ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ কি আসলেই শেষ? ১২ দিনের সংঘাতে কে কী পেলো?

gbn

১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর আপাতত থেমে গেছে ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যাকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ নামে অভিহিত করেছেন, সেই সংঘর্ষ শেষ হয়েছে- এমনটাই মনে করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতি টিকবে কি না, তা নিয়ে এখনো দোলাচল রয়েছে।

এই যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করেছে তিন পক্ষই- ট্রাম্প, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু প্রকৃত সত্য কী? কে কী অর্জন করলো? ইরান কি তার কৌশলগত সম্পদ রক্ষা করতে পারলো? আর এই যুদ্ধবিরতি কি শান্তির পথে এক ধাপ?

 

যেভাবে শুরু, যেখানে থামলো

শনিবার (২১ জুন) গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অনুরোধে, ইরানের ফরদো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, এসব স্থাপনা ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে।

 

এরপরে সোমবার (২৩ জুন) পাল্টা জবাবে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি আল-উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। মধ্যপ্রাচ্য যেন ছড়িয়ে পড়া এক দীর্ঘ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ‘সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, এই ১২ দিনের যুদ্ধ বছর ধরে চলতে পারতো ও পুরো মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হয়ে যেতো।

তবে যুদ্ধবিরতির চার ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েল ফের ইরানে হামলা চালায়। তারা দাবি করে, ইরান থেকে ছোঁড়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল। যদিও তা মাঝ আকাশেই ভূপাতিত হয়। ইসরায়েল পাল্টা হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন গুঁড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে ইসরায়েলের ওপর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প।

 

ইরান দাবি করে, তারা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েনি। পরে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল আর ইরানে আক্রমণ করবে না। সব যুদ্ধবিমান ফিরে আসবে। মূলত এরপরই উভয়পক্ষের মধ্যে নীরবতা দেখা যায়।

ইসরায়েল কী পেলো?

ইসরায়েল বরাবরই বলে এসেছে- ইরান তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এবার সেই শত্রুর পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালিয়ে একধাপ এগিয়ে গেলো তেল আবিব।

 

গত ১৩ জুন ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের নাতানজ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে জবাব দেয়। অতীতে ইসরায়েল সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলেও, এবার তাদের পরিসর ছিল আরও বড় ও ঝুঁকিপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নেতানিয়াহু বলেছেন, বিশ্ব নেতারা আমাদের সাহস ও সাফল্যে মুগ্ধ।

আরেকটি বড় অর্জন হলো- যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত করা। ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা দিলেও সরাসরি হামলায় অংশ নেয়নি। এবার ট্রাম্প ইসরায়েলের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করেছেন। ট্রাম্প আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বলেছেন নেতানিয়াহু।

 

‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ এর মাধ্যমে ইসরায়েল কৌশলগতভাবে ইরানের মিত্র- হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনি হুথিদের- দুর্বল করে আগেই ভূমিকা তৈরি করেছিল।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা রক্ষা পেলো?

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, তারা ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে। কিন্তু এর সত্যতা নির্ভর করছে মাটির নিচের পর্যবেক্ষণের ওপর, যা এখনো সম্ভব হয়নি।

 

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ফরদোতে ভূগর্ভস্থ ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে অতিরিক্ত কম্পন-সংবেদনশীল সেন্ট্রিফিউজের কারণে অনেক বড় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইরানের পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি জানিয়েছেন, আমাদের প্রস্তুতি ছিল। এই হামলায় আমাদের ইউরেনিয়াম উৎপাদন ব্যাহত হবে না।

আবারও কি সংঘাত আসন্ন?

 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, বর্তমান যুদ্ধবিরতিই যে চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি তা নিশ্চিতভাবে বলার সুযোগ নেই। কারণ, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ এখনো রয়েই গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের পথ দুটি- নতুন চুক্তি অথবা পুনরায় সংঘাত। ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প সরে দাঁড়ানোর পর থেকে আলোচনার পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে।

তবে ইউরোপের তিন শক্তি- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি- ২০ জুন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে আলোচনায় বসে চুক্তির সম্ভাবনা খুঁজে ফেরে। যদিও সেসব প্রচেষ্টা যুদ্ধ এড়াতে ব্যর্থ হয়। এরপরও ইউরোপ ইরানের একমাত্র কূটনৈতিক উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক ইয়োআনিস কোটুলাসের মতে, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচিতে আরও নজরদারির প্রস্তাব দিয়ে ইউরোপকে যুক্ত করতে চাইবে। যুক্তরাষ্ট্রও হয়তো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে মেনে নিতে পারে। তবে ইসরায়েল অতীতে বহুবার একাধিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে ও এখনো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই ইরানের পার্লামেন্ট আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধে একটি বিল অনুমোদন করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প আবারও ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু হতে দেওয়া হবে না।

এই মূল দ্বন্দ্ব যদি বজায় থাকে, তাহলে নতুন করে আঘাত ও পাল্টা আঘাত, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততাও, কেবল সময়ের ব্যাপার।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন