তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না, হবে না কেউ এ যুদ্ধে জয়ী, হারবে শুধু'ই মানবতা

gbn

দে লো য়া র জা হি দ  ||

বিশ্বনেতারা রাশিয়াকে যুদ্ধ থামানোর জন্য একদিকে যেমন অনুরোধ করছেন অন্যদিকে হুমকি ধমকিও দিচ্ছেন। পুতিন যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে তার সুস্পষ্ট অবস্থান জানান, ইউক্রেনে যে লক্ষ্য নিয়ে অভিযান চালাচ্ছেন সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে।---যদি আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন হয় তাহলে ভালো কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক অভিযানেই তা অর্জন করার হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমরা বিভিন্ন বিভক্তির লোকেদের সংঘাতের মূল কারণগুলির উপর মনোনিবেশ করলে এটা স্পষ্ট হয় উঠে যে মিঃ পুতিন একটি পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন, রাশিয়ান বাহিনী রাজধানী কিয়েভ দখল করতে এবং সরকারকে উৎখাত করতে ইউক্রেনের গভীরে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছে। পূর্ব ইউক্রেনের আরও অঞ্চল সংযুক্ত করার চেষ্টা, ক্রিমিয়ার সাথে রাশিয়াকে যুক্ত করার জন্য একটি করিডোর তৈরি, ইউক্রেনীয় উপদ্বীপ মিঃ পুতিন ২০১৪ সালে দখল করেছিলেন। তারপর তিনি আবারো একটি যুদ্ধ করেছেন , যেখানে রাশিয়া ক্রেমলিন-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের "বাঁচবে" ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল ডনবাসে, অনুমিত ইউক্রেনীয় নৃশংসতা থেকে - এবং একই সময়ে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে অবনমিত করা যায়।

" যুদ্ধের ঘনঘটার মধ্যে সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে তা অনুমান করা সত্যিই কঠিন: যুদ্ধক্ষেত্রের নানা খবর, কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ, হতাহতদের স্বজনদের বিলাপ আর বাস্তুচ্যুতদের দুর্ভোগ - এগুলোর মধ্যে মানসিকভাবে দিশেহারা হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।---কিন্তু তার মধ্যেও বিশ্লেষকরা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছেন যে আগামী দিনগুলোতে ইউক্রেনের এই সংঘাত ঠিক কোন দিকে যেতে পারে। রাজনীতিবিদ আর সামরিক নেতারা এর মধ্যেই সম্ভাব্য কিছু চিত্রকল্প পরীক্ষা করে দেখছেন। তবে যুদ্ধ এমন একটা ব্যাপার যে ভবিষ্যতে কী হবে - তার পূর্বাভাস আস্থার সাথে দেয়া সহজ নয়।(বিবিসি)

ইউক্রেনে যুদ্ধের বৈশ্বিক যে পরিণতি শুরু হয়েছে তাতে মানুষের দুর্ভোগ, অর্থনৈতিক ধাক্কা এবং একটি ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস লক্ষণীয়। যুদ্ধে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া ইউক্রেনের সংঘাত মীমাংসার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে জড়াবে না। তিনি আরেকবার বিশ্বকে স্মরণ তিনি করিয়ে দিয়ে বলেন ‘আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চাই না’।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ১৩ মার্চ বলেছেন, বেইজিং ইউক্রেন ইস্যুত রাশিয়ার পক্ষ নিচ্ছে না বরং চীন সংলাপের মাধ্যমে চলমান ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।--- চীনা দূতাবাসের উদ্যোগে ঢাকার একটি হোটেলে ‘স্প্রিং ডায়ালগ উইথ চায়না’ শিরোনামে এক প্রেস ইভেন্টে এ মন্তব্য করেন।---রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন মনে করে সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ড -তার প্রতি সম্মান দেখানো ও রক্ষা করা উচিত এবং জাতিসংঘ সনদের লক্ষ্য ও মূলনীতিসমূহ আন্তরিকভাবে মেনে চলা উচিত। তিনি বলেন, চীনের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুস্পষ্ট এবং ইউক্রেন ইস্যুতেও সমানভাবে প্রযোজ্য।---রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই চীনের বন্ধু উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন এ সংকট সম্পর্কে আবেগপ্রবণ মনোভাব থেকে বিরত থেকে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছে।

‘বাংলাদেশ শান্তি চায়’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জিমিং বলেন, চীনও ঠিক তাই চায়।---সম্প্রতি ‘নিক্কেই এশিয়া’য় প্রকাশিত ‘চীন বাংলাদেশে ক্ষেপণাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ স্থাপনের পরিকল্পনায় ভারত চিন্তিত’ একটি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মন্তব্য চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন বাংলাদেশসহ কোনো বিদেশি ভূমিতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করবে না।’

রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট, অবকাঠামো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কোয়াড, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ও তাইওয়ান সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় তার চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।---রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জিমিং বলেন, বর্তমান মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা নিয়ে কিছু ‘গঠনমূলক’ মনোভাব দেখানোয় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।(সূত্রঃ ১৩ মার্চ, বাসস)
:
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনে একদিকে অব্যাহত লড়াই, অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধবিরতির আলোচনা - এ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও লিংকে মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া এক ভাষণে আবারও ইউক্রেনের আকাশে 'নো-ফ্লাই জোন' বলবৎ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

আমেরিকার কাছে আরো সাহায্য চেয়ে এক আবেগপূর্ণ ভাষণে মি. জেলেনস্কি তাকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের আহ্বান জানান - যাতে 'ইউক্রেনের আকাশকে রাশিয়া মৃত্যুর উৎসে পরিণত করতে না পারে'।---ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এক বৈঠক ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যোগ দেয়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ নো-ফ্লাই জোন আরোপের আহ্বান জানান।---নেটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন ইউক্রেনের সমর্থনে এই জোট ঐক্যবদ্ধ এবং সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে জরুরি সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দপ্তর বিবৃতিতে জানিয়েছে, এরদোগান পুতিনকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি যেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসেন।---প্রেসিডেন্টর দপ্তর আরও জানিয়েছে, এরদোগান পুতিনকে বলেছেন তাদের দুইজনের মধ্যে বৈঠকটি তুরস্ক আয়োজন করতে চায়। পুতিন চাইলে বৈঠকটি আঙ্কারা বা ইস্তানবুলে হতে পারে।---বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, এরদোগান পুতিনকে বলেছেন সবার আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন তিনি। যুদ্ধবিরতি হলে সমস্যা সমাধানের স্থায়ী পথ খুলে যাবে। তাছাড়া এরদোগান মানবিক করিডোর তৈরির ব্যাপারেও পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান, চীন ও ভারতের অবস্থান থেকে এখনো সংকট নিরসনে আশার আলো দেখতে পায় বোদ্ধামহল কারণ বিশ্ববাসী ভালো করেই জানেন যে হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না, হবে না কেউ এ যুদ্ধে জয়ী, যা হবে তা হলো এক প্রলম্বিত যুদ্ধ যেখানে হেরে যাবে মানবতা!

লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন