হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী,,
মহানবী (সা.) এর সার্বজনীন আদর্শ ও চারিত্রিক গুণাবলি।ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতিধর্ম নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির জন্য প্রয়োগ যোগ্য সার্বজনীন উত্তম আদর্শ ও কল্যাণ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করেছেন রাহমাতুললিল আলামীন মহানবী (সা.)।
তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন- “নি:সন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ-তার জন্য যে আল্লাহ ও আখিরাতকে কামনা করে থাকে এবং আল্লাহকে অনেক স্মরণ করে।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং-২১)
ইসলামের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মহানবী পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তাঁর বাণীর সার্বজনীনতার আওতায় মুমিনগণ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্ব, জীব-জন্তু, কীট-প্রতঙ্গ, নিসর্গ জগত, সকল মাখলুকাত কল্যাণ ও শান্তির আশ্বাস পায়।
প্রিয়নবী (সা.) সারা সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণ ও শান্তির শ্রেষ্ঠ বার্তাবাহী, বিশ্বজগতের জন্য রহমত।
এব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য রহমত সরুপ।” (সূরাহ আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)
*রাসূলুল্লাহর (সা.)-এর চরিত্র-মাধুরী : মুহাম্মদ (সা.) হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শের জীবন্ত প্রতীক।
জন্মের পর হতেই তার মাঝে বিরাজ করেছিলো সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী, সর্বোত্তম আদর্শ, মহৎ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রতিবেশি ইত্যকার মহত্তম, গুণাবলী।
বাল্যকাল থেকেই তার স্বভাব ছিল কলুষতা, কাঠিন্য, কর্কশতা ও অহংকার থেকে মুক্ত। তিনি ছিলেন, দয়াশীল, শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল ও ঔদার্যশীল এবং নিষ্কুলুস ও নির্ভেজাল মহামানব। শৈশব থেকে মহানবী (সা.) সত্যবাদী ও ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন। তাই আরবের সকলে মিলে তাঁকে আখ্যা দিয়েছিল আল আমীন।
সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী (সা.)-এর উপর আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাযিল করেন। তাঁকে পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম উপহার দিয়ে বিশ্ববাসীকে ডেকে বলেছেন, তার চরিত্রের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।
তাই ইসলাম ধর্ম হল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সকল ধর্মের শেষ ধর্ম, বিশ্ব ধর্মের সর্বশেষ সংস্করণ, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন তেমনি সর্বশেষ ঐশী বানীবাহক।
তাই দেখা যায় ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে সকল ধর্মের সুন্দরতম গুণ গুলোর পূর্ণতম বিকাশ সম্ভবপর হয়েছে। আর মহানবী (সা.)-এর চরিত্র-বৈশিষ্ট ও সকল নবী রাসূলদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলীর অভূর্তপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে।
মহানবী (সা.) এর মধ্যে ছিল আদম (আ.) এর তত্তবা ও ক্রন্দন, নূহ (আ.) এর দাওয়াতী চরিত্র ও কষ্ট সহিষ্ণুতা, মুসা (আ.)-এর সংগ্রামী জীবন ও পৌরুষ, ইব্রাহীম (আ.)-এর একত্ববাদ, ত্যাগ ও কুরবানী, ইসমাঈলের ছবর, সত্যবাদীতা ও আত্মত্যাগ, হারুন (আ.) এর কোমলতা, দাউদ (আ.) এর যাদুময় সুমিষ্টকণ্ঠ, শুকর ও সাহসিকতা, সুলাইমানের রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার জ্ঞান ও ঐশ্বর্য, সালেহ (আ.) এর বিনীত প্রার্থনা, ইয়াকুব (আ.) এর ধৈর্য, ইউছুফ (আ.) এর দৈহিক সৌন্দর্য, চারিত্রিক মাধুর্য, শুকর, সবর ও সেনানায়কত্ব, ইউনুছ (আ.) এর অনুশোচনা ও আফসোস, যাকারিয়া (আ.)-এর কঠোরশ্রম, ইয়াহহিয়া,-এর সরলতা, আইউব (আ.)-এর কঠোর ধৈর্য, যাকারিয়া, ইলিয়াছ ও ঈসা (আ.)-এর যুহদ বা দুনিয়া ত্যাগ, ঈসা (আ.)-এর দারিদ্রতা ও অমায়িকতা ইত্যাদি লাখ পয়গাম্বরের লাখ বৈশিষ্ট্যকে আল্লাহতায়ালা আখেরী রাসূলের আখলাকে হাছানার মধ্যে এইভাবে জমা করে দিয়েছেন। যেমন সকল নবী রাসূলের তামাম মহীফা ও কিতাব সমূহকে আখেরী নবীর উপর নাযিলকৃত কুরআনে মজীদের মধ্যে সন্নিবেশিত করে দিয়েছেন।
এ কারণে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ঐ সকল নবী রাসূলদের কে আল্লাহ সঠিক পথ দেখিয়ে ছেন। আপনি তাদেরই পথ অনুসরণ করেন।”
হিম্মত, দৃঢ়তা, সাহস, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, নির্ভরতা, ভাগ্যের ওপর সন্তুষ্টি, বিপদ সহ্য করা, ত্যাগ, অল্পে তুষ্টি, স্বাবলম্বিতা, কুরবানী, দানশীলতা, নম্রতা, উন্নতি ও অনুন্নতি, এবং ছোট ও বড় সব রকমের নৈতিক বৃত্তি, সবগুলো একসাথে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট পাওয়া যেত।
সকল বিষয়ে সঠিক মনোভাব, ও পুর্ণাঙ্গ নৈতিকতার সমাবেশ দেখা যায় একমাত্র মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে।
সুতরাং যদি তুমি ধনী হয়ে থাক, তাহলে মক্কার ব্যবসায়ী ও বাহরাইনের অর্থশালী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুগামী হও। যদি তুমি গরিব হয়ে থাক, তাহলে আবু তালেব গিরি সঙ্কটের কয়েদী ও মদীনার প্রবাসীর অবস্থা শ্রবণ কর।
যদি তুমি বাদশাহ হয়ে থাক, তাহলে কুরাইশদের অধিপতি মুহাম্মাদ (সা.) কে এক নজর দেখ। যদি তুমি বিজয়ী হয়ে থাক, তাহলে বদর ও হুনাইনের সিপাহসালারের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ কর।
যদি তুমি পরাজিত হয়ে থাক, তাহলে উহুদ যুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। যদি তুমি শিক্ষক হয়ে থাক, তাহলে মদীনার “সুফফার” পরে শিক্ষালয়ের মহান শিক্ষকের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
যদি তুমি ছাত্র হয়ে থাক, তাহলে জিবরাঈলের সম্মুখে উপবেশনকারীর দিকে তাকাও। যদি বক্তৃতা ও উপদেশ দানকারী হয়ে থাক, তাহলে মদীনার মসজিদে মিম্বরের উপর দন্ডায়মান মহান ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুন।
যদি তুমি নি:সঙ্গ ও অসহায় অবস্থায় সত্যের প্রতি আহবানকারীর দায়িত্ব পালন করতে চাও, তাহলে মক্কার সহায়-সম্বলহীন নবীর আদর্শ তোমার জন্য আলোকবর্তিকার কাজ করবে।
যদি তুমি আল্লাহর অনুগ্রহে শত্রুদের পরাজিতও বিরোধীদের দূর্বল করতে সক্ষম হয়ে থাক, তাহলে মক্কা বিজয়ী মুহাম্মদ (সা.) এর ক্ষমার আদর্শ অনুসরণ কর।
যদি তুমি নিজের কারবার এবং পার্থিব বিষয়াবলীর ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে চাও, তাহলে বনী নাযীর খায়বার ও ফিদাকের ভু-সম্পত্তির মালিক মুহাম্মদ (সা.)-এর কাজ কারবার ও ব্যবস্থাপনা দেখ। যদি তুমি এতিম হয়ে থাক, তাহলে মক্কার আবদুল্লাহ ও আমিনার কলিজার টুকরাকে ভুল না।
যদি শিশু হয়ে থাক, তাহলে হালিমা সাঈদার আদরের দুলালকে দেখ। যদি যুবক হয়ে থাক, তাহলে মক্কার মেষ পালকের জীবনী পাঠ কর।
যদি ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী হয়ে থাক, তাহলে বসরা সফরকারী দলের অধিনায়কের দৃষ্টান্ত অনুসরণ কর। যদি আদালতের বিচারক ও পঞ্চায়েতের বিবাদ মীমাংসাকারী হয়ে থাক, তাহলে কাবা গৃহে সূর্যকিরণ প্রবেশের পূর্বে প্রবেশকারী এবং ‘হাজরে আসওয়াদকে’ পূন: স্থাপনজনিত বিবাদ মীমাংসাকারীকে ] দেখ।
মদীনার কাঁচা মসজিদের বারান্দায় উপবেশনকারী বিচারকের দিকে নজর কর, যাঁর দৃষ্টিতে বাদশাহ্ ফকীর, আমীর-গরীব সব সমান ছিল।
যদি তুমি স্বামী হয়ে থাক তাহলে খাদিজা (রা:) ও আয়শার (রা:) মহান স্বামীর পবিত্র জীবন অধ্যায়ন কর। যদি তুমি সন্তানের পিতা হয়ে থাক, তাহলে ফাতেমার পিতা এবং হাসান হুসাইনের নানার অবস্থা জিজ্ঞেস কর।
বস্তুত তুমি যাই হও না কেন এবং যে অবস্থায় থাক না কেন, তোমার জীবনের জন্য আদর্শ, তোমার চরিত্র সংশোধনের উপকরণ, তোমার অন্ধকার গৃহের জন্য আলোক বর্তিকা ও পথ নির্দেশক মুহাম্মাদ (সা.)।
তাই ঈমানী আলোক বর্তিকার অনুসন্ধানরত প্রতিটি মানুষের জন্য একমাত্র মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনই হিদায়াতের উৎস ও নাজাতের মাধ্যম।
রাসূলের চারিত্রিক গুণাবলী : মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে মাজীদে বলেন, হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়ক রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং-৪৫-৪৬)
উপরোল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে মহান আল্লাহ রাসূল (সা.) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি রাসূলুল্লাহর বিশেষ গুণাবলী, উল্লেখ করেছেন।
এখানে রাসূলের পাঁচটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম গুণটি হল স্বাক্ষীদাতা। তিনি কিয়ামতের দিন উম্মতের জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবেন।
আয়াতে বর্ণিত দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে, তিনি সুসংবাদ প্রদানকারী। তিনি দ্বীয় উম্মতের মধ্য থেকে সৎ ও শরীয়ত অনুসারী ব্যক্তি বর্গকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন।
আয়াতে বর্ণিত তৃতীয় গুণটি হচ্ছে, সর্তককারী বা ভীতিপ্রদর্শনকারী। তিনি অবাধ্য ও নাফরমান ব্যক্তিবর্গকে পরকালের আযাব ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করেন।
আয়াতে বর্ণিত চতুর্থ গুণ হচ্ছে, আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী স্বীয় উম্মতকে আল্লাহ পাকের সত্তা ও অস্তিত্ব এবং তাঁর আনুগত্যের প্রতি আহবান করবেন।
তিনি মানব মন্ডলীকে আল্লাহপাকের দিকে তাঁর অনুমতি সাপেক্ষেই আহবান করেন। এ শর্তের সংযোজন ইঙ্গিত করে যে, তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজ অত্যন্ত কঠিন, যা আল্লাহর অনুমতি ও সাহায্য ব্যতীত মানুষের সাধ্যের বাইরে। উক্ত আয়াতে পঞ্চম গুণ হচ্ছে, তিনি ছিলেন জ্যোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ।
* জাবির ইবনে সামুরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে নামায আদায় করতাম। তাঁর নামায ছিল মধ্যম এবং খুতবা ও ছিল মধ্যম। (মুসলিম)
* আবু কাতাদাহ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি নামায পড়তে আসি এবং ইচ্ছা করি দীর্ঘ নামায পড়বো। কিন্তু যখন কোন শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি, তখন নামায সংক্ষিপ্ত করে ফেলি।
কেননা এটা আমি পছন্দ করিনা যে, কোন শিশুর মা কষ্ট পাক। (সহীহ বুখারী) হযরত যিয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুগিরা (রা.) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাযে এত অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর উভয় পা অথবা গোড়ালী ফুলে যেত। এজন্য লোকেরা যখন বলাবলি করতো, আল্লাহর নবীর এতো কষ্ট করার প্রয়োজন কী? তখন নবী তাদেরকে বলতেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? (সহীহ বুখারী)
* হযরত আয়শা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ যখন জনগণকে কোন কাজের নির্দেশ দিতেন, তখন এমন কাজের নির্দ্দেশই দিতেন, যা তারা করতে পারতো। (সহীহ বুখারী)
জনৈক সাহাবী আম্মাজান আয়শা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, রাসূলুল্লাহর চরিত্র কেমন? আয়শা (রা.) বলেন, পবিত্র কুরআনই মহানবী (সা.)-এর চরিত্র।
অর্থাৎ কালজয়ী আল কুরআনের অসাধারণ নৈপুন্য ও আদর্শ সম্বলিত দৃষ্টি ভঙ্গিই সৃষ্টির সেরা মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালতকে বিশ্বাস করা ফরয, তাঁকে মহব্বত করা ফরয, তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা ফরয।
মহানবী (সা.) কুরআন ও সুন্নাত ইসলামের দুটি বস্তু আমাদের নিকট আমানত রেখে গেছেন। এদুটি আকড়িয়ে ধরলে আমরা কখন ও পথ ভ্রষ্ট হবো না।
কুরআন হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কালজয়ী বিধানাবলী ও নির্দেশাবলী। আর সুন্নাতের পারিভার্ষিক অর্থ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশাবলীকে কার্যকরী করতে গিয়ে যে পথের উপর দিয়ে অগ্রসর হয়েছেন সে পথ। মোট কথা একজন মুসলমানের সাফল্য ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার জন্য যে দুটি বস্তুু প্রয়োজন তাহল কুরআন ও সুন্নাত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কতিপয় চরিত্রের বর্ণনা নিম্নে প্রদান করা হলো :
(১) তাকওয়া ও আল্লাহভীতি : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার চেয়ে বেশী তাকওয়া অবলম্বনকারী ছিলেন। তিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করতেন।
হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিশেষ লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে) বলেন : “আল্লাহ সম্পর্কে আমি তাদের চেয়ে বেশী অবগত এবং আল্লাহকে আমি তাদের চেয়ে বেশী ভয় করি।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৭৫০)
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় রবের পূর্ণ অনুগত ছিলেন। তিনি পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলতেন। তিনি আমলে সালেহ বেশী আদায় করতেন।
হযরত আশিয়া (রা.) নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন : “নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল ছিল ধারাবাহিক।
তিনি যা পারতেন, তোমাদের কেউ কি তা পারবে? তিনি সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম তিনি-এর ধারাবাহিকতা আর পরিত্যাগ করবেন না।
আবার তিনি সিয়াম পালন বাদ দিতেন এমন যে, আমরা বলতাম, তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। তুমি তাঁকে রাত্রে নামাযরত অবস্থায় দেখতে না চাইলেও নামাযরত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পাবে। তুমি তাঁকে রাত্রে ঘুমন্তাবস্থায় দেখতে না চাইলেও ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পাবে।” (জামি তিরমিযী, হাদীস নং-৭০০)
হযরত আউফ বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একরাতে রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম।
তিনি মিসওয়াক করলেন। অত:পর উজু করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে নামায আরম্ভ করলেন। আমিও তার সাথে নামাযে দাঁড়ালাম। তিনি সূরাহ বাকারা পড়া শুরু করলেন।
তিনি রহমত সংক্রান্ত আয়াত এলেই থামলেন আর তা আল্লাহর নিকট চাইলেন এবং আজাব সম্পর্কিত আয়াত এলেই থামলেন আর তা থেকে পানাহ চাইলেন। অত:পর দাঁড়ানোর পরিমাণ রুকুতে অবস্থান করলেন এবং দু’আ পড়লেন।
অত:পর সিজদা করলেন এবং অনুরূপ দু‘আ পড়লেন। এরপর (পরবর্তী রাক’আতে) সূরাহ আলে ইমরান পড়লেন। অত:পর একেকটি সূরাহ পড়লেন থেমে থেমে।” (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১১২০)
হযরত আশিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন, দাঁড়িয়ে আদায় করতেন, এমনকি তাঁর উভয় পা ফুলে যেত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
কেন আপনি এমন করছেন, অথচ আপনার পূর্বের ও পশ্চাতের সমপ্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে?
জওয়াবে তিনি বললেন, “হে আয়েশা! আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?” (মুসনাদে আহমাদ, হা. : ২৩৭০০)
(২) দানশীলতা ও বদান্যতা : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দানশীলতা, উদারতা ও বদান্যতায় ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ।
হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি ‘না বলতেন না।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৩১১)
হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি দিয়ে দিতেন।
আজকে এই পর্যন্ত আলোচনা করলাম, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যেন উপরোক্ত সংকিপ্ত আলোচনার প্রতি আমল করার তাওফিক দান করেন আমীন।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন