জালালুর রহমান,জুড়ী(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধঃ
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে অবাধে টিলা কাটার লিপ্ত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে,অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটার
ফলে ওই ১১ গ্রামের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে গড়ে ওঠা ২ শতাধিক বাড়িঘর ভারী বর্ষণ কিংবা ভূকম্পনে টিলা ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে,
উপজেলা সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর,মনতৈল,চম্পকলতা, বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সুবহান এর ছেলে মঈন উদ্দিন (৪৩),কালীনগর গ্রামে খান বাহাদুর ওয়াক্ফ এস্টেট ও সরকারি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত উঁচু টিলাগুলো, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর,কৃষ্ণনগর,আমতৈল,গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের জামকান্দি,কচুরগুল, লাঠিটিলা,সাগরনাল ইউনিয়নের হাফিজি দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটি ভূমিখেকো চক্র অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসি কর্তৃক অভিযোগ করে বলেন,আজব মিয়ার পুত্র জমির মিয়া,মৃত চান মিয়ার পুত্র খলিল মিয়া,হাফিজি বাজার দক্ষিণ বড়ডহর।মৃত বটুল মিস্তিরির পুত্র আমিন মিস্ত্রি,মৃত মনাফ এর পুত্র আমির উদ্দীন,আব্দুল নুর এর পুত্র সুমন মিয়া,হাফিজি দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের মৃত বরপাইয়ার পুত্র
আব্দুল মালিক ও মৃত আব্দুল খালিকের পুত্র আজিদ মিয়া, এবং ওই গ্রামের আশপাশের এলাকার হারুনুর রশিদ,
মোস্তফা হোসেন, সেলু মিয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন মাটি ব্যাবসায়ি অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রির সাথে জড়িত।
প্রতিদিন এসব এলাকার বিভিন্ন টিলা থেকে প্রতি ট্রাক মাটি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।ওই চক্রের লোকজন দীর্ঘ এক যুগ ধরে কালী
নগর, হাফিজি দক্ষিন বড়ডহর গ্রামের বিভিন্ন টিলাকেটে গভীর গর্ত করে চুনামাটি সংগ্রহ করে
পলিথিনের বস্তায় ভরে সিরামিক সামগ্রী তৈরির জন্য রাজধানী শহর ঢাকায় পাচার করে আসছে। ওই দিন পরিদর্শনে টিলার পাদদেশে ৩শতাধিক বস্তা চুনামাটি
স্তুপ অবস্থায় দেখে গেছে। ওই গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাটি কাটার কারণে এসব ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে অপরিকল্পিতভাবে ২শতাধিক বাড়ি
ঘর গড়ে উঠেছে এবং যে কোনো সময় ধসে পড়ে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে।
এসব বাড়ি ঘরে বসবাসকারী মনতৈল গ্রামের অহিদ মিয়া (৪৭), জায়েদ আলী (৫৪), চম্পকলতা গ্রামের আরমান আলী (৪৫), আব্দুল হাসিম (৪৮), মোহাম্মদ
নগরের রফিক মিয়া (৫২), লোকমান আহমদ (৪৯) সহ আরো অনেকেই জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
কাছ থেকে তারা ভ‚মিহীন খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে তাতে বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। তারা আরো
বলেন, সামনে আসছে বর্ষা মৌসুম। ওই সময় যে কোনো মুহুর্তে টিলা ধসে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পাড়ে। তারা দুঃখের সাথে জানান, ১৯৯১ ও ৯২ সালে টিলা কাটার সময় কালিনগর গ্রামে মাটি চাপায় ২
শ্রমিক নিহত হন। তৎকালীন ও পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঝে মধ্যে টিলা কাটা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই ভ
‚মিখেকো চক্রটি আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। জায়ফরনগর ইউনিয়ন সহকারি ভ‚মি কর্মকর্তা
রকিব আলী বলেন, খাঁন বাহাদুর ওয়াক্ফ এস্টেট ও সরাকরি খাস ভ‚মি অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন টিলায় অতীতে বিভিন্ন সময়ে ৩২ জন ভ‚মিহীনের মধ্যে ১০
শতক করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। অবৈধ টিলা কাটা বন্দে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জুড়ী টি এন খানম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ
অরুন চন্দ্র দাস বলেন, অবাধে টিলা কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকল্পে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুড়ীতে টিলা কাটার বিষয়টি সততা পাই তাহলে উনাদেরকে মোবাইল কোর্টের আওতায় তাদেরকে জরিপানা করব।তবে,আমি
খোঁজ নিয়ে দেখবো। জুড়ী উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান রুহুল ইসলাম জুড়ীতে টিলা কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,তথ্য পাওয়া মাত্র তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন