বড় ধাক্কা সামলাতে অক্ষম ঢাকা ধসে পড়বে সাড়ে ৮ লাখ ভবন

gbn

ভূমিকম্পের বড় ধাক্কা সামলানোর সক্ষমতা রাজধানী ঢাকার নেই। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ভবন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভবন ধসে পড়বে। রাজধানীতে গড়ে ওঠা ২১ লাখ ৪৫ হাজার ভবনের মধ্যে সাড়ে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, অধিকাংশ ভবন তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় ভবন নির্মাণ কোড অনুসরণ করা হয়নি। বেশির ভাগ ভবন নির্মাণে সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। এমনকি ৯৫ ভাগ নির্মাণ করা হয়েছে অনুমোদিত নকশার বাইরে।

এছাড়া পেশাদার প্রকৌশলী ছাড়াই অনেকে রাজমিস্ত্রিদের দিয়ে নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণ করেন। অপরদিকে সাইনবোর্ডসর্বস্ব অনেক ডেভেলপার ভবনের মান বজায় না রেখে শুধু বেশি লাভের জন্য ভবন নির্মাণ করে। অথচ এসব অনিয়ম-দুর্নীতি যাদের মনিটরিং করার কথা, তারা একরকম নির্বিকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আগে হয়তো এ ধরনের দায়িত্বহীনতার নজির ছিল। কিন্তু এখন অন্তত বলতে পারি-আমরা জবাবদিহিতার মধ্যে আনার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বিধিবহির্ভূত ৩ হাজার ৩৮২টি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এখন ৭-৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য সবার আগে নাগরিকদের সচেতন হবে।

রাজউক চেয়ারম্যান জানান, শুক্রবার ভূমিকম্পের পরপরই রাজউকের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক কর্মকর্তাদের মাঠে নামানো হয়েছে। যেসব ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে তা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে জননিরাপত্তার প্রশ্নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০২২ সালে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ভবনগুলো নিয়ে জরিপ পরিচালনা করেছে। ওই জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানীর ২১ লাখ ৪৫ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে আট লাখ ভবন বড় মাত্রার (৭ বা তার চেয়ে বেশি) ভূমিকম্পে ধসে পড়বে। এর মধ্যে সেমিপাকা থেকে বহুতলা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে বহুতলাবিশিষ্ট ভবনের সংখ্যা রয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি।

রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এবং সমাপ্ত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল লতিফ হেলালী যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা ও আশপাশের ভবনগুলো ন্যূনতম মান বজায় না রেখেই তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মারাত্মক। শুক্রবার ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে অনেক ভবনে ফাটল ধরেছে। অনেক ভবন ধসে মানুষ হতাহত হয়েছে। এই মাত্রা ৭ হলে সে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ এক বিপর্যয়।

তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে রাজউক। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় শতকোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনের ফিটনেস যাচাই করার কথা। কিন্তু রাজউক ও তৎকালীন মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় কাজ এগোনো যায়নি।

তিনি আরও জানান, মহাখালীতে একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একটি ট্রাস্ট গঠন করে দুর্যোগসহনশীল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যমান ভবনের মান যাচাই-বাছাই করার কথা। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সেগুলো সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে রাজউক ও সরকার যদি সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে, তাহলে রাজধানীর ভবনগুলো অনেকাংশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহনশীল হবে।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না। চলতি বছরে রাজউক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অবৈধ ভবন চিহ্নিত করে। ইতোমধ্যে এসব ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে রাজউক। এছাড়া রাজউক এলাকায় কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই শত শত ভবন গড়ে উঠেছে নগরীর বসিলা, ঢাকা উদ্যান ও কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায়। রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, রাজধানীর মাস্টারপ্ল্যান ড্যাপের তথ্যমতে-২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৯৫ হাজার স্থাপনা গড়ে ওঠে। ওই সময়ে রাজউক থেকে ৪ হাজার ১৪৭টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়। ফলে অনুমোদন ছাড়াই ৯৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভবন এখন রাজউকের জন্য বড় এক বোঝা। যদিও নানাভাবে অভিযান চালানো অব্যাহত আছে। কিন্তু ওই অর্থে সমাধান হচ্ছে না।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কাঠামো প্রকৌশলী এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম শামীমুজ্জামান বসুনিয়া যুগান্তরকে বলেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিষয়ে ঢাকার কিছুটা প্রস্তুতি থাকলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঘটলে তা ম্যানেজ করার কোনো সক্ষমতা সরকারের নেই। তিনি বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়বে পুরো নগরীতে। তখন ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কে, কাকে বাঁচাবে সেটিই হবে বড় প্রশ্ন। তবে ভূমিকম্পে যারা বেঁচে যাবে তাদেরও নিরাপদে সরে যাওয়া কঠিন হবে। আগুন, পানি এবং পয়োপ্রণালি সিস্টেম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। সেসব ম্যানেজ করে ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সম্ভব হবে না।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলে তা ম্যানেজ করার কিছুটা প্রস্তুতি ফায়ার সার্ভিসের রয়েছে। তবে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে। এছাড়া হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সে সময় ব্ল্যাডব্যাংক সংরক্ষণ করা বেশি জরুরি হয়ে পড়বে।

এদিকে রাজউক সূত্র জানায়, ভবনের মান যাচাইয়ের জন্য রাজউক শিগগির বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এটি কার্যকর হলে স্বাধীন একটি সংস্থা বা ট্রাস্ট গঠনের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে যাচাই কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর অবৈধ ও ভূমিকম্প সহনশীল ভবন বিশেষ রঙ দিয়ে মার্কিং করা হবে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন