জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউরা গ্রামে গাছ থেকে আম পাড়তে রাজি না হওয়ায় ১২ বছরের কিশোর রিংকন বিশ্বাসকে হত্যার ঘটনায় জড়িত মাছের খামারের দুই কর্মচারীকে শনিবার (১৯ জুলাই) সিলেট নগরীর কদমতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে সিলেট পিবিআই জেলা।
গ্রেফতাররা হলেন- পাবেল ওরফে তাবেল (২১) ও জহিরুল ইসলাম (২৩)। উভয়েই আদালতে ফৌজদারি কার্য বিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন রোববার(২০ জুলাই) রাত ১০টার দিকে জানান, ২০২৪ সালের ২২ জুন স্থানীয় লুলু মেম্বারের মাছের খামারে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় কিশোর রিংকন বিশ্বাসের। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রভাবশালী সাবেক মেম্বার লুলু মিয়া গং এর চাপে নিহতের বাবা শ্রীকান্ত বিশ্বাস সেদিনই ছেলেকে মুখাগ্নি শেষে সমাধিস্থ করেন। ভিকটিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা স্বত্ত্বেও সাবেক মেম্বার ও তার পক্ষের লোকজনের প্রভাবে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমের মৃত দেহের ছবি উত্তোলন করতে এবং থানায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন।
সংবাদপত্রে ঘটনার খবর প্রকাশিত হলে ঘটনার দুইদিন পর ২৪ জুন, ২০২৪ তারিখে নিহতের পিতা শ্রীকান্ত বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। থানা পুলিশ গত বছরের ২৭ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শ্মশান হতে নিহতের লাশ উত্তোলনসহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই ঘটনায় গত ১৬ জুলাই ২০২৪ খ্রি: তারিখ নিহতের মা বাসন্তি রানী বাদি হয়ে লুলু মেম্বারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা নম্বর-১৪২/২৪, তারিখ: ১৬/০৭/২৪, ধারা: ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
আদালত জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে উক্ত সিআর মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর গত বছরের ১৫ অক্টোবর থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলার তদন্তে ভিকটিম রিংকন বিশ্বাস গাছে ওঠে আম পাড়তে গিয়ে পা ফসকে গাছের নিচে পুকুরে থাকা গোবরের মধ্যে মাথা নিচের দিকে উবুড় করে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে রিপোর্ট দাখিল করে এবং সিআর পেনাল কোড মামলাটি তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
নিহতের মা বাসন্তি রানী থানা পুলিশের সিআর মামলায় দাখিলকৃত চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন দিলে গত বছরের ৫ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানার মামলা নম্বর-০৯ তারিখ-১২/১১/২০২৪ ইং ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন এবং এক মাসের মধেই মামলাটির তদন্ত শেষ করেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থানা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।
তবে পুনরায় বাদির নারাজির প্রেক্ষিতে গত ২৩ মার্চ ২০২৫ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের সিলেট জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই সিলেট জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। এসআই মো: তারিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই ২০২৫ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আসামি পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং এজাহার নামীয় আসামি জহিরুল ইসলামকে (২৩) সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পরে তাদেরকে পুলিশ রিমান্ডে আনেন।
পিবিআই’র জিজ্ঞাসাবাদে এই দুজন আসামি জানায়, ঘটনার দিন দুপুর অনুমান ১২:৩৫ টার সময় লুলু মেম্বারের খামারের গোয়াল ঘরের পাশের আম গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য কর্মচারী রিংকন বিশ্বাসকে আসামিরা আম পাড়তে বলে। গাছে বিদ্যুতের তার থাকায় রিংকন গাছে উঠতে রাজি হয় না। আসামিরা একাধিকবার বললেও রিংকন রাজি না হওয়ায় আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে রিংকনকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে এবং খামারের গোয়ালের পাশে গোবরের ঢিবিতে রিংকন বিশ্বাসের মুখ ও মাথা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা এই হত্যাকে গাছ থেকে পড়ে গোবরের পানিতে ডুবে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু মর্মে প্রচার করে। এবং প্রভাবশালী মহলের চাপে তাৎক্ষণিক মৃতকে দাহ করে সমাধিস্থ করা হয়।
গত ১৯ জুলাই (শনিবার) আসামি পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং এজাহার নামীয় আসামি জহিরুল ইসলামকে (২৩) আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন