ইন্ডিজেন্ট মুসলিম বুরিয়াল ফাণ্ডের শতবর্ষ উদযাপন : ব্রিটেনের প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ

gbn

জিবি নিউজ ডেস্ক ||

 ইন্ডিজেন্ট মুসলিম বুরিয়াল ফান্ড (আইএমবিএফ) প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন করলো ইস্ট লন্ডন মসজিদ। ২৬ নভেম্বর বুধবার ইএলএম কানেক্স এর উদ্যোগে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ, আর্কাইভ বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং কমিউনিটির বিশিষ্টজন অংশগ্রহণ করেন। এই সংগঠনটি একশ' বছর ধরে ব্রিটেনে দরিদ্র মুসলমানদের মৃত্যুর পর জানাজা ও দাফন কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। বক্তারা আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত নথি, ঐতিহাসিক গবেষণা এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তহবিলের সূচনা এবং আজও কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সভাপতির বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও মারিয়ম সেন্টারের প্রোগ্রামস প্রধান সুফিয়া আলম। তিনি বলেন, আজকের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য শতবছর আগে মুসলিম বুরিয়াল ফান্ড প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে দেখা। তিনি ব্রিটেনে মুসলমানদের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস সংরক্ষণের গুরুত্বও তুলে ধরেন । তিনি বলেন মুসিলম বুরিয়াল ফান্ড-এর রেকর্ডগুলো সেই বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যার মাধ্যমে জানা যায়, প্রথমদিকের মুসলমানদের সংগ্রাম কেমন ছিল, তারা কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং কারা আমাদের কমিউনিটির ভিত্তি গড়েছিলেন।

ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, মুসলমানরা সবসময় একে অপরকে সহায়তা করার দায়িত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এসেছে । তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদের স্থায়ী ভবন হওয়ার অনেক আগে যারা ব্রিটিশ মুসলিম কমিউনিটির মূল প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছিলেন, সেই প্রথমদিকের মানুষদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু তাদের কাজের প্রশংসা করছিনা, তাদের কাজকে আমরা এগিয়ে নিচ্ছি এবং পরবর্তী প্রজন্মের মুসলমানদের সহায়তা করছি । একে অপরের খোঁজ-খবর নেওয়া ও যত্ন করা আমাদের পরিচয়ের অন্যতম মূল বিষয়।

অনলাইনে যোগ দিয়ে ইন্ডিজেন্ট মুসলিম ফান্ড ট্রাস্টের চেয়ার ব্যারিস্টার ইসলাম খান ফান্ডের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, এই সংগঠনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯২৭ সালে শুরু হলেও প্রথম কোনো মানুষের দাফনের সহায়তা দেওয়া হয় ১৯২৫ সালে। তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেসকল দাতা ও স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন তার অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বর্তমান চ্যালেঞ্জ- যেমন কবরস্থানের তীব্র সংকট, নিসঙ্গ মারা যাওয়া বা নতুন মুসলিমদের বিষয়ে আলোকপাত করেন । ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে তিনি মুসলিম প্রবীণদের জন্য আবাসিক কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন।

ব্যাপক আর্কাইভ গবেষণার ভিত্তিতে নাবিল মোহাম্মদ মুসলিম ব্যারিয়াল ফান্ডের সূচনাকে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠিত মুসলিম পেশাজীবী, নতুন আগত অভিবাসী এবং অমুসলিম সমর্থকদের সহযোগিতার মাধ্যমেই তহবিলের প্রাথমিক যাত্রা। এই সহযোগিতা আমাদেরকে দেখিয়ে দেয়, কীভাবে সে সময় প্রতিষ্ঠান কম থাকলেও পারস্পরিক সহায়তার চর্চা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এমেরিটাস অধ্যাপক হুমায়ুন আনসারী। তিনি জানান, ২০ শতকের শুরুতে লন্ডনে বহু মুসলমান “ধর্মীয় রীতি পালনের সুযোগ ছাড়াই দরিদ্রদের মতো করে দাফন করা হত ।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে জাস্টিস আমীর আলী একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন এবং ব্রুকউড সমাধিক্ষেত্রের মুসলিম সেকশন ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করেন। অধ্যাপক আনসারী বলেন, এই উদ্যোগের ফলে বিভিন্ন পটভূমির মুসলমান—যেমন বিখ্যাত বিভক্ত মুসলিম মারমাডিউক পিকথল—একটি জায়গায় দাফন হতে পেরেছিলেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাদের ইসলামী পরিচয়কে স্থায়ীভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন