উপকূলবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে  সুন্দরবনে ৮৮টি পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে

gbn

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির: বাগেরহাটের সুন্দরবনের বাঘ ও মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠাপানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে খনন ও পুনঃখনন করা হচ্ছে ৮৮টি পুকুর। এসব পুকুর বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি সুন্দরবনে থাকা বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বনজীবী ও পর্যটকদের উপকূলবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাবে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়ানে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ ভাগ। দিনে ২ বার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া লবণাক্ত স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার।

সংরক্ষিত এই বনের ৩টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা।

সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে বাঘ ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিং কোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। ইতিধ্যেই সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে ১ প্রজাতির বন্য মহিষ, ২ প্রজাতির হরিণ, ২ প্রজাতির গন্ডার ও ১ প্রজাতির মিঠা পানির কুমির।

গোটা সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জর ১৮টি রাজস্ব অফিস, ৫৬টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমিও।

সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

এছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের এইজল ভাগে ছোট বড় ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খাল রয়েছে।

৮৮টি পুকুরের মধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের দুবলায় দুটি ও বগীতে নতুন করে তিনটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। এই রেঞ্জের ২৪টি পুকুর পুনঃখননের মধ্যে কচিখালী অভয়ারণ্যে চারটি, কটকা অভয়ারণ্যে চারটি, দুবলায় এলাকায় তিনটি, শরণখোলা রেঞ্জ সদরে দুটি ও দাশেরভারানীতে দুটি।

এছাড়া একটি করে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে ডুমুরিয়া, চরখালী, তেরাবেকা, চান্দেশ্বর, শাপলা, ভোলা, শেলারচর, কোকিলমুনি ও সুপতিতে। চাঁপাই রেঞ্জে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে ২৬টি। এর মধ্যে রয়েছে ধানসাগরে তিনটি, গুলিশাখালীতে তিনটি ও আমুরবুনিয়ায় দুটি।

একটি করে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে চাঁদপাই, ঢাংমারী, লাউডোপ, জোংড়া, ঘাগড়ামারী, নাংলী, হরিণটানা, কলমতেজী, তাম্বুলবুনিয়া, জিউধরা, বরইতলা, কাটাখালী, শুয়ারমারা, মরাপশুর, বৈদ্যমারী, আন্ধারমানিক, হারবাড়িয়া, নন্দবালা ও চরাপুটিয়ায়।

এছাড়া পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে একটি নতুন পুকুর খনন ও ৩৪টি পুকুর পুনঃখনন এবং ৩০টি পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণ করা হবে। এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনের প্রাণ হচ্ছে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী। সুন্দরবনের মধ্যে থাকা পুকুরগুলো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীগুলো সুপেয় পানি সংকটের মধ্যে ছিল। এই অবস্থায় বন বিভাগ সুন্দরবনের বাঘ ও মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে ৪টি নতুন পুকুর খনন ও ৮৪ পুকুর পুনঃখনন করাসহ ৭০টি পুকুরে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ঘাট।

তিনি আরও জানান, বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকাগুলোতে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ফলে বন্যপ্রাণীগুলো দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা মেটাবে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন