জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
সিলেটের জৈন্তাপুরে অবস্থিত সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ গবেষণার পর প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা উদ্ভাবন করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল ও মূল্যবান গোল মরিচ জাত ‘বারি গোল মরিচ-১’। এই লতানো শ্রেণির মসলাজাতীয় ফসলটি দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো এবং পাহাড়ি ও টিলাজমিতে অত্যন্ত ভালোভাবে জন্মে।
বারি গোল মরিচ-১ মে মাসে ফুল দেয় এবং নভেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। এক গাছ থেকে বছরে প্রায় ৫-৬ কেজি গোল মরিচ পাওয়া যায়। রোগবালাই কম থাকায় এটি তুলনামূলক কম পরিচর্যাতেই ভালো ফলন দেয়।
সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল জাতের গোল মরিচ এবং বাংলাদেশি মাটি ও আবহাওয়ায় অত্যন্ত উপযোগী। বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এমন উঁচু বিশেষ করে টিলা ও পাহাড়ি শ্রেণির মাটিতে ভালো জন্মায় গোলমরিচ। দেশের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, সিলেট, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের টিলা, পাহাড় শ্রেণির জমিতে গোল মরিচের ফলন ভালো হয়ে থাকে। তবে সঠিক নিয়ম ও পরিচর্যার মাধ্যমে সমতল জমিতেও তা ফলানো সম্ভব বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালের আগ থেকেই হাটহাজারি, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের বাইরে থেকে জাত নির্বাচন ও মূল্যায়নের মাধ্যমে এর গবেষণা শুরু হয়। ১৯৯২ সালে দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল হিসেবে এই জাতটি ‘জৈন্তাপুর গোল মরিচ’ নামে পরিচিতি পেলেও, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর অনুমোদনের পর এর নাম হয় ‘বারি গোল মরিচ-১’। ইতোমধ্যে এই জাতের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে কাজ শুরু করেছে গবেষণা কেন্দ্র। কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মাঝে ৩০ টাকা দরে ১০ হাজারেরও বেশি চারা বিতরণ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির একজন উদ্যোক্তা ১ হাজার চারা কিনে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে এই জাত ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
জৈন্তাপুরের সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বারি গোল মরিচ-১ যেহেতু উন্নত ও বিশ্বমানের জাতের সেহেতু এটা রোপনের পর প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া যায়। এই ফসলটি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে কৃষক ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিপনন শুরু হলে দেশব্যাপী গোল মরিচের চাহিদা পূরণে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। প্রতি বছর যে পরিমাণ গোল মরিচ বাহির থেকে আমদানি করা হয় তাও হ্রাস পাবে, কৃষক ও উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন এবং বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতার কমার মধ্যদিয়ে সাশ্রয় হবে অর্থনীতির। এই গোল মরিচের উন্নত জাতটি যদি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ফলে গোল মরিচ আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সাশ্রয় হবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা।
সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফয়ছল আহমেদ বলেন, ‘জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের নিরলস গবেষণা ও পরিশ্রমের ফসল এই বারি গোল মরিচ-১। এ গোল মরিচ বিশ্বের সবচেয়ে স্পাইসি (ঝাল) মরিচ। এখন পর্যন্ত এটাই পৃথিবীর সবচাইতে ঝাল জাতের গোল মরিচ। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া মসলা জাতের এই ফসলের উপযোগী। জৈন্তাপুরের মাটি ও আবহাওয়া মসলা জাতের ফসলের জন্য উপযোগী। আমরা বিশ্বাস করি, বারি গোল মরিচ-১ দেশীয় বাজারে যেমন সাড়া ফেলবে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে।’

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন