরা বিদ্যুৎ সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘সেতুর একটি কলামে ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজটি থেমে যায়।’ শিপিং কম্পানি সিনার্জি মেরিন গ্রুপ বিবিসিকে বলেছে, জাহাজটিতে ভারতীয় ক্রুসহ মোট ২২ জন লোক ছিল।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন