বৌদ্ধ ভিক্ষুদের যৌনতার ফাঁদে ফেলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। এরপর সেই সব ছবি ও ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বাগিয়ে নিতেন কোটি কোটি। সবার অলক্ষ্যে বছরের পর বছর ধরে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে থাই পুলিশ।
নিষিদ্ধ যৌনতা আর অভিনব চাঁদাবাজির এই ঘটনা পুরো থাইল্যান্ড কাঁপিয়ে দিয়েছে।
কারণ যাদের অপার ভক্তি ও সম্মানের চোখে দেখা হয়, সেই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাই জড়িয়ে গেছেন এই কেলেঙ্কারিতে।
দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদন মতে, গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) উইলাওয়ান এমসাওয়াত নামে ৩০ বছর বয়সী ওই তরুণীকে রাজধানী ব্যাংককের নোনথাবুরি এলাকায় তার বিলাসবহুল বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ৮০ হাজারেরও বেশি ছবি ও ভিডিও। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে থাই পুলিশ জানায় ‘মিসেস গলফ’ নামে পরিচিত ওই তরুণী কমপক্ষে ৯ জন ভিক্ষুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন।
পুলিশের ধারণা, গত তিন বছরে মিসেস গলফ ভিক্ষুদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর এখন মিসেস গলফকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে থাইল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছে, বৌদ্ধভিক্ষুরাও তাদের ব্রহ্মচর্যের ব্রত লঙ্ঘন করে ওই তরুণীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন। তরুণীর শয্যাসঙ্গী হওয়ার খেসারতও দিতে হয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে।
গোপনে তোলা ভিক্ষুদের সঙ্গমের মুহূর্তের হাজার হাজার ছবি ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছিলেন উইলাওয়ান। প্রথমে তিনি ভিক্ষুদের প্রেমের ফাঁদে জড়াতেন। তার পর নিয়ে যেতেন শয্যায়। সঙ্গমের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়ে যেত গোপনে। পরে সেই ছবিকে হাতিয়ার করে ভিক্ষুদের ব্ল্যাকমেল করে অর্থ রোজগার করতেন তরুণী।
এই ভাবে ভয় দেখিয়ে ৯ জনের থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৩ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা তরুণীর বাড়িতে বৌদ্ধভিক্ষুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকার ৮০ হাজারেরও বেশি ছবি এবং ভিডিও খুঁজে পেয়েছে।
সামান্য সরকারি ভাতা ও জনগণের দানের উপর নির্ভর করা বৌদ্ধভিক্ষুরা এই বিপুল টাকা পেতেন কোথা থেকে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরো একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। তরুণীর পকেটে ঢোকা ১৪৩ কোটি টাকার পুরোটাই এসেছে মঠের দানবাক্স ও অ্যাকাউন্ট থেকে। যৌনতৃপ্তির মূল্য চোকাতে মঠের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জনগণের দানের টাকা নয়-ছয় করেছেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা, এমনটাই তদন্তে উঠে এসেছে।
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন মঠের ৯ জন ভিক্ষুর থেকে গেরুয়া পোশাক পরার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত সন্ন্যাসীদের কয়েকজন উচ্চপদস্থ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সরকার আইন লঙ্ঘনকারী সন্ন্যাসীদের জরিমানাসহ জেলে পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন।
বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ রাজা নিজের আসন্ন ৭৩তম জন্মদিনের উৎসবে যোগদান করতে আসা ৮০ জনেরও বেশি সন্ন্যাসীর নিমন্ত্রণ বাতিল করে দিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। ৮১ জন ভিক্ষুকে উচ্চতর উপাধি দেওয়ার যে রাজকীয় আদেশ জারি করেছিলেন তাও প্রত্যাহার করেছেন তিনি।
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন উইলাওয়ানও। পুলিশের কাছে জানান যে, সন্ন্যাসীরা তাকে এক দিনেই ৯০ হাজার ডলার পর্যন্ত দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি কেনাকাটা করেছেন। সন্ন্যাসীদের ভয় দেখিয়ে যে টাকা আদায় হত তার বড় একটি অংশ দিয়ে ওই তরুণী অনলাইনে জুয়া খেলতেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
এই কেলেঙ্কারি জনসমক্ষে আসার ফলে তাই বৌদ্ধধর্মের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, তারা সন্ন্যাসীদের নিয়মকানুন পর্যালোচনা করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করবে। থাইল্যান্ডে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বৌদ্ধ। সেখানে ভিক্ষুরা অত্যন্ত সম্মানিত। কিন্তু ভিক্ষুদের এই অসদাচরণের বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।
বৌদ্ধসঙ্ঘের নিয়মানুযায়ী সন্ন্যাসীরা ২২৭টি কঠোর নিয়ম মেনে চলেন। হস্তমৈথুন, নারীদের স্পর্শ, এমনকি তাদের কাছ থেকে সরাসরি জিনিসপত্র ধরাও নিষিদ্ধ ব্রহ্মচর্য পালনকারীদের। ভিক্ষুরা সাধারণত দান এবং মাসিক ১৭০ ডলারের সামান্য ভাতার ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করেন। এ ছাড়া বক্তৃতা, আশীর্বাদ এবং অনুষ্ঠানের জন্য সামান্য কিছু অর্থ পান তারা।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন