শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৯ রান, হাতে ৪ উইকেট। ড্রেসিংরুমে তখন উত্তেজনার ঢেউ, গ্যালারিতেও বুকধড়ফড় করা নিস্তব্ধতা। উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা আর তরুণ রাবেয়া খান। দুজনের চোখে ভরসা, আত্মবিশ্বাস আর জয়ের স্বপ্ন।
সব হিসাবেই ম্যাচটা বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়।
কিন্তু ক্রিকেট তো অনিশ্চয়তার নাম। আর সেই অনিশ্চয়তাই যেন নিজের সমস্ত নাটকীয়তা উজাড় করে দিল নাভি মুম্বাইয়ের ড. ডিওয়াই পাতিল স্পোর্টস একাডেমির আলো-ঝলমলে রাতে। বল হাতে এলেন লঙ্কান অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু—চোখে আগুন, হাতে ঝড়।
এক ওভারে টানা চার উইকেট! মুহূর্তেই বদলে গেল খেলার চিত্রনাট্য। নিগারের চোখের দৃঢ়তা মিলিয়ে গেল হতভম্বতায়, রাবেয়ার হাসি থেমে গেল নিঃশব্দে। শেষে কেবল বোর্ডে ঝলসে উঠল তিক্ত বাস্তবতা। বাংলাদেশ ১৯৫ রানে থেমে গেছে, শ্রীলঙ্কার জয় ৭ রানে।
শেষ ওভারের প্রথম বলেই লেগ বিফোরে ফেরেন রাবেয়া। পরের বলে এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হন নাহিদা আক্তার। তৃতীয় বলে সীমানার কাছে ক্যাচ দেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। চতুর্থ বলে মারুফাকেও এলবিডব্লিউ করে দেন আতাপাত্তু। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল ৯ রান, কিন্তু বাংলাদেশ নিতে পারে মাত্র এক রান।
ফলে ৭ রানের ব্যবধানে হেরে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয় বাংলাদেশের মেয়েদের।
এর আগে মুম্বাইয়ে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৪৮.৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে তোলে ২০২ রান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন পেরেরা। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন স্বর্ণা আক্তার—তিনি ২৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া রাবেয়া খান নিয়েছেন ২ উইকেট ৩৯ রানে।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক শূন্য রানে ফেরেন সাজঘরে। অপর ওপেনার ফারজানা হকও দীর্ঘসময় ক্রিজে থেকেও সুবিধা করতে পারেননি; ৩৫ বলে করেন মাত্র ৭ রান। চারে নেমে সুবহানা মুস্তারিও ফিরেছেন ১৩ বলে ৮ রান করে। ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর নিগার সুলতানা জ্যোতি ও শারমিন আক্তার সুপ্তা মিলে দলের হাল ধরেন। জুটি থেকে আসে ৬৪ রান। তবে ৬৪ রানে পৌঁছেই ইনজুরিতে মাঠ ছাড়তে হয় সুপ্তাকে। পরে জ্যোতির সঙ্গে যোগ দেন স্বর্ণা আক্তার। ভালোভাবেই লড়ছিলেন দুজন, কিন্তু ১৯ রান করে স্বর্ণা ফিরলে আবার ধস নামে। রিতু-রাবেয়াদের কেউই ব্যর্থতা কাটাতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। অধিনায়ক জ্যোতি লড়েছেন একাই, দলের সর্বোচ্চ ৭৭ রান তার ব্যাটে।
বল হাতে শুরুতেই বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিলেন মারুফা আক্তার। ইনিংসের প্রথম বলেই শ্রীলঙ্কার ওপেনার ভিষমি গুনারত্নেকে এলবিডব্লিউ করে দলকে এনে দেন ব্রেকথ্রু। কিন্তু এরপর আতাপাত্তু ও পেরেরার ৭২ রানের জুটি লঙ্কানদের ম্যাচে ফেরায়। আতাপাত্তু ৪৩ বলে ৪৬ রান করে আউট হলেও পেরেরা এক প্রান্ত ধরে রেখে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন।
শেষদিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ২০২ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেই রানই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য নাগালের বাইরে।
ফলাফল:
শ্রীলঙ্কা ২০২ (৪৮.৪ ওভার)
বাংলাদেশ ১৯৫/৯ (৫০ ওভার)
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন