জীবনে সাফল্য পাওয়ার প্রথম নিয়ামক পরিশ্রম নয়, বরং প্রধান শর্ত মনের মতো বন্ধু পাওয়া
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
অমিত সম্ভাবনা, স্বপ্নের বিশালতা নষ্ট হয়ে যায় সাপোর্টিভ মানুষের অভাবে। পরিবার পাশে না দাঁড়ালে কেউ এগিয়ে চলতে পারে না। আরও স্পেসিফিক করে বললে, কর্তা-কর্ত্রী এবং স্ত্রী-স্বামীর পরস্পর পরস্পরের ভরসা না হলে, বিশ্বাস না জোগালে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই থামতে হয়। বড় অর্জনের জন্য, আকাশে চোখ রাখার জন্য এবং স্বপ্নের পাখা মেলবার জন্য একটা হাত, একটা কাঁধ এবং প্রেরণামূলক কিছু কথা খুব দরকারি। বিপদে পাশে থাকার, ভরসা দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার এবং সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়ার জন্য নিজস্ব মানুষকে স্বার্থহীন হতে হয়। সেক্রিফাইজিং মানসিকতার, কম্প্রোমাইজিং স্বভাবের মানুষ না পেলে জীবন জঘন্যরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়।
সর্বদা টেনে রাখা, স্বার্থের জন্য ব্যবহার করা এবং কেবল নিজের দিক দেখা মানুষকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। দুর্দিনে যারা খোঁচা দেয়, টক্সিসিটি বয়ে বেড়ায়—তাদের প্রভাব বিলোপ করতে পারলে জীবন ফুলের মতো ফুটতে পারে। বেকারত্বের দিনগুলোতে আপন মানুষ কথা শোনালে, সামর্থ্যের অসামর্থ্য নিয়ে খোঁচা দিলে এবং সোজা কথাও ত্যাড়া করে বললে তাদের ছায়া থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে একা থাকা, বিষাক্ত সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ করা দরকার হলেও শান্তির সাথে সন্ধি করতে হবে। যারা পাশে থাকে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা আবশ্যক। নত মাথা সহজেই সম্মানে আকাশ ছাড়িয়ে যায়।
যারা সাপোর্টিভ মানুষ পায়, তারা ভীষণ রকম ভাগ্যবান। সাদামাটা যোগ্যতা নিয়েও এরা বিশাল আলোকে উদ্ভাসিত হয়। ভরসা করার মানুষ থাকলে, বিশ্বাস কেউ পুষে রাখলে তারা তরতরিয়ে উন্নতি করে। তাদের ডাইনিংয়ে তরকারি সস্তা হতে পারে, বিছানা শক্ত হতে পারে, পোশাক মলিন হতে পারে—তবুও স্বস্তি-সুখ কম নয়। দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে যারা নাক ডেকে ঘুমাতে পারে, বিপদাপদকে ড্যামকেয়ার ভাব দেখাতে পারে কিংবা বিষণ্নতার বিপন্নতাকে দূরে রাখতে পারে—তাদের কেউ না কেউ সাপোর্টিং সত্তা আছে। যারা হাতটা টেনে হাতের মুঠোয় ধরে রাখে।
জীবনে সাফল্য পাওয়ার প্রথম নিয়ামক পরিশ্রম নয়, বরং প্রধান শর্ত মনের মতো বন্ধু পাওয়া। সে বন্ধু বাবা-ভাই, মা-বোন, স্ত্রী-সন্তান—যে কেউ হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল পুরুষদের মূল খুঁটি স্ত্রী। সফল নারীর প্রেরণাতে স্বামীর ছায়া না থাকলে সে সফলতা অনিষ্টতা ডেকে আনতে পারে। ঘর ভরা পরের মেলা মিললে দুঃখের অন্ত থাকে না। মানুষের জীবনে একেক সম্পর্কের মানুষের খুব অল্পদিনের ছায়া। সে ছায়া যদি পূর্ণতম হয়, তবে স্বপ্ন বাস্তবতার গলে মালা দেয়। সম্পর্কের মানুষ যদি ভুল ভূমিকা পালন করে, তবে জীবন জীবদ্দশাতেই নরকযন্ত্রণায় ভোগে। রাত জেগে কান্না ছাড়া, আড়ালে অশ্রুর বন্যা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না।
কাছের কিংবা দূরের—মানুষের জন্য সাপোর্টিভ সত্তায় রূপান্তর হওয়া জরুরি। আপন মানুষকে আগলে রাখা, সঠিক পথ দেখানো খুব জরুরি। প্রয়োজনের সময় পাশে থাকলে তারা অন্তরে স্থান পায়। কাউকে জিতিয়ে দিতে শরীরের পাশে থাকার চেয়ে মনের মধ্যে থাকা উচিত। মানুষ যত্ন পেলে মন পরিতৃপ্ত হয়। দু'বেলা ভুখা থাকা সহ্য করা যায়, কিন্তু খারাপ আচরণ, কটু কথা ও গরম কণ্ঠ সহ্যের বাইরে শুধু নয়, বরং সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে দেয়। শুধু ঝুলে থাকার চেয়ে না থাকা বেহতর। থাকতে হলে পূর্ণতা নিয়ে থাকাতেই কৃতিত্ব ও মঙ্গল। মানুষ সবকিছু ছেড়ে জঙ্গলে কাটাতে পারে না। তবে মানুষের ব্যবহারে কখনো কখনো কাউকে কাউকে ভীষণভাবে একা হয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন