জান্নাতি ফুলগুলো এখন কী স্বপ্ন দেখছে? মা-বাবার আর্তি ওরা শুনতে পাচ্ছে?
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
ভাবতে পারছেন, শহীদ শিশুগুলো দুপুরের ভাত খেয়ে এখন বাসায় ঘুমাতো, খেলতো কিংবা পড়তে বসতো। আহত ফুলগুলো মায়ের কাছে আজ স্কুলের গল্প বলতো। কেউ কেউ বাবার সাথে বিকেলে ঘুরতে বের হতো। অথচ কত সহজেই নাই হয়ে গেলো। দুঃস্বপ্নেও কেউ ভেবেছিল, এমন কিছু ঘটতে চলেছে। ছুটির ঘন্টার শব্দ শোনার আগেই জীবন অনেককে ছুটি দিয়ে দিল। আহতরা মৃত্যু দেখে এসেছে। জান্নাতের ফুলগুলো ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে কোন?
যাদের কলিজার টুকরো হারিয়ে গেছে চিরতরে তারা কী করে সহ্য করছে? স্কুল গেটে যে অভিভাবক অপেক্ষায় ছিল সন্তানের সেই অপেক্ষা চিরতরে কারো কারো জন্য স্থায়ী হয়ে গেছে। অথচ কয়েক মুহূর্ত আগেও বন্ধুর সাথে খুঁনসুটিতে মেতে ছিল, শিক্ষককে আজও ক্লাসে প্রশ্ন করেছিল কিংবা সহপাঠীকে বলেছিল হোমওয়ার্ক করতে ভুল করবে না- আহা জীবন। কত সুরক্ষিত স্থানেও কত সহজেই পাখি উড়াল দিতে পারে। মৃত্যুর মত এমন অনিশ্চিত পয়গাম কত বড় শূন্যতা তৈরি করে গেলে।
আহারে মা নিজেকে নিজে কী বুঝ দেবেন! যে সন্তান আজ স্কুলে যেতে চায়নি অথচ মা জোর করে পাঠিয়েছেন! স্কুল যাওয়ার বদলে একটা বায়না পূরণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন! সে মা নিজেকে আর কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেন না! নানার আপত্তি সত্ত্বেও নাতিকে বড় স্কুলে দিয়েছিলেন যে বাবা তিনি কী করে ক্ষমা করবেন নিজেকে? যাদের কলিজা ছিঁড়ে গেছে তাদের ভেতরে আকাশ-পাতাল একাকার হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষতি অপূরণীয়। ধৈর্য ধারণ করতে বলবো কাকে? সইতে পারছি না তো নিজেই। কলিজা মনে হয় পাথর হয়ে গেছে।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় আগুনে পুড়ে মরলে। যাদের শরীরের অধিকাংশ পুড়ে গেছে তারা কী করে সহ্য করছে? চুলার আগুনে সামান্য তাপে দগ্ধ হলেই তা কলিজা পর্যন্ত অনুভূত হয় অথচ কত শত সেলসিয়াসের ভয়ঙ্কর তাপে দগ্ধ হয়েছে প্রাণগুলো। পরিধেয় পোশাক পুড়ে গেছে শরীরে, স্কুল ব্যাগ ঝলসে গেছে তাপে- কী করে সহ্য করেছে কবুতরগুলো? ভাবতেই তো আঁৎকে উঠছি। আল্লাহ ধৈর্য দাও।
জান্নাতি ফুলগুলো এখন কী স্বপ্ন দেখছে? মা-বাবার আর্তি ওরা শুনতে পাচ্ছে? দেশবাসীর দোয়া ওদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে? আহারে, জীবনটা যখন বের হয়ে গেছে তখন কলিজাগুলো করেছে কেমন? ইস! আজ যদি স্কুল ১০ মিনিট আগে ছুটি হতো! মানুষের মৃত্যুকে এড়ানোর সাধ্য নাই- তাই বলে এভাবে? কোন দোষ না করেও এমন বীভৎ মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় কেন? কেন? সন্তানহারা মায়ের, কলিজা হারানো বাবার জন্য দুনিয়ার কোনো ভাষাতেই কোনই সান্ত্বনা যথেষ্ট নয়। যে মা এখনো সন্তানের খোঁজ পায়নি কিংবা যার চোখের ফুল দগ্ধ শরীরে কাতরাচ্ছে- তাদের ধৈর্য বাড়ুক। মনটা অল্প সময়ের জন্য হলেও শক্ত হোক। অন্তত ওরা বেঁচে যাক।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন