তাইওয়ান নিয়ে হস্তক্ষেপ করলে চীনের কাছে ধ্বংসাত্মক পরাজয় হবে জাপানের

gbn

তাইওয়ান নিয়ে পরিস্থিতিতে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে জাপান ‘চীনা সেনাবাহিনীর কাছে ধ্বংসাত্মক পরাজয়ের’ শিকার হবে বলে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার কড়া ভাষায় সতর্ক করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির তাইওয়ান–সংক্রান্ত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনা আরো বেড়েছে।

টোকিও শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে একজন শীর্ষ চীনা কূটনীতিকের অনলাইন পোস্টের প্রতিবাদ জানায় — যা এ কূটনৈতিক টানাপোড়েনকে আরো তীব্র করেছে।

তাকাইচি গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে বলেছিলেন, চীন যদি তাইওয়ানে হামলা করে, তা জাপানের জন্য ‘অস্তিত্ব–হুমকির পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে এবং টোকিও সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

এই মন্তব্যই বিতর্কের সূত্রপাত।

 

গত শনিবার ওসাকার চীনা কনসাল জুয়ে জিয়ান এক সংবাদ প্রতিবেদন শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘যে নোংরা গলা সামনে এগিয়ে আসে, তাকে কেটে ফেলা উচিত’ — পরে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়।

জাপান এটিকে ‘চরম অনুপযুক্ত’ বলে চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। জাপানের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি জুয়েকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন, যদিও টোকিও এখন পর্যন্ত শুধু বেইজিংকে ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে বলেছে।

 

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াং বিন বলেন, তাকাইচির বক্তব্য ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক’।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জাপান যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় বা তাইওয়ান প্রশ্নে শক্তি প্রয়োগ করে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ইস্পাত–ইচ্ছাশক্তির পিপলস লিবারেশন আর্মির কাছে চূর্ণ পরাজয় বরণ করতে হবে এবং বড় মূল্য দিতে হবে।’

চীন বৃহস্পতিবার জাপানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানিয়েছিল—যা দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার। ২০২৩ সালে ফুকুশিমার দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শেষবার এমন তলব করা হয়েছিল।

 

জাপানের সাম্প্রতিক সামরিক ও নিরাপত্তা নীতির পরিবর্তন নিয়েও ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন, বিশেষত এর অ–পারমাণবিক নীতির অস্পষ্টতা নিয়ে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, জাপান পারমাণবিক সাবমেরিন অধিগ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে নেতিবাচক নীতি–পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চীনা রাষ্ট্র–মাধ্যম তাকাইচিকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক তীব্র সম্পাদকীয় প্রকাশ করছে, যেহেতু চীন–জাপানের যুদ্ধ–ইতিহাস এবং তাইওয়ান ইস্যু চীনের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দুই সপ্তাহ আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং দক্ষিণ কোরিয়ায় তাকাইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

কমিউনিস্ট পার্টির পিপলস ডেইলি বলেছে, তাকাইচির মন্তব্য ‘অপ্রাসঙ্গিক একক রাজনৈতিক উক্তি নয়’।

 

জাপানের ডানপন্থীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সংবিধানের বাধা–নিষেধ থেকে বেরিয়ে এসে সামরিক শক্তি হিসেবে অবস্থান তৈরি করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মন্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছে ‘ঝোং শ্যাঙ’ ছদ্মনামে — যার অর্থ ‘চীনের কণ্ঠ’— এবং যা সাধারণত পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত মতামতের জন্য ব্যবহৃত হয়।

পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপান মাথা গুঁজে সামরিক শক্তি বাড়ানোর পথে ছুটে চলছে। ইয়াসুকুনি মন্দিরে ঘন ঘন সফর থেকে শুরু করে নানজিং গণহত্যা অস্বীকার করা, “চীন–হুমকি তত্ত্ব” জোরালোভাবে প্রচার—তাকাইচির প্রতিটি পদক্ষেপ অতীতের অপরাধবোধের সেই পুরোনো চিহ্ন অনুসরণ করে, আগ্রাসনের ইতিহাসকে ধুয়ে–মুছে ফেলা এবং সামরিকতাবাদকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার আগে ১৯৩১ সালে জাপানের চীন আক্রমণ এখনো বেইজিং–টোকিও সম্পর্কের দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার উৎস।

চীন গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে দাবি করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে। তাইওয়ান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, দ্বীপের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার কেবল তাদের জনগণের।

তাইওয়ান জাপানি ভূখণ্ড থেকে মাত্র ১১০ কিমি দূরে এবং এর আশপাশের সামুদ্রিক রুট জাপানের বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া জাপানেই রয়েছে মার্কিন সেনাদের সবচেয়ে বড় বিদেশি ঘাঁটি।

জাপানি সম্প্রচারক এনটিভি জানিয়েছে,  চীন–বিরোধী মনোভাব বাড়ার আশঙ্কায় টোকিওতে চীনা দূতাবাস কর্মীদের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এক ব্রিফিংয়ে জাপানের শীর্ষ সরকারি মুখপাত্র মোরিনোরি কিহারা আবারও বলেন, জাপান সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় এবং তাইওয়ান নিয়ে তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন