জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রাইমারিতে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানী। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাটিক সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক কুইন্সের নির্বাচিত সমবায় পরিষদ সদস্য হিসেবেই আগে পরিচিত ছিলেন। এবার তিনি মেয়র প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু ক্যুমোর মতো অভিজ্ঞ ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদকে পরাজিত করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভ করেছেন। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, মামদানী প্রায় ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন, যেখানে ক্যুমো পেয়েছেন ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট।
মামদানীর নির্বাচনী প্রচারে মূল ইস্যু ছিল নিউইয়র্কবাসীর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সমস্যাগুলো। তিনি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, নগর মালিকানাধীন মুদি দোকান চালু, সার্বজনীন শিশু যত্ন, আর সবার জন্য উন্মুক্ত গণপরিবহন চালুর মতো জনমুখী নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই নীতিগুলো বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। একই সঙ্গে মুসলিম ভোটারদের মধ্যে তিনি গভীর আস্থা ও সমর্থন অর্জন করেছেন। নিউইয়র্কের বিপুল মুসলিম জনসংখ্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও আরব বংশোদ্ভূত ভোটাররা তাঁর সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। অনেকের মতে, মামদানীর নিজের মুসলিম পরিচয়, তার সাথে সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি এই সমর্থনকে দৃঢ় করেছে।
মামদানীর এই জয় শুধু ব্যক্তিগত বিজয় নয়; এটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূলধারার রাজনীতিতে এক ধরনের ‘ভূমিকম্প’ ঘটিয়েছে। কিউমোকে পেছনে ফেলে তাঁর জয় দেখিয়ে দিল, শহরের মানুষ এখন প্রগতিশীল, সমাজমুখী নীতির দিকেই ঝুঁকছে। এই নির্বাচনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কিউমো যেখানে সুপার প্যাকের মাধ্যমে ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা এবং মাইক ব্লুমবার্গের মতো প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের সমর্থন পেয়েছিলেন, সেখানে মামদানী মূলত তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থন ও ছোট ছোট অনুদানেই তার প্রচার চালিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানীর জয় শুধু নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি জাতীয় রাজনীতিতেও প্রগতিশীলদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে। বিশেষত অ্যালেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজের মতো তরুণ প্রগতিশীলদের যে ঢেউ শুরু হয়েছিল, মামদানীর জয় সেটিকে আরও বেগবান করবে। এখন চূড়ান্ত লড়াই হবে সাধারণ নির্বাচনে। সেখানে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জিম ওয়াল্ডেনের সঙ্গে মামদানীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অ্যান্ড্রু ক্যুমো এখনো ঘোষণা দেননি তিনি নির্বাচনে অন্য কোনো টিকিটে লড়বেন কি না।
জোহরান মামদানীর এই বিজয় নিউইয়র্কের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। তাঁর প্রগতিশীল নীতি, তৃণমূল ভিত্তিক প্রচার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগের কৌশল প্রমাণ করেছে যে, অর্থ আর প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকতা নয়—মানুষের চাওয়া-পাওয়া ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতিই আজকের রাজনীতির সত্যিকারের শক্তি। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন হবে সেই শক্তির পরীক্ষার আসল মঞ্চ।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন