লন্ডনের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও আবাসন সংকটপূর্ণ এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটসে সাশ্রয়ী ভাড়ার (এফোর্ডেবল রেন্ট) বাড়িতে এখন বিলাসবহুল জীবন যাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক ভাড়া ও সাশ্রয়ী মূল্যের বাসস্থানগুলোতে এখন শুধু চার দেয়ালই নয়, যোগ হচ্ছে ইনডোর খেলার এলাকা, টিভি লাউঞ্জ, প্রাইভেট সিনেমা হল, এমনকি নিজস্ব বোলিং অ্যালিও। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে জীবনযাপনের পুরো স্বাদ নিতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই এ অসাধারণ পদক্ষেপ।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের হাউজিং রেজিস্টারে প্রায় ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরের জন্য তালিকাভুক্ত আছেন। আর নির্মাণের জন্য এই বরায় জায়গার সংকট অত্যন্ত তীব্র। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অথরিটি এবং প্রাইভেট ডেভেলপাররা এখন জোর দিয়েছেন উঁচু এবং স্মার্টলি ডিজাইনড বিল্ডিং নির্মাণের উপর, যার ভেতরে থাকবে পরিবারবান্ধব সব সুযোগ - সুবিধা।
এমনই দুইটি প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ মেয়র লুৎফুর রহমান এবং ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইয়ুম তালুকদার। আইল অব ডগস -এ অবস্থিত এই প্রকল্পগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, পাবলিক - প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর মাধ্যমে কীভাবে উন্নতমানের সাশ্রয়ী আবাসন তৈরি করা সম্ভব।
এই দুটি উন্নয়ন প্রকল্প একসাথে মোট ১২০টি নতুন বাসস্থান সরবরাহ করছে। এগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সাশ্রয়ী ভাড়ার আবাসনের জন্য সংরক্ষিত, যার মধ্যে ৪০টি ইউনিট সাশ্রয়ী ভাড়ায় পাওয়া যাবে; এবং এই সংখ্যাটির অর্ধেকই পরিবার-উপযোগী (৩ বা তার বেশি শোবার ঘর)। একটি প্রজেক্টে ১৯টি ফ্যামিলি সাইজ ঘর এবং ৫টি হুইলচেয়ার প্রবেশ-নির্গমন উপযোগী ঘর রয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসের এক্সিকিউটিভ মেয়র লুৎফুর রহমান, সাইট ভিজিটের পর বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটস একটি ছোট বরো। আমরা চারপাশে প্রসারিত (সাইড ওয়েজ এক্সপ্যান্ড) হতে পারি না, কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই উঁচু করে গড়তে (আপওয়ার্ডস বিল্ড) পারি। আমাদের উচ্চ ভবন নির্মাণ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই, কিন্তু সেগুলোর ভেতরে ফ্যামিলি—ফ্রেন্ডলি অ্যামেনিটি স্পেস অর্থাৎ পরিবারগুলোর চাহিদা মেটানোর মতো সুযোগ - সুবিধার স্থান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমি যে উন্নয়ন গুলো দেখেছি তা দুর্দান্ত এবং স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে মডার্ন লিভিং অর্থাৎ আধুনিক জীবনযাপন কী।”
ওয়ান থেমস কীঃ ৪৮ তলার নতুন মাইলফলক
চ্যালগ্রোভ প্রোপার্টিজ লিমিটেড (সিপিএল) এবং পপলার হারকার যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ওয়ান থামস কে প্রকল্পে অ্যাফর্ডেবল রেন্ট -এর জন্য ৪০ টি এবং শেয়ারড ওনারশিপ—এর জন্য ৩১টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। অ্যাফোর্ডেবল রেন্ট -এর ইউনিটগুলোর অর্ধেকই থ্রি-বেডরুম বা তার বেশি সাইজের, অর্থাৎ ফ্যামিলি—সাইজড। ৭১ টি অ্যাপার্টমেন্টই একটি ৪৮ তলা বিশিষ্ট স্ট্রাইকিং টাওয়ারে অবস্থিত এবং প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টে একটি করে ব্যক্তিগত আউটডোর ব্যালকনি আছে।
এই ডেভেলপমেন্টটি সোশ্যাল অ্যান্ড অ্যাফর্ডেবল হাউজিং -এ (সামাজিক ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনে) নতুন বেঞ্চমার্ক বা মাপকাঠি স্থাপন করেছে। বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের কমিউনাল সুবিধা ভোগ করছেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি উন্মুক্ত শিশুদের খেলার এলাকা, বসার ব্যবস্থাসহ বাগান, একটি সিনেমা রুম এবং এমনকি একটি বোলিং অ্যালি। এই শেয়ার্ড ফ্যাসিলিটিজ বাসিন্দারা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন এবং এডভান্স বুকও করতে পারেন।
চ্যালেগ্রোভ প্রোপার্টিজ লিমিটেড (সিপিএল) — এর পক্ষে রামি আতাল্লাহ, বলেন, “পপলার হারকার সাথে একত্রে কাজ করে ওয়ান থামস কে বাস্তবায়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের লক্ষ্য ছিল উচ্চমানের বাড়ি তৈরি করা যা বাসিন্দাদের জীবনকে উন্নত করে এবং বৃহত্তর কমিউনিটির জন্য ইতিবাচকভাবে অবদান রাখে। এ ধরনের উন্নয়ন গুলো দেখায় যে কীভাবে চিন্তাশীল নকশা এবং সহযোগিতা স্থানীয় আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে পারে, পাশাপাশি এমন স্থান তৈরি করতে পারে যাকে মানুষ গর্বের সাথে বাড়ি বলে ডাকে।”
Caption: (বাম থেকে ডানে) রামি আতাল্লাহ, চ্যালেগ্রোভ প্রপার্টিজ লিমিটেড; স্টিভ স্ট্রাইড, পপলার হারকার সিইও; লুত্ফুর রহমান, টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র; এবং লরা ফেয়ারওয়েদার, পপলার হারকা।
পপলার হারকার - এর প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা পল ডুলি বলেন, “চ্যালেগ্রোভ প্রোপার্টিজের মতো একটি ডেভেলপারের সাথে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত, যারা সত্যিকার অর্থে গুণমান এবং দীর্ঘমেয়াদী ভ্যালু-কে অগ্রাধিকার দেয়। ওয়ান থেমস কী নামের এই টাওয়ার ব্লকে, আমরা টাওয়ার হ্যামলেটসে অ্যাফর্ডেবল লিভিং - এর নিউ স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ সাশ্রয়ী জীবনযাপনের জন্য একটি নতুন মান নির্ধারণ করে এমন বাড়ি এবং শেয়ার্ড স্পেস সরবরাহ করতে সাহায্য করেছি। বোলিং অ্যালি থেকে খেলার জন্য নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত, এই সুবিধাগুলো প্রতিবেশীদের একত্রিত করে এবং কমিউনিটির মধ্যে একটি দৃঢ় বোধ গড়ে তোলে। এটি হল সহযোগিতার শক্তি - যখন ডেভেলপার এবং কাউন্সিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় স্টেকহোল্ডাররা হাত মিলিয়ে কাজ করে, তখন আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাড়ি তৈরি করি যা সেখানকার বাসিন্দাদের চাহিদার প্রতিক্রিয়া জানায়।”
হারকোর্ট টাওয়ারঃ কাজ থেকে বিশ্রাম, সব একই ছাদের নিচে
একইভাবে, লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল এবং বার্কলে হোমস দ্বারা বাস্তবায়িত এবং সাউদার্ন হাউজিং দ্বারা পরিচালিত হারকোর্ট টাওয়ার - এ রয়েছে কাজ ও পড়ার কমিউনাল স্থান, একটি বিশ্রামের এলাকা, টিভি রুম এবং শিশুদের প্লে রুম - সবই ভিতরে এবং বাসিন্দাদের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহারের উপযোগী।
৮ তলা বিশিষ্ট এই বিল্ডিংটিতে মোট ৪৯টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি ফ্যামিলি-সাইজড হোম এবং ৫টি স্পেশালি অ্যাডাপ্টেড হুইলচেয়ার - অ্যাক্সেসিবল হোম।
এলঅ্যান্ডজি'র হেড অফ অ্যাফর্ডেবল হোমস, শন হোল্ডক্রফট বলেন, “উচ্চমানের, সুপরিচালিত আবাসনের মাধ্যমে মানুষের জীবন উন্নত করাই আমাদের একটি মূল লক্ষ্য। বাস্তবে, এর অর্থ দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, যা যুক্তরাজ্যের সাশ্রয়ী আবাসন সংকট মোকাবেলার চাবিকাঠি। হারকোর্ট টাওয়ার - এর সোশ্যাল রেন্ট হোম গুলি, এবং পাশের হ্যাম্পটন টাওয়ার -এর শেয়ারড ওনারশিপ হোমগুলি, শুধু ইট - পাথরের গাঁথুনি নয়, কারণ একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাড়িই হল সেই ভিত্তি, যার উপর দাঁড়িয়ে আমাদের গ্রাহকরা একটি ভাল জীবন গড়ে তোলেন।”
বার্কলে ক্যাপিটাল - এর বিভাগীয় জমি ও উন্নয়ন পরিচালক হ্যারি লুইস বলেন, “বিশ্ব-স্তরের স্থাপত্য, টেনিউর - ব্লাইন্ড পরিবার উপযোগী বাড়ি এবং বাসিন্দাদের সত্যিকারের প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ সাউথ কী প্লাজা অংশীদারিত্বের কাজের একটি নিদর্শন। লন্ডন বরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস এবং এলঅ্যান্ডজি'র সাথে বার্কলে শত শত স্থানীয় মানুষকে সামাজিক ভাড়ায় উচ্চমানের, টেকসই বসবাসের জায়গা দিয়েছে। সাশ্রয়ী বাড়ি শুধু একটি আবাসন পরিসংখ্যান নয় - প্রতিটি দরজা একটি স্থানীয় পরিবারের জন্য একটি খুব বাস্তব পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং আমরা এখানকার ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে সত্যিই গর্বিত, মানুষদের অস্থায়ী আবাসন থেকে বের করে আনা এবং বরোতে অতিরিক্ত ভিড় কমাতে সাহায্য করছি।”
টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যার ফলে সেখানে আবাসন সংকট খুবই তীব্র। তারপরও, এই এলাকার প্রশাসন এই সমস্যা মোকাবিলায় সক্রিয়। তাদের ইতিমধ্যেই একটি সফলতার রেকর্ড রয়েছে এবং তারা একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো নতুন উন্নয়ন, চাকরি সৃষ্টি এবং আরও বাড়ি নির্মাণ করা। এছাড়াও, তাদের পরিকল্পনা দল সৃজনশীল উপায়ে এমন জমি গুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে যেখানে উন্নয়ন আটকে আছে, যাতে দ্রুত নতুন বাড়ি বানানো যায়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন