শেখ সাইফুল ইসলাম কবির:বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় গ্রীষ্মের শুরুতেই বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চারদিকে সুপেয় পানির জন্য এক প্রকার হাহাকার চলছে। পানির জন্য কলসি হাতে দূর-দূরান্তে ছুটছে মানুষ। অনেক এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করছে। ফলে সচেতন মহল পানি বাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো থেকে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ টিউবওয়েলে অতিমাত্রায় আর্সেনিক ও নদী-খাল, পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মের শুরুতেই পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই দূষিত পানি পান করে জীবন ধারণ করছেন। ফলে ডাইরিয়া, আমাশয়, টাইফেয়ডসহ নানা পানিবাহী রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।এ ব্যাপারে কুরমুনি গ্রামের দেবাশিষ বিশ্বাস, গরীবপুরের গোলক মন্ডল, সুরশাইলের আকবর আলী, সঞ্জয় মালাকারসহ অনেকে জানান, পানির অপর নাম জীবন হলেও এই পানি এখন এ উপজেলার মানুষের বিপদ ডেকে আনছে। চারদিকে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে। পানির জন্য কলসি হাতে দূর-দূরান্তে ছুটছে মানুষ। সুপেয় পানির সংকট এ অঞ্চলের মানুষেদের নিত্যদিনের সমস্যা। গত কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা চলে এলেও এটি স্থায়ী সমাধানের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেও তাদের অভিযোগ।
তারা আরও জানান, এলাকার বেশিরভাগ নদী-খাল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় কোথাও গোসল এবং খাবারের পানি মিলছে না। ফলে লোকজনকে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েল ও নোংড়া পুকুরের পানি পান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষজন এ পানি পান করে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছেন। এছাড়া এখানকার বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে সুপেয় পানির অভাবে বিভিন্ন পুকুর ও খালের দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। যেটি পান করার অযোগ্য। বিভিন্ন লোক ভ্যানযোগে পুকুর থেকে এসব পানি তুলে এনে বিক্রি করছে হোটেল-রেস্তরাঁয়। পানির এ প্রকট সমস্যায় লোকজন দিশাহারা হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় জনসাধারণ ও বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে পন্ডস স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ), রেইন ওয়াটার হার্বেস্টিং (আরডব্লিউএইচ) বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য সহায়তা করলেও তার পরিমান সীমিত। যে সব পুকুরে পিএসএফ স্থাপন করা হয়েছে, তার অধিকাংশ পুকুরে বর্তমানে পানি কম থাকায় এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাটির প্রায় ৯০০ ফুট গভীর ভেদ করে বালুর যে স্তর পাওয়া যাচ্ছে তাতে লবণাক্ততা বেশি। মাটির নিচে সুপেয় পানির আধার পেতে কষ্ট হয়। নলকূপের পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক।
চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন জানান, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি পাস হলে মধুমতী থেকে পানি এনে এলাকায় সাপ্লাই করা যেত।
তবে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কামাল হোসেন মুফতি জানান, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডাইরিয়া, আমাশয়, টাইফেয়ডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন