অপ্রাপ্ত বয়সে আসা ইমিগ্র্যান্টরা বৈধতা পাবে

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি:আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। যদিও তিনি এখনো পরাজয় মেনে নেননি। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার সাথে সাথেই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি যতগুলো ইমিগ্রেশনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেগুলোতেও তিনি পরাজয় বরণ করছেন। আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটের আদালত তার ইমিগ্রেশন বিরোধী পদক্ষেপগুলো বাতিল করে দিচ্ছে। গত ৪ ডিসেম্বর নিউইয়র্কের আদালত ট্রাম্প ডেকা প্রোগ্রামে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন তা বাতিল করে দিয়েছে। অন্য দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত ট্রাম্পের এইচ-১ ভিসা-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দিয়েছেন। এর আগের দিন নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট অপর এক রায়ে সীমান্ত অতিক্রমের সময় কিংবা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীরা গ্রেফতারের ১০ দিনের মধ্যে অবশ্যই কোর্টে সোপর্দের নির্দেশ দিয়েছেন।  নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট ডেকা প্রোগ্রামের নিশেধাজ্ঞা বাতিল করায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডেকা প্রোগ্রামটি পুনর্বহাল হলো। শিশুকালে মা-বাবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যারা এখন পর্যন্ত বৈধ হতে পারেননি, তেমন অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সীদের আবারো ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন এবং নতুন করে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য দরখাস্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হলো।  ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জজ নিকলাস জি গ্যারোফিস ৪ ডিসেম্বর ‘ডেকা’(ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল) প্রোগ্রাম বাতিলের জন্য ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে বাতিল করেছেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা বাতিল করেছিলেন। আদালতের সর্বশেষ এই নির্দেশের ফলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বসাধারণের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন অথবা নতুন দরখাস্ত গ্রহণের জন্য।  ৮ বছর আগে অর্থাৎ ২০১২ সালে জো বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেসময়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা বিশেষ এক নির্দেশে এসব তরুণ-তরুণীকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য এব পর্যায়ক্রমে গ্রিনকার্ড দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশ অনুযায়ী সাড়ে ৬ লাখ তরুণ-তরুণী ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেছিলেন। অর্থাৎ শৈশব-কৈশোর-যৌবনের পুরোটাই আমেরিকার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠা এবং অনেকেই কলেজ গ্র্যাজুয়েশনও করেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের শঙ্কা থেকে স্বস্তি পেয়েছিলেন। পুরো কমিউনিটি আশ্বস্ত হয় এ জন্য যে, এই তরুণ-তরুণীরা সিটিজেন হওয়ার পর তাদের সেই মা-বাবার জন্যও গ্রিনকার্ডের আবেদন করতে পারবেন।  নিউইয়র্ক ফেডারেল কোর্টের রায়কে স্বাগতম জানিয়েছেন ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে লড়াইরত সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা। এসব সংস্থার পক্ষে ট্রাম্পের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত লড়াইকারী অ্যাটর্নি কারেন টামলিন বলেন, এটি চূড়ান্ত নয়। অভিবাসী সমাজকে সোচ্চার থাকতে হবে জানুয়ারির ২০ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যাতে সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীকে গ্রিনকার্ড প্রদানের ঘোষণা দেন।    এইচ-১বি ভিসাবিরোধী ট্রাম্পের নির্দেশ বাতিল  করোনার অজুহাত এবং আমেরিকানদের স্বার্থ সংরক্ষণের দোহাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারিকৃত আরেকটি বিধি গত ১ ডিসেম্বর বাতিলের নির্দেশ দিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল জজ জেফরী হোয়াইট। এইচ-১বি ভিসা অর্থাৎ উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার কোটা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, যারাও এই ভিসা পাওয়ার যোগ্য হবেন, তাদেরকে অনেক বেশি বেতন-ভাতার নির্দেশও জারি করেন ট্রাম্প। ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল কোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেসব কারণ প্রদর্শন করা হয়েছে এইচ-১বি ভিসা নীতি সংকুচিত ও কঠোর করতে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী জনমত যাচাই করা হয়নি। এ ছাড়া, তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরসহ বৃহৎ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে পরিচালিত কল-কারখানার জন্য যে ধরনের কর্মকর্তা/প্রকৌশলী দরকার তা যুক্তরাষ্ট্রে খুব কম রয়েছেন। এরফলে বিদেশ থেকে নিয়োগের বিকল্প নেই। এমন যুক্তির সমর্থনে প্রয়োজনীয় বিবরণ দাখিল করেছিলেন কর্পোরেশনগুলোর আইনজীবীরা। দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর অভাবে কিভাবে লোকসানের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে কর্পোরেশনগুলোÑ সে তথ্যও সবিস্তারে উপস্থাপন করা হয় আদালতে। আদালতের মন্তব্যে আরো প্রকাশ পেয়েছে যে, করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার অজুহাতও সঠিক নয়।   মামলার বাদি ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানুফ্যাকচারার্স’র আইনজীবীরা আদালতে জানান যে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে কল-কারখানায় উৎপাদন পুরোদমে শুরুর বিকল্প নেই। এ অবস্থায় যদি দক্ষ কর্মীর সংকট অব্যাহত থাকে, তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এই রুলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে ‘বাই আমেরিকান, হায়ার আমেরিকান’ স্লোগানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জারিকৃত নির্বাহী আদেশ স্থগিত হয়ে গেল। ওই আদেশের ফলে এইচ-১বি, এইচ-১বিওয়ান এবং ই-থ্রি ভিসার ওপর সব বিধি বাতিল হলো।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন