জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
বিধবা ফাতেমা বেগমের অভাবের সংসার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে ছোট দুই সন্তানকে নিয়েই চলে তাঁর সংসারের চাকা। স্বামীর মৃত্যুর পর খড়ের ছাউনি আর ইকোড় বেতের তৈরি ছোট্ট ঘরে মেঘ-বৃষ্টি আর ঝড়-তুফানের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তিনি থেকেছেন দিনের পর দিন। কখনও কোনোদিন পাকাঘরে ঘুমানোর চিন্তা মাথায় আসেনি ফাতেমার। পাকাঘরে ঘুমানোটা তাঁর কাছে ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে ফাতেমার কাছে। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি পাকাঘর পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি সন্তানদের নিয়ে নতুন ঘরে উঠেছেন।
শুধু ফাতেমা নন, তাঁর মতো মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আরও ২৬২ অসচ্ছল ও দুস্থ পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়েছেন। এরমধ্যে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, রিকশা চালক, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা মহিলাও রয়েছেন। তাদের অনেকেই কখনও কোনো দিন কল্পনাও করেননি যে তারা পাকা ঘরে বসবাস করতে পারবেন। উপজেলা প্রশাসন সরকারের ৪টি প্রকল্পের অর্থায়নে গত ৩০ জুনের মধ্যে এসব ঘর নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। এতে সরকারের সর্বমোট ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।
উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫টি অসচ্ছল চা শ্রমিক পরিবারকে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের অর্থায়নে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে মডেল আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ৫টি পাকাঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ ৩ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ এর যার জমি আছে ঘর নাই, তার নিজ ভূমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় সর্বমোট ২২৩টি অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাছাইকৃতদের মধ্যে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, রিকশা চালক, স্বামী পরিত্যক্তা, অতিদরিদ্র মহিলাও রয়েছেন। একই মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলার আরো ২৪টি অসহায়-দরিদ্র পরিবারকে ৭১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৪০ টাকা ব্যয়ে ২৪টি পাকা বসতঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পৌরসভা ও উপজেলার দাসেরবাজার, বড়লেখা সদর, তালিমপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর, সুজানগর, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে দুস্থ পরিবারকে ১০টি সেমিপাকা বসতঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বসতঘর নির্মাণে ব্যয় হয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি সরেজমিনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর পাওয়া উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের খুটাউরা গ্রামের বিধবা ফাতেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে দুলাল আহমদ ঘরে বসেই বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করছে। এসময় কথা হয় ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী শ্রমিক নিয়ামত আলী মারা যাওয়ায় ২ সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা চালান। খড়ের ছাউনি আর ইকোড় বেতের বেড়ার ছোট্ট ঘরে ঝড়-বৃষ্টিতে কষ্টে করে থাকতেন। নানা দুর্যোগে আতঙ্কে এক মুহূর্তেও তিনি শান্তিতে ঘুমাননি। অভাবের কারণে কল্পনাও করেননি যে পাকাঘরে ঘুমাতে পারবেন। পাকাঘরে ঘুমানোটা তাঁর কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকাঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় এখন তিনি ছেলে-মেয়ে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। গ্রামীণ দরিদ্র গৃহহীন জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ প্রকল্পের আওতায় বিধবা ফাতেমা বেগমের মতো পাকা ঘর পাওয়া বিধবা মায়ারনি নেছা, বায়তুন নেছা, দিনমজুর আব্দুল জলিল নানা সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন বসতঘর উপহার দেওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান জানান, প্রত্যেকটি প্রকল্পের পাকাঘর নির্মাণের সকল উপকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঘরপ্রাপ্তদের তিনি তা ব্যবহারের অনুমতি দেন। কাজের সময় তিনি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং সমাজসেবা কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করায় প্রত্যেকটি ঘর অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও টেকসই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দৃষ্টিনন্দন এসব পাকাঘর পেয়ে দেিদ্র উপকারভোগীরা অত্যন্ত খুশি। সরকারিভাবে ২৬২টি পাকাঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় উপজেলার সহস্রাধিক দরিদ্র-অসচ্ছল মানুষ উন্নত আবাসনের আওতায় এসেছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন