জিবিডেস্ক //
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ওয়াশিংটনের অনেক আরব মিত্র দামেস্কের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাত দিয়ে শনিবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে ফোনকলে কথা বলেছেন।
এসময় সিরিয়া এবং তার আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে আম্মানে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়ে আয়মান সাফাদির সঙ্গে আলোচনা করেন শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন স্পষ্ট করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আসাদ সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২২৫৪ রেজোলিউশনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, জাতিসংঘ-পরিচালিত রাজনৈতিক অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত অন্যদের ক্ষেত্রেও সম্পর্ক স্বাভাবিককরণকে সমর্থন করবে না ওয়াশিংটন।’
নিরাপত্তা পরিষদের ২০১৫ সালের সেই প্রস্তাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, সিরিয়া, মিশর, ইরাক, সৌদি আরব এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত সোমবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে বাশার আল-আসাদের সরকারকে আবারও আরব ব্লকে ফিরিয়ে আনতে আলোচনার জন্য বৈঠক করেছেন।
২০১১ সালের সহিংসতার সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের পর আরব লীগে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। সৌদি আরব-সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় রাষ্ট্র বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিতে শুরু করে।
সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার প্রধান মিত্র ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় সিরিয়ার অনেক অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান। গত কয়েক মাস ধরে সৌদি আরব বলেছে, বাশারকে বিচ্ছিন্ন করে কোনও কাজ হচ্ছে না।
পরে উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে রাজি হয়। এছাড়া সৌদি-সিরীয় সম্পর্ক পুনঃপ্রবর্তনকে আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর পদক্ষেপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মূলত টানা ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।
এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ইরান এবং রাশিয়ার সহায়তায় সিরিয়ার সরকার দেশের বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার সাথে সাথে কিছু আরব দেশ দামেস্কের প্রতি তাদের অবস্থান নরম করতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলেছে, তারা সংঘাতের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি ছাড়া বাশার আল-আসাদের বিষয়ে নিজেদের নীতি পরিবর্তন করবে না।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়া ও বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ উষ্ণ হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো দামেস্ক সফর করেন মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া গত মাসে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সিরিয়ার রাজধানী সফর করেন এবং বাশার আল-আসাদের সাথে দেখা করেন।
অবশ্য সিরীয় সরকার ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মিত্রদের নিরুৎসাহিত করছে, তারপরও দেশটি বাশার আল-আসাদের সরকারের কাছাকাছি যাওয়া দেশগুলোকে কোনও শাস্তি দেয়নি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলেও দামেস্কে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে এবং এক দশকেরও বেশি আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে রাষ্ট্রীয় আতিথ্য দেওয়া প্রথম আরব রাষ্ট্রও হয়েছে এই দেশটি।
 
                            
                             
                                                                                                
 
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                    
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন