সম্মুখে সমাজ, অন্তরে শূন্যতা

gbn

সমাজ কী বলবে, সামাজিকতা কোন গণ্ডিতে চলবে

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।  

সমাজকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আত্মাকে বঞ্চিত করছি। দেখে যেন মনে হয়, আত্মসুখী নয় বরং সমাজকে সুখী করার দায় পড়েছে। যে সমাজ ঘুণধরা, সে সমাজের দাসত্বে অনেকেই হারিয়ে ফেলছে নিজস্বতা, জলাঞ্জলি দিচ্ছে স্বকীয়তা এবং চাপা পড়ছে অসুস্থতার প্রভুত্বে।

 

ইচ্ছা-অনিচ্ছার কবর হচ্ছে অজান্তে।

সমাজ কী বলবে, সামাজিকতা কোন গণ্ডিতে চলবে—এইসবের সাথে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে নিজের জীবনটা পরের ইচ্ছামতো চলে কিংবা চলতে বাধ্য হয়। অথচ এই সমাজ দুর্নীতিবাজের জয়ধ্বনি করে, চরিত্রহীনের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যস্ত থাকে। কনে পক্ষকে বলে বর পক্ষের সকল দাবিদাওয়া প্রশ্ন ছাড়াই পূরণ করো!

 

নিজের জন্য বাঁচা উচিত। কারো দাস হলে প্রভুর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে হবে, তাও ধন্যবাদ মিলবে না। স্বার্থের দুনিয়ায় দুর্বল সবসময়ই পণ্য। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, বিশ্বাসকে দমিয়ে রেখে কাজ করলে তাতে কারো বাহবা মিলতে পারে, কিন্তু সুখ ও স্বস্তি মিলবে না।

 

মনের কথা শুনতে হবে, তবে বিবেককে রাখতে হবে বিচারকের আসনে। কারো মর্জি যদি ইনসাফের মানদণ্ড হয় তবে সেখানে বিশ্বাস বাঁচে না। সবকিছু উজাড় করে দিয়েও অনেকের মন পাওয়া যায় না। কাজেই নিজের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিন। অন্তত নিজের কিছু শখ ও স্বপ্ন পূরণ করুন। কেবল অন্যের ভরসাতে থাকলে অপূর্ণ রয়ে যাবে জীবনের নানাদিক।

 

যে সমাজ বেকারত্বকে গালাগাল করে এবং শ্রমিকদের কাজকে খাটো ভাবে, সে সমাজ থেকে ন্যায্যতা আশা করতে পারেন না। ভাসা-ভাসা জ্ঞান নিয়ে যারা বিশেষজ্ঞ আসনে, তারা সবার চিকিৎসা করতে পারে কিন্তু নিজের সব সমস্যা দগদগে। সফলতা বলতে যারা অর্থ-সম্পদকে বোঝে, ক্ষমতা বলতে যারা দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়—তারাই এই সমাজের নেতৃত্বে।

 

এটা ভুল সময়ের শাস্তি নয়, বরং ভবিষ্যতে শুদ্ধ হওয়ার সূচনা পর্ব। যে যত বাড়বে, তার পতন তত গভীর হবে। কারো মন্তব্যে তোমার গন্তব্যের গতিপথ পাল্টে গেলে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী বলার ভুল করো না।

 

সমালোচনা-নিন্দা সামলেই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হবে। ভুল মানুষকে আইডল হিসেবে বাছাই করলে জীবনটা ভুলে ভুলে যাবে। মধু কথায় নয়, বরং কথার সাথে কাজের মিল দেখে নেতা নির্ধারণ করতে হবে। অপসিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তুমি একাও হতে পারো, তবে কৌশলী হবে।

 

অন্যায়ের সাথে আপোস করা মানে লাখো অন্যায়ের গোড়াপত্তন করা। সব পরিবেশে সত্য বলা জরুরি নয় কিংবা সুযোগও নাই, কিন্তু মিথ্যার সাথে কখনোই সহমত হওয়া যাবে না। ভুল মানুষ জীবনে আসবে, কিন্তু কেউ যাতে ক্ষতি করে যেতে না পারে সেটুকু সচেতন থাকবে। প্রলোভন সত্যের মতো শোনায়, মিথ্যা শোনাতে পারে কবিতার মতো। তোমার মধ্যে বিবেক, বোধ এবং বাছাইয়ের ক্ষমতা যাতে চিরন্তন থাকে।

 

সুখের চেয়ে দুঃখের বোঝা ভারী নয়, যদি দুঃখটাও যৌক্তিক হয়। বৌদ্ধিক কথার পক্ষে কম মানুষ থাকলেও তোমার মতামত সে পক্ষে রেখো। সত্যের দল ধীরে ধীরে লম্বা হয়। মিথ্যাকে চাকচিক্য মনে হতে পারে, কিন্তু বাতিলপন্থীরা সবসময়ই মানসিকভাবে দুর্বল।

 

নিজেকে প্রাধান্য দিও। তবে সুযোগে কিংবা ক্ষমতায় কখনোই দানব হয়ে উঠবে না। মনে রেখো, সম্মুখে প্রশংসার চেয়ে আড়ালে প্রশংসা কোটি গুণ উত্তম। জীবনে যত পারো দোয়া, শুভকামনা ও মঙ্গলালেখ্য কামাই করো। নিজেকে বিক্রি করে, বোধ বন্ধক রেখে কখনো জীবিকা অর্জনে যেও না। বাঁচার দিনগুলোতে মেরুদণ্ড যাতে সাথেই থাকে—খেয়াল রেখো। জনসন্তুষ্টির নামে আত্মপ্রবঞ্চনার দিনলিপি যাতে দীর্ঘায়িত না করি- সাবধান।


 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন